ঈদে ঘরে ফেরা : যাত্রীসেবার পরিকল্পনা অনেক : বাস্তবায়ন নেই

দে যাত্রীদের বাড়ি ফেরা নির্বিঘ্ন করতে সরকার অনেক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এনিয়ে কয়েক দফায় মিটিং ও প্রচারণা করেছে। কিন্তু এসব সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন খুবই কম। গতকালও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট ছিল। অন্যান্য পথগুলোও নির্বিঘ্ন ছিল না। মাওয়া-কাওড়াকান্দি ও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাটেও দীর্ঘ যানজট। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। যাত্রীরা খাবার ও পানির সমস্যায় পড়ছেন। বিশেষ করে নারী ও শিশুরা যানজটে আটকা পড়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে।


ঈদে নৌপথে যাত্রী পরিবহনে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় পৃথক দুটি প্রস্তুতিমূলক বৈঠক করে। একইভাবে বাংলাদেশ রেলওয়ে ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) কর্তৃপক্ষ আলাদা বৈঠক করেন। প্রত্যেক বৈঠকে ঈদ যাত্রীরা যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে গন্তব্যে যেতে পারেন, সে বিষয়ে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেয়। দ্রুত নদী পারাপারে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া, মাওয়া-চরজানাযাত, কাঁঠালবাড়ী-মাওয়া, চাঁদপুর-শরীয়তপুর, ভোলা-লক্ষ্মীপুর ও লাহারহাট-ভেদুরিয়া রুটে পর্যাপ্ত ফেরি সার্ভিস রাখার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু পর্যাপ্ত ফেরি যোগ না হওয়ায় কাওড়াকান্দি ও দৌলতদিয়ায় গাড়ির লম্বা লাইন পড়েছে। চাঁদপুর-শরীয়তপুর রুটে গতকাল ফেরি চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। এছাড়া নৌবন্দরগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও চাঁদাবাজি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হলে বাস্তবে তার মিল পাওয়া যাচ্ছে না। গরুবোঝাই ট্রাক থেকে স্থানীয় প্রভাবশালী সংঘবদ্ধ দালাল চক্র অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ট্রাকচালকরা জানান, গোয়ালন্দ বাজারের কাছে এক দালালকে ৪০০ টাকা চাঁদা দিয়ে ফেরির ৯৬০ টাকার টিকিট ১৩৬০ টাকা কাটতে হয়েছে। একই অভিযোগ সব ট্রাকচালক ও ট্রলার চালকদের।
মহাসড়কে যানজট এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ও দুর্ঘটনাকবলিত বাস-ট্রাক উদ্ধারে রেকার রাখার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। কিন্তু মহাসড়কগুলোতে যানজট লেগেই আছে। তীব্র যানজটে গতকাল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক স্থবির হয়ে পড়েছে। গত বুধবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়ে গতকাল বিকাল পর্যন্ত যানজটে আটকা পড়েন যাত্রীরা। এদিকে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় গতকালও অব্যাহত ছিল। গতকাল কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, সকাল ১১টা পর্যন্ত কোনো ট্রেনই সময় মতো আসেনি। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা মহানগর প্রভাতী ৭টা ৪০ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছার কথা থাকলেও সোয়া ১১টা পর্যন্ত তা আসেনি। একইভাবে রংপুর এক্সপ্রেস, ঢাকা-সিলেট রুটের উপবন, ময়মনসিংহ-জামালপুর রুটের যমুনা, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের সুবর্ণ এক্সপ্রেস নির্ধারিত সময়ে আসেনি। এদিকে গতকাল কমলাপুর রেলস্টেশনে পরিদর্শনে যান যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন। তিনি সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ে পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে যাত্রীদের যাতায়াতের জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। আন্তঃনগরসহ সব ট্রেনে অতিরিক্ত কোচ সংযোজনের পাশাপাশি বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করা হচ্ছে। যোগাযোগমন্ত্রী বলেন, আসন্ন ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে বিভিন্ন ট্রেনে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আমদানি করা নয়টি নতুন ইঞ্জিন সংযোজন করা হবে। এছাড়া রেলওয়ের পাহাড়তলী কারখানায় ৮০টি মিটারগেজ এবং সৈয়দপুর কারখানায় ৩৬টি ব্রডগেজ ও ২০টি মিটারগেজ কোচ মেরামত করা হয়েছে। তিনি চট্টলা এক্সপ্রেস ও বলাকা এক্সপ্রেস ট্রেন দুটি পরিদর্শন করেন। এবং প্রথম শ্রেণীর বিশ্রামাগার পরিদর্শনকালে যাত্রীদের খোঁজখবর নেন। এরপর তিনি কমলাপুর স্টেশনে সুপেয় পানি সরবরাহ ব্যবস্থাও পরিদর্শন করেন। এ সময় যোগাযোগমন্ত্রীর সঙ্গে রেলওয়ে বিভাগের সচিব ফজলে কবির, রেলওয়ের মহাপরিচালক আবু তাহের, অতিরিক্ত মহাপরিচালক, বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজারসহ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.