জেলহত্যা দিবসে আলোচনা সভা-সেনা মোতায়েনের পরিস্থিতি না.গঞ্জে ছিল না : প্রধানমন্ত্রী

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সরকার সব রকমের সহযোগিতা দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সেনা মোতায়েন না করায় সংবিধানের ব্যত্যয় ঘটেনি। বরং নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচন পরিচালনায় সব ধরনের নির্বাহী সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য দেওয়া হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, বিরোধীদলীয় নেতা হয়তো আশা করেছিলেন তাঁদের সমর্থিত প্রার্থীকে সেনাবাহিনী জিতিয়ে দেবে।


গতকাল বৃহস্পতিবার জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, 'নারায়ণগঞ্জে এমন কী ঘটনা ঘটেছে যে সেনা মোতায়েন করতে হবে? সেনা মোতায়েন করার মতো এমন কোনো পরিস্থিতি সেখানে সৃষ্টি হয়নি।' গতকাল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
শেখ হাসিনা প্রধান অতিথির ভাষণে বলেন, নির্বাচন কমিশন ওই নির্বাচন নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছিল। বৈঠকে সেনাবাহিনীর কোনো প্রতিনিধিকে ডাকা হয়নি। পরে হঠাৎ করে সেনা মোতায়েনের জন্য চিঠি দেওয়া হলো। সেনাবাহিনী প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন_মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও সরকারপ্রধানের নির্দেশ ছাড়া সেনাবাহিনীর ব্যারাকের বাইরে যাওয়ার অনুমতি নেই।
নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনে সেনা মোতায়েন না করা নিয়ে টিভি টক শোগুলোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'অনেক টক শোতে দেখি বক্তারা টিভি ভেঙে ফেলেছেন কেন সেনা মোতায়েন হলো না তা নিয়ে।' শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ সালের পর এম এ সাঈদ প্রধান নির্বাচন কমিশনার থাকাকালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে (বেগম জিয়া) দুই-তিনবার সেনা চেয়ে চিঠি দিয়েছিলেন। কিন্তু তখন সেনা মোতায়েন করা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'সেনা কী তিনি (বেগম জিয়া) ভুলে গেছেন? আজ যারা সংবিধান লঙ্ঘনের কথা বলে এত চেঁচাচ্ছেন, তখন তো কেউ সংবিধান লঙ্ঘনের কথা বলে চিৎকার করেননি।'
শেখ হাসিনা অভিযোগ করে বলেন, 'বিরোধীদলীয় নেতা চেয়েছিলেন সেনাবাহিনী যেন ভোট 'চুরি' করে তাঁদের জিতিয়ে দেয়। উঁনি কি সেনাবাহিনীকে ভোট চুরির জন্য ব্যবহার করতে চান? আর এ জন্যই উঁনি রাত ১টায় প্রত্যাহার করে নিয়েছেন?' প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের এবং একুশে আগস্ট হামলাকারীদের রক্ষায় মাঠে নেমেছেন খালেদা জিয়া। কিন্তু নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনে মানুষ বুঝিয়ে দিয়েছে তারা বিরোধীদলীয় নেতার এ অবস্থানকে গ্রহণ করেনি।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমু, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, এম এ আজিজ, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, অভিনেতা রামেন্দু মজুমদার প্রমুখ।
এর আগে সকালে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুসারে বহুল প্রতীক্ষিত চার নেতা হত্যাকারীদের বিচার এ বছরই শুরু হবে। গতকাল বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহীদ ও জাতীয় নেতাদের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। ইতিমধ্যে বিচারের জন্য উচ্চ আদালতে আপিল করা হয়েছে_মন্তব্য করে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের মেয়াদেই এ বিচার শেষ হবে। জেলহত্যার বিচার ও তদন্ত করার জন্য আলাদা কোনো কমিশনের প্রয়োজন নেই মন্তব্য করে সৈয়দ আশরাফ বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হয়েছে। একই প্রক্রিয়ায় চার নেতা হত্যার বিচারও হবে।
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী এর আগে সকালে বনানী গোরস্তানে জাতীয় তিন নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ ও ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর কবরস্থানে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এর আগে তিনি বঙ্গবন্ধু ভবনে স্থাপিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। প্রধানমন্ত্রীর পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য এবং বিভিন্ন রাজনৈতকি, সামাজিক সংগঠনের নেতারা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ও তিন নেতার কবরস্থানে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরে যথাযথ মর্যাদায় জেলহত্যা দিবস পালন করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.