বেহাল মহাসড়কে নাকাল মানুষ-দুই দিন ধরে কুমিল্লায় ৬০ কি.মি. যানজট

শিকড়ের টানে ছুটছে মানুষ। পবিত্র ঈদুল আজহার বাকি আর মাত্র দুই দিন। সর্বশেষ কর্মদিবস গতকাল বৃহস্পতিবার থেকেই মানুষ বাড়ি ফিরতে শুরু করলেও মূল স্রোত শুরু হচ্ছে আজ। অথচ এই বিশাল জনস্রোতের ভার বহনের সক্ষমতা নেই সড়ক-মহাসড়কগুলোর। কেননা দীর্ঘদিন ধরেই খানাখন্দে পূর্ণ হয়ে আছে রাস্তা। মেরামতের নামে কিছুটা কাজ হলেও তাতে অবস্থার খুব একটা উন্নতি হয়নি। প্রশ্ন উঠেছে কাজের মান নিয়েও। এ অবস্থায় নারী, শিশু, বৃদ্ধ-বৃদ্ধাসহ ঘরমুখো মানুষকে চরম ভোগান্তি সঙ্গী করেই ছাড়তে হচ্ছে রাজধানী ঢাকা।


ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লায় দুই দিন ধরে প্রায় টানা লেগে আছে ৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট। সংস্কার কাজ আর অতিরিক্ত গাড়ির চাপে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। আটকা পড়েছে শত শত যানবাহন। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মহাসড়কে যানজট অব্যাহত ছিল। তীব্র যানজটে চরম দুর্ভোগে পড়ে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীরা। আটকা পড়ে পূর্বাঞ্চলগামী গরুবোঝাই ট্রাক। যানজট নিরসনে দাউদকান্দি থেকে চৌদ্দগ্রাম পর্যন্ত মহাসড়কে ঈদের দিন পর্যন্ত অতিরিক্ত ৪০০ পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। তারপরও ঈদের আগে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে_এমনটা আশা করা যাচ্ছে না। কেননা এ মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে রয়েছে খানাখন্দ। বিশেষ করে চট্টগ্রাম থেকে বারাইয়ারহাট পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার রাস্তার অবস্থা আঁতকে ওঠার মতো। অন্যান্য অংশের অবস্থাও সন্তোষজনক নয়।
ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কেও তীব্র যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। সোচ্চার দাবির মুখে রমজানের ঈদের আগে কিছুটা সংস্কার হলেও পরে তা আর এগোয়নি। গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে বিসিক শিল্প এলাকার সামনে সড়কের এক কিলোমিটার অংশ অত্যন্ত নাজুক। রাবনা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত আট কিলোমিটার অংশে কোনো কাজই হয়নি।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে সংস্কারকাজ হলেও সামান্য সময়ের ব্যবধানেই তা ভেঙে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও সড়কের মাঝখানে টিলার মতো উঁচু হয়ে আছে ইটের খোয়া। কোথাও বা সৃষ্টি হয়েছে গভীর গর্ত। যেনতেনভাবে সংস্কারকাজ করায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক : ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দুর্ভোগ আর যন্ত্রণার রুট হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত তিনটি বছরেই এ অবস্থা চলছে। এবারও পরিস্থিতির হেরফের নেই। চট্টগ্রাম থেকে মিরসরাইয়ের বারইয়ারহাট পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার দূরত্ব পুরো মহাসড়কের জন্য আতঙ্কের এলাকা। রাজধানীর সায়েদাবাদ থেকে যাত্রা শুরু করে যাত্রীবাহী বাসগুলো অনায়াসেই পাড়ি দেয় ১৭৫ কিলোমিটার। বিপদ পরের ৭০ কিলোমিটারে। এর শুরু বারইয়ারহাটে। এখানে এলেই কমে যায় যানবাহনের গতি। পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে দুর্ভোগের মাত্রা।
চট্টগ্রাম থেকে বারইয়ারহাট পেঁৗছাতে মাত্র সোয়া এক ঘণ্টা সময় লাগার কথা। সে ক্ষেত্রে এখন লাগছে কমপক্ষে দুই ঘণ্টা। কোনো কারণে যানজট সৃষ্টি হলে পুরো দিন চলে যায়।
মহাসড়কের 'গলার কাঁটা' হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রাম জোন এলাকার বেশির ভাগ অংশ এখনো খানাখন্দে ভরা। এসব খানাখন্দ ভরাট করতে ঈদের আগে বিশেষ কোনো প্রস্তুতিও নেই বলে জানিয়েছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা।
সড়ক পরিবহন সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম নবী কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রায় পুরো সড়ক এখন ক্ষতবিক্ষত। যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী। পথে পথে গাড়ি বিকল হচ্ছে। খানাখন্দের কারণে বাড়ছে দুর্ঘটনা।
সরেজমিন পরিদর্শনকালে ফেনী সদর থেকে বারইয়ারহাট পর্যন্ত রাস্তায় তেমন কোনো খানাখন্দ চোখে পড়েনি। বারইয়ারহাট সদরেই দেখা গেল বড় বড় গর্ত। ধুলাবালির রাস্তার এপাশ থেকে ওপাশের কিছু দেখা যায় না। হাদি ফকিরহাট এলাকা থেকে শুরু আসল যন্ত্রণা। সেখান থেকে একটানা বড় দারোগারহাট পর্যন্ত গাড়ির গতি বাড়ানো এক কথায় অসম্ভব।
এদিকে মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে দুই দিন ধরে যানজটে ভোগান্তি পোহাচ্ছে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীরা। আটকা পড়ে আছে গরুবোঝাই অসংখ্য ট্রাক। কুমিল্লার ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট এলাকা থেকে দাউদকান্দির মেঘনা-গোমতী সেতু পর্যন্ত প্রায় ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। ঈদে যানজট লাঘবের উদ্দেশ্যে রাতারাতি মহাসড়ক মেরামত করতে গিয়ে হিতে বিপরীত হয়েছে।
ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু মহাসড়ক : রাজশাহী, রংপুর, বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলের প্রায় প্রতিটি জেলার সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগের মাধ্যম ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু মহাসড়ক। সে হিসাবে প্রতিদিন অসংখ্য গাড়ি চলাচল করে এ রুটে। কিন্তু ঢাকা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত বেহাল রাস্তার কারণে যানজটের ভোগান্তি থেকে এবারও মুক্তি মিলছে না যাত্রীদের।
মহাসড়কের কোনাবাড়ী অংশে মেরামতকাজ সম্পন্ন না হওয়ায় ঈদে ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগ বাড়ার আশঙ্কা পরিবহন শ্রমিক, মালিক ও নেতাদের। কোনাবাড়ী বিসিক শিল্প এলাকার সামনে সড়কের এক কিলোমিটার অংশ অত্যন্ত নাজুক। মেরামতের অভাবে গত বর্ষায় জলাবদ্ধতায় সড়কটি ভেঙে বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়। ইট ফেলে গর্ত মেরামত করা হলেও যানবাহনের চাপে একই স্থানে বারবার গর্ত তৈরি হচ্ছে। ফলে এখানে যানজট লেগে থাকা নিত্যচিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।
টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই থেকে টাঙ্গাইল শহর বাইপাসের কোনো কোনো অংশে নামমাত্র সংস্কারকাজ হলেও তা ভারী যানবাহন চলাচলের পুরোপুরি উপযোগী হয়নি। মহাসড়কের রাবনা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত আট কিলোমিটার সড়কে কোনো সংস্কারই হয়নি। মহাসড়কের যেসব স্থানে মাটি ফেলা হয়েছিল, সেগুলো সড়কের দুই পাশে জমা হয়ে দুর্ভোগ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। ধুলার মেঘে আটকে পড়ে চালকরা গাড়ি চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সড়কের কিছু অংশ ছাড়া সব স্থানেই পাথর বা খোয়া উঠে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। রাবনা মোড় থেকে রাবনা সেতু, রসুলপুর থেকে পৌলি, এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড ও এর দক্ষিণের অংশ ভরে গেছে অসংখ্য খানাখন্দে। ঈদুল ফিতরের আগে ওই গর্ত ও খানাখন্দে নিম্নমানের ইটের টুকরো ও মাটি ফেলা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে বৃষ্টি ও গাড়ির চাকার আঘাতে সেগুলো উঠে গেছে। কোনো কোনো অংশে মূল সড়ক ভেঙে নিচু হয়ে গেছে। গর্তে গাড়ির চাকা আটকে সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট।
পরিবহন শ্রমিক, মালিক ও হাইওয়ে পুলিশ জানায়, যানজটের আশঙ্কায় এ রুটে যাত্রীদের অনেকেই গত ঈদুল ফিতরে বাড়িমুখো হয়নি। ফলে মহাসড়কে যানজট তেমন একটা ছিল না। কিন্তু এ ঈদে কোরবানির কারণে বরাবরই বেশির ভাগ নগরবাসী বাড়ির পথে রওনা হবে। এ অবস্থায় এবার তীব্র যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। কেননা রাস্তার দুরবস্থা কাটেনি, বরং বেড়েছে।
হাইওয়ে পুলিশের সার্জেন্ট কামরুজ্জামান রাজ বলেন, "ঈদের পর যে সংস্কারের কথা শুনেছিলাম, তা হয়নি। কিছু কিছু জায়গায় 'শাক দিয়ে মাছ ঢাকা'র মতো কাজ হয়েছে। বরাবরের হিসাবে মানুষ গ্রামমুখী হলে এ মহাসড়কে তীব্র যানজটের আশঙ্কা রয়েছে।"
টাঙ্গাইল বাস-কোচ-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মীর লুৎফর রহমান লালজু জানান, টাঙ্গাইলের গোড়াই থেকে বিভিন্ন স্থানে কিছু কাজ করা হয়েছে। যেসব খানাখন্দকে মাটি বা ইটের টুকরো দেওয়া হয়েছিল, গাড়ির চাকার আঘাতে সেগুলো সরে গিয়ে আগের অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। রাবনা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ।
টাঙ্গাইল জেলা মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি জাহিদুর রহমান খান কাঁকন জানান, রাস্তার পাথর সরিয়ে নতুন পাথর দিয়ে কাজ করার কথা থাকলেও পুরনো পাথর দিয়েই কাজ হয়েছে। কর্তৃপক্ষের কথা আর কাজে মিল পাওয়া যায়নি। সড়কের বেহাল দশার কারণে গাড়িগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। লোকসানের মুখে পড়ছেন পরিবহন মালিকরা।
যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের ওএসডি কর্মকর্তাদের একজন টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার গোলাম মোস্তফা। তাঁর পরিবর্তে এখানে নতুন নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে যোগ দিয়েছেন শওকত আলী। মহাসড়কের সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমি নতুন এসেছি। এ সম্পর্কে এই মুহূর্তে কোনো তথ্য দেওয়া সম্ভব নয়।' তিনি উপবিভাগীয় প্রকৌশলী ফকরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বললেও তাঁকে মোবাইল ফোনে পাওয়া যায়নি।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক : ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক মেরামতের নামে চলছে আইওয়াশ। নিম্নমানের কাজের কারণে মেরামত করা রাস্তা সপ্তাহ না ঘুরতেই আবার ভেঙে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও সড়ক টিলার মতো ফুলে উঠেছে। কোথাও বা সৃষ্টি হয়েছে গভীর গর্ত।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, টঙ্গী থেকে গাজীপুরের শ্রীপুরের নয়নপুর পর্যন্ত ৪১ কিলোমিটার সড়কে বড় ধরনের খানাখন্দ তেমন একটা না থাকলেও সংস্কার করা অংশ দ্রুতই ভেঙে যাচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে টঙ্গী ও জয়দেবপুর সড়ক বিভাগের মেরামত কাজের মান নিয়েও। টঙ্গী বাজার, স্টেশন রোড, মিল গেট, কলেজ গেট, গাজীপুরা, বড়বাড়ী, হোতাপাড়া, ভবানীপুর, বাঘের বাজার, মাওনা ও এমসির বাজার এলাকায় মহাসড়কের কাজ করা হয়েছে যেনতেনভাবে।
যোগাযোগমন্ত্রী একাধিকবার এ সড়কের মেরামতকাজ পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছেন, 'যেভাবে সড়ক মেরামত করা হয়েছে, তাতে আগামী তিন বছরের মধ্যে সড়ক নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা নেই।' কাজের মান নিয়েও সে সময় তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। অথচ মন্ত্রীর এমন দাবির সঙ্গে বাস্তবতার মিল নেই, বরং পুরো উল্টো চিত্র।
গাজীপুর সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ সফিকুল আলম জানান, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মেরামতকাজ এখনো শেষ হয়নি। সালনা ওভারব্রিজের ওপরে, রাজেন্দ্রপুর এলাকাসহ অনেক স্থানে সড়ক এখনো ভাঙা অবস্থায় আছে। ঈদের আগেই অসম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন হবে। কিন্তু আর কবে হবে? ঈদে ঘরমুখো মানুষ তো আর ভোগান্তি থেকে রেহাই পেল না।
টাঙ্গাইল বাস-কোচ-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মীর লুৎফর রহমান লালজু জানান, টাঙ্গাইলের গোড়াই থেকে বিভিন্ন স্থানে কিছু কাজ করা হয়েছে। যেসব খানাখন্দকে মাটি বা ইটের টুকরো দেওয়া হয়েছিল, গাড়ির চাকার আঘাতে সেগুলো সরে গিয়ে আগের অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। রাবনা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ।
টাঙ্গাইল জেলা মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি জাহিদুর রহমান খান কাঁকন জানান, রাস্তার পাথর সরিয়ে নতুন পাথর দিয়ে কাজ করার কথা থাকলেও পুরনো পাথর দিয়েই কাজ হয়েছে। কর্তৃপক্ষের কথা আর কাজে মিল পাওয়া যায়নি। সড়কের বেহাল দশার কারণে গাড়িগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। লোকসানের মুখে পড়ছেন পরিবহন মালিকরা।
কুমিল্লায় যানজটে আটকা শত শত যানবাহন
সংস্কার কাজ আর অতিরিক্ত গাড়ির চাপে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কমপক্ষে ৬০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দীর্ঘ যানজটে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে যায়। মঙ্গলবার রাত ৩টা থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মহাসড়কে যানজট অব্যাহত ছিল। তীব্র যানজটে চরম দুর্ভোগে পড়ে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীরা। আটকা পড়ে গরুবোঝাই ট্রাক। যানজট নিরসনে মহাসড়কে ঈদের দিন পর্যন্ত অতিরিক্ত ৪০০ পুলিশ সদস্য মোতায়েন করেছে।
বাসচালক রমিজ উদ্দিন জানান, ঢাকা থেকে দুই ঘণ্টার পথে কুমিল্লায় আসতে তাঁর ছয় ঘণ্টা সময় লেগেছে। প্রতিদিন যেখানে তিনবার ঢাকায় যাওয়া-আসা করা যেত, সেখানে একবার যাওয়া-আসাও কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুই দিন ধরে এ অবস্থা চলছে বলে জানান তিনি।
কুমিল্লার সংবাদপত্র এজেন্ট মন্টু দাস জানান, যানজটের কারণে ভোর বেলার পত্রিকা গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় কুমিল্লায় এসে পেঁৗছেছে। যানজটে পূর্ব অঞ্চলগামী শত শত গরুবোঝাই ট্রাক আটকা পড়ায় ভাবনায় পড়ে গেছেন গরু ব্যবসায়ীরা। মালেক মিয়া নামের এক গরু ব্যবসায়ী বলেন, ঠিক সময়ে পেঁৗছাতে না পারলে প্রতি গাড়িতে লাখ টাকা লোকসান গুনতে হবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গতকাল মহাসড়কে কুমিল্লার অন্তত ৬০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছিল দীর্ঘ যানজট। মাঝেমধ্যে কিছু সময় যানবাহন ধীরগতিতে এগুচ্ছে। কিছু দূর চলার পর আবার থেমে যাচ্ছে। মহাসড়কের দাউদকান্দি, গৌরীপুর, মাধাইয়া, চান্দিনা, নিমসার, কুমিল্লার সেনানিবাস এলাকা, আলেখার চর, পদুয়ার বাজার, মিয়ার বাজার এলাকায় যানজট ছিল তীব্র। যানজটের কারণে ঈদে ঘরমুখো মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।
দাউদকান্দি হাইওয়ে পুলিশের এসআই মামুন মিয়া জানান, আগের দিনের রেশ কাটতে না কাটতেই বুধবার দিবাগত রাত ৩টায় চান্দিনার বাগুর বাসস্ট্যান্ড থেকে মাধাইয়া পর্যন্ত সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মচারীরা একমুখীভাবে যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা করে মহাসড়কে সংস্কার কাজ করায় যানজটের সৃষ্টি হয়। রাতের যানজট শেষ হতে না হতেই আবার গতকাল ভোর ৫টায় দাউদকান্দির আমিরাবাদে একটি বাস দুর্ঘটনায় পড়লে তীব্র যানজট দেখা দেয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাস্তা মেরামতকারী এক কর্মচারী জানান, ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের দুর্ভোগ এড়াতে রাতারাতি সড়ক মেরামত করতে গিয়ে হিতে বিপরীত হয়েছে। ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে ফাঁড়ির এক কর্মকর্তাও একই কথা বলেন।
গজারিয়া হাইওয়ে পুলিশের সার্জেন্ট আরিফ হোসেন বলেন, 'দাউদকান্দির যানজট গজারিয়া উপজেলার বাউশিয়া পর্যন্ত ছাড়িয়ে গেছে। আমরা যে হারে গাড়ি ডেলিভারি দিচ্ছি, ঢাকা থেকে আরো চার গুণ গাড়ি এসে আবার তার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে।' তিনি জানান, ঢাকা-সিলেট সড়কের নরসিংদীতে সড়ক অবরোধের কারণে বি-বাড়িয়া ও সিলেটগামী অনেক নাইট কোচ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলাচল করায় এ সড়কের ওপর চাপ বেড়ে গেছে।
সহকারী পুলিশ সুপার (মুরাদনগর সার্কেল) জাহাঙ্গীর আলম জানান, ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের লাঘব এবং গরুবোঝাই ট্রাক দ্রুত চলাচলের জন্য হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে চৌদ্দগ্রাম পর্যন্ত যানজট নিরসনে ঈদের দিন পর্যন্ত অতিরিক্ত ৪০০ পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
মহাসড়কে দায়িত্বরত এএসআই রফিকুল ইসলাম জানান, ঈদের যাত্রী পরিবহনের জন্য অনেক আনফিট গাড়ি রাস্তায় নেমেছে। এগুলো প্রায়ই মহাসড়কে বিকল হয়ে পড়ছে। এসব কারণেও যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
প্রতিবেদনের তথ্য পাঠিয়েছেন কালের কণ্ঠের স্থানীয় প্রতিনিধি শরীফ আহমেদ শামীম (গাজীপুর), অরণ্য ইমতিয়াজ (টাঙ্গাইল), আবুল কাশেম হৃদয় (নিজস্ব প্রতিবেদক, কুমিল্লা), ওমর ফারুক মিয়াজী (দাউদকান্দি) ও জয়নাল আবেদীন (মিরসরাই)।

No comments

Powered by Blogger.