পিকেএসএফের সেমিনারে নুরুল ইসলাম-দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্রঋণের ভূমিকা প্রমাণ করা যায়নি

ক্ষুদ্রঋণ সত্যিকারেই দারিদ্র্য বিমোচন করে, তা এখনো কোনো গবেষণায় প্রমাণ করা যায়নি। ক্ষুদ্রঋণ ইতিবাচক কি-না, তাও সন্দেহের মধ্যে রয়ে গেছে। এটা ইতিবাচকও হতে পারে আবার না-ও হতে পারে বলে জানান অর্থনীতিবিদ ও প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নুরুল ইসলাম।গতকাল বৃহস্পতিবার 'বাংলাদেশের ক্ষুদ্রঋণ : চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা' শীর্ষক সেমিনারের সমাপনী অনুষ্ঠানে অর্থনীতিবিদ নুরুল ইসলাম এসব কথা বলেন। পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) ২১ বছরপূর্তি উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী এই সেমিনারের আয়োজন করে। গতকাল ছিল সেমিনারের শেষ দিন।


অধ্যাপক নুরুল ইসলাম বলেন, 'বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে নানা ধরনের গবেষণা হয়েছে। তবে কোনো গবেষণায়ই প্রমাণ করা যায়নি ক্ষুদ্রঋণ দিয়ে দারিদ্র্য বিমোচন হয়েছে। গবেষণায় আমরা প্রমাণ করতে পারছি না সত্যিকারের দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্রঋণের প্রয়োজন আছে কি নেই। ক্ষুদ্রঋণ বিষয়ে আরো গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। ক্ষুদ্রঋণ বিষয়ে সব সমস্যা সমাধানের জন্য নতুন করে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে হবে। কারণ আমরা এখনো সন্দেহের মধ্যে রয়ে গেছি_ক্ষুদ্রঋণ আসলেই ইতিবাচক কি-না। থাকলেও তার কী কী দিক আছে, তা আমাদেও জানা নেই।' তবে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, ক্ষুদ্রঋণ দিয়ে দারিদ্র্য বিমোচন হোক বা না হোক, এর ফলে গ্রামাঞ্চলে কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। কাজ-কর্মের সুযোগ বেড়েছে। তিনি আরো বলেন, যখন আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়, তখন এটা কাজ করে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, কেউ হয়তো তাৎক্ষণিক প্রয়োজনে গরু বিক্রি করত বা অন্য কোনো কিছু করত, ক্ষুদ্র ঋণের ফলে তা করতে হচ্ছে না। আপদকালে সে টাকা পাচ্ছে। পরের বছর হয়তো তাকে নতুন করে চিন্তা করতে হচ্ছে। বৈষম্যের ফলে দারিদ্র্য কমে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোনো দেশে প্রবৃদ্ধি থাকলেও যদি সেখানে আর্থিক বৈষম্য থাকে, তাহলে সেখানে দারিদ্র্যের হার কমে না।
সেমিনারে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, দারিদ্র্য একটি বহুমাত্রিক বিষয়। শুধু অর্থ দিয়ে দারিদ্র্য বিমোচন করা যায় না। ক্ষুদ্রঋণ দাতাপ্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, তবে সঙ্গে এটাও দেখতে হবে প্রতিষ্ঠানগুলোর যে সৃজনশীল কর্মকাণ্ড রয়েছে, তা যেন ব্যাহত না হয়। নিয়ন্ত্রণ সংস্থা যেন গরিবদের স্বার্থ দেখে। ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে বর্তমানে যে বিতর্ক হচ্ছে, তা চলা উচিত মন্তব্য করে গভর্নর বলেন, যাদের জন্য এই ঋণ, তারা যদি ভালো থাকে তখন সমাজ ক্ষুদ্রঋণের পক্ষে থাকবে। আর তা না হলে কেউ তাদের কথা বলবে না।
সেমিনারে আরো বক্তব্য দেন পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল কাদের ও ড. জসীম উদ্দিন।
সভাপতির বক্তব্যে পিকেএসএফের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য প্রয়োজন টেকসই কর্মসংস্থান এবং মানব উন্নয়ন। আর এসবের মধ্যে ক্ষুদ ঋণ যেমন থাকবে, স্বাস্থ্য, শিক্ষাও থাকবে। শুধু ঋণ দিয়ে দারিদ্র্য বিমোচন হয়নি। কিছুটা হয়তো হয়েছে, তবে তা টিকসই হচ্ছে না। ক্ষুদ্রঋণের প্রথমপর্যায় শেষে এখন দ্বিতীয় পর্যায় চলছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এই পর্যায়ে সমন্বিত উন্নয়ন করতে হবে। অর্থপ্রবাহ বাড়াতে হবে। নতুন প্রযুক্তি আনতে হবে। সবাই মিলে একে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। পিকেএসএফের ২১ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত দুই দিনের সেমিনারের শেষ দিনে গতকাল সমাপনী অনুষ্ঠান ছাড়াও দুটি সেশন অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম সেশনে সভাপতি্ব করেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. এম এ সাত্তার মণ্ডল। আলোচক ছিলেন পিকেএসএফের ক্ষুদ্র সংস্থাবিষয়ক গবেষক নুসরাত শারমিন হক। দ্বিতীয় পর্বে পিকেএসএফের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ড. প্রতিমা পাল মজুমদারের সভাপতিত্বে আলোচক ছিলেন সংস্থাটির উপমহাব্যবস্থাপক মাশিয়ার রহমান।

No comments

Powered by Blogger.