মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্মে পণ্যের দাম বাড়ছে-ঢাকায় সরাসরি পণ্য বিক্রি করবেন কৃষক

কৃষক তাঁর উৎপাদিত পণ্যের মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে ভোক্তাদের উচ্চমূল্যে পণ্য কিনতে হচ্ছে। এ অবস্থায় কৃষক ও ভোক্তা স্বার্থ রক্ষায় পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর কৃষকরা যাতে ঢাকায় সরাসরি এসে ভোক্তাপর্যায়ে পণ্য বিক্রি করে আবার ফিরতে পারেন_সে ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার। সে জন্য প্রতিটি ট্রেনে একটি করে বগি নির্দিষ্ট করে দেওয়ার চিন্তাও চলছে। কমলাপুর, গাবতলীসহ ঢাকায় তিনটি হাট বসানোর পরিকল্পনা করছে সরকারের উচ্চপর্যায়।


গত বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকে এসব পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বাণিজ্যসচিব মো. গোলাম হোসেন ওই বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
বাজার দরের সাম্প্রতিক তথ্যের তুলনামূলক বিশ্লেষণ তুলে ধরে বাণিজ্যসচিব মো. গোলাম হোসেন বলেন, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমানো, নিয়মিত বাজার পর্যবেক্ষণসহ সরকারের নানামুখী তৎপরতার কারণে ঈদের আগে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল ও সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। এমনকি বেশির ভাগ পণ্যের দামই কমতির দিকে। তবে খোলা মসলার তুলনায় প্যাকেটজাত মসলার উচ্চমূল্য ভোক্তাদের ভোগান্তির কারণ হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, শিগগিরই বিষয়টির সুরাহা করবে। এ জন্য প্রয়োজন হলে ভিন্ন কৌশল নেওয়া হবে।
সচিব জানান, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে উচ্চপর্যায়ের ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত হলো_ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য খোলা অবস্থায় বিক্রি করলেই ওই পণ্যের মূল্য দোকানের সামনে দৃশ্যমান জায়গায় প্রতিদিন টানিয়ে রাখতে হবে। আর প্যাকেটজাত পণ্য হলেও তার গায়ে যদি দাম লেখা না থাকে, তাহলে তার মূল্যও টাঙাতে হবে। কোনো অবস্থায়ই এ নির্দেশনা অমান্য করা যাবে না। খুচরা ব্যবসায়ীরা এ নির্দেশ না মানলে তাঁদের বিরুদ্ধে মনিটরিং টিমগুলো ব্যবস্থা নেবে।
বাণিজ্যসচিব বলেন, পুরনো একটা বদনাম ছিল আমাদের। বিদেশে কোনো পণ্যের দাম বাড়ার আগেই দেশের বাজারে দাম বেড়ে যেত। আর বিদেশে দাম কমলেও দেশে কমত না। এখন সে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। সম্প্রতি বিদেশে চিনির দাম কমার সঙ্গে সঙ্গে দেশের বাজারেও চিনির দাম কমেছে। পরিবেশক প্রথা চালুর মধ্য দিয়ে ভোজ্য তেল ও চিনির কথিত সিন্ডিকেট অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে।
বাজারদর পরিস্থিতি তুলে ধরতে গিয়ে সচিব জানান, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব উদ্যোগে সংগৃহীত তথ্যে দেখা গেছে, আগের মাসের তুলনায় সয়াবিন তেলের দাম ৫ শতাংশ, পাম অয়েলের দাম ৭ শতাংশ, চিনির মূল্য ১১ শতাংশ, পেঁয়াজ ১১ শতাংশ, রসুন ৫ শতাংশ, মসুর ডাল ৫ শতাংশ ও হলুদের দাম ৫ শতাংশ কমেছে। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাসহ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে এসব পণ্যের দাম অনেকটাই কম।
এর আগে ঢাকার খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে সচিব বলেন, নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের জন্য পণ্যের দাম স্থিতিশীল থাকা জরুরি; কিন্তু পাইকারি ও মিলপর্যায়ে পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হলেও খুচরাপর্যায়ে প্রায়ই দাম বেড়ে যায়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পর্যালোচনায়ও এর সত্যতা উঠে এসেছে। দ্রব্যমূল্যে মানুষের যাতে নাভিশ্বাস সৃষ্টি না হয়, সে জন্য ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা চান তিনি। অনৈতিক মুনাফা করা থেকে বিরত থাকতে ব্যবসায়ীদের প্রতি অনুরোধ করেন সচিব।
ঢাকা মহানগর দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, অন্য দেশের তুলনায় দাম কম হলেও মানুষের আয়ের বিবেচনায় এখনো দেশের বাজারে দাম বেশি। মানুষের আয় না বাড়ায়, দ্রব্যমূল্য এখনো মানুষকে কষ্ট দিচ্ছে। বাজারে গেলে ২৫০-৩০০ টাকার নিচে সবজি কেনা যায় না। অথচ কৃষকরা সবজির দাম পান না। কৃষক যেটা ১০ টাকায় বিক্রি করেন, ঢাকায় এসে তা বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়! বাজারে প্রচুর শীতের সবজি আছে; কিন্তু দাম কমছে না!
বাণিজ্যসচিব বলেন, মসলার কম্পানিদের অযৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁদের বলা হয়েছে, এভাবে মূল্য নির্ধারণ বন্ধ করুন। ক্রেতাদের ঠকাবেন না। আর তথাকথিত বিজ্ঞাপনও বন্ধ করুন। তবে মনে হচ্ছে, এটাকে বন্ধ করা সহজ হবে না। তবে অযৌক্তিক মুনাফা কোনোমতেই সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে মেনে নেওয়া হবে না।
বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এম মর্তুজা রেজা, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবুল হোসেন, মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. শওকত আলী ওয়ারেছি ও অমিতাভ চক্রবর্তী, টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সারোয়ার জাহান তালুকদার, মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সদর আলী বিশ্বাস এবং সিনিয়র সহকারী সচিব মো. মনির হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.