পুলিশের বর্বরতার শিকার মানবজমিন সাংবাদিক

রাজধানীর আদাবরে পুলিশের বর্বর আচরণের শিকার হয়েছেন দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার সাংবাদিক এস এম নূরুজ্জামান। গত বুধবার রাত ১টায় শেখেরটেকে নিজ বাসার সামনে থেকে পুলিশের টহল টিম তাঁকে ধরে নিয়ে নির্যাতন চালায়। পুলিশ তাঁকে ছিনতাইকারী হিসেবে গণপিটুনিতে হত্যার হুমকিও দেয়। এ ঘটনায় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন নূরুজ্জামান। কমিশনার বেনজীর আহমেদ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।


আদাবর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শামীমুর রশিদ তালুকদার জানান, অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যকে (কনস্টেবল) প্রত্যাহার করে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তদন্ত তদারকি করছেন।
ঘটনা সম্পর্কে সাংবাদিক নূরুজ্জামান গতকাল বৃহস্পতিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, "পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে রাত ১টার দিকে আদাবর থানার শেখেরটেকের বাসায় ফিরছিলাম। বাসার সামনে দাঁড়িয়ে দারোয়ানকে ডাকার সময় পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যান এসে থামে। এক পুলিশ জিজ্ঞেস করে, 'আপনি কি এ বাসায় থাকেন?' মাথা নেড়ে 'হ্যাঁ' সূচক জবাব দিলে তিনি আমাকে গাড়ির সামনে যাওয়ার নির্দেশ দেন। আমি গাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়ালে ওই পুলিশ সদস্য আমাকে ধমক দিয়ে বলে ওঠেন, 'মাথা ঝাঁকালি কেন? কথা বলতে পারিস না?' ওই পুলিশ সদস্য আমাকে আবার জিজ্ঞেস করেন, 'এত রাতে এখানে কী করিস, কোথা থেকে এলি?' উত্তরে বলি, 'আমি মানবজমিন পত্রিকার সাংবাদিক। কাজ শেষে আমাকে রাতেই বাসায় ফিরতে হয়। আমি জিজ্ঞেস করি, 'রাতে চলাফেরা করা অপরাধ নাকি?' এ প্রশ্ন শুনে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। সে সময় পিকআপে বসে থাকা অন্য পুলিশ সদস্যরাও আমাকে গালিগালাজ করেন। একপর্যায়ে শাহ আলম নামের এক কনস্টেবল আমার শার্টের কলার চেপে ধরে গালি দিয়ে বলেন, 'শালা, তোর কাছে আইন শিখতে হবে!' আমি তাদের গালিগালাজ করতে নিষেধ করলে শাহ আলম আমার মুখে ঘুষি মারেন। তখন সামনের বাম পাশের সিটে বসা এসআই আনোয়ার আমাকে গাড়িতে তোলার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে তিনি অন্যান্য পুলিশ সদস্যকে আমার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিতে বলেন এবং আমি যাতে কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারি সে বিষয়ে ওই পুলিশ সদস্যকে সতর্ক করে দেন।"
সাংবাদিক নূরুজ্জামান অভিযোগ করেন, পুলিশ তাঁকে পিকআপে তুলে কিল-ঘুষি মারতে থাকে এবং হুমকি দিয়ে বলে, কিছুক্ষণ আগে এ গলিতে দুই লাখ টাকা ছিনতাই হয়েছে। ওই মামলার আসামি বানিয়ে তাঁকে আইন শেখাবে। আরো বলেন, 'পায়ে গুলি করে তোকে ছিনতাইকারী বানাব। দেখি তোর কোন বাপ তোকে বাঁচায়।' এভাবে নির্যাতন করতে করতে পুলিশ তাঁকে ২ নম্বর গলির শেষ মাথায় নিয়ে যায়। সেখানে ২০-২৫ জন শ্রমিক রাস্তার পাশে কাজ করছিল। পিকআপ থামিয়ে এসআই আনোয়ার হোসেন নেমে ওই শ্রমিকদের ফিসফিসিয়ে কী যেন বলেন। সে সময় কয়েকজন অপরিচিত যুবক শাবল ও রড নিয়ে পুলিশ পিকআপের চারদিকে ঘুরতে থাকে। সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন দৈনিক কালের কণ্ঠের সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদুল আলম তুষার ও সকালের খবরের নুরুজ্জামান লাবু। তাঁরা পুলিশের রোষানল থেকে তাঁকে উদ্ধার করে বাসায় পেঁৗছে দেন।
এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছেন ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্র্যাব) সভাপতি পারভেজ খান ও সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন নাননু। তাঁরা দায়ী পুলিশ সদস্যদের শাস্তি দাবি করেছেন।

No comments

Powered by Blogger.