দক্ষিণ এশিয়ার বায়ুদূষণে আরব সাগরে ঘূর্ণিঝড়

ক্ষিণ এশিয়ার বায়ুদূষণের কারণে আরব সাগরে ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড়ের উৎপত্তি হচ্ছে। এসব ঝড়ের কারণে হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানিসহ কোটি কোটি ডলারের ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক নতুন গবেষণায় এ দাবি করেছেন। ব্রিটিশ সাময়িকী নেচারে গত বুধবার গবেষণার ফল প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষকরা ১৯৭৯ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত আরব সাগরের সৃষ্ট ঝড়গুলোর গতিপ্রকৃতি পর্যালোচনা করেন। তাঁরা জানান, স্বাভাবিকভাবে আরব সাগরে বছরে গড়ে দুই বা তিনটি ঘূর্ণিঝড় হতো।


তবে পশ্চিম প্রশান্ত বা পশ্চিম আটলান্টিক মহাসাগরীয় ঝড়ের তুলনায় এগুলো অনেকটাই দুর্বল প্রকৃতির ছিল। যদিও আরব সাগরের উষ্ণতা শক্তিশালী ঝড় তৈরির ক্ষমতা রাখে। গবেষকরা ঝড়গুলোর দুর্বলতার কারণও তুলে ধরেছেন। জুলাই-আগস্টে বর্ষা মৌসুমে ওই এলাকায় এক ধরনের খাড়া বায়ুপ্রবাহ দেখা দেয়। বায়ুস্তরের একেবারে ওপরের ও নিচের অংশে বিপরীতমুখী দুটি বায়ুপ্রবাহের সঞ্চালন হয়। নিচেরটি দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত হয়, ওপরেরটি প্রবাহিত হয় পূর্ব দিক থেকে। বায়ুপ্রবাহের ঘূর্ণন শক্তিশালী হওয়ার পথে অনেকটাই বাধা তৈরি করে এগুলো।
কিন্তু গত ১০ বা ১৫ বছরে এ গতিপ্রকৃতি বদলেছে। বর্ষা আসার আগেই ঝড় তৈরি হয়ে যায় আরব সাগরে। এর পেছনে দক্ষিণ এশিয়ার বাদামি রঙের মেঘকে দায়ী করেছেন বিজ্ঞানীরা। ভারত মহাসাগরের উত্তরাংশে ভারত ও পাকিস্তানের ভূখণ্ড বরাবর এ মেঘের অবস্থান। বিভিন্ন কারখানা থেকে নির্গত কার্বন ও সালফেট থেকে সৃষ্ট ধোঁয়া, ডিজেল ও জৈব জ্বালানি থেকে উৎপন্ন গ্যাস জমে কয়েক কিলোমিটার পুরু ঘোলাটে মেঘের এ আস্তরণ তৈরি হয়েছে। আগের গবেষণায় এ মেঘকে বর্ষা মৌসুমের গতিপ্রকৃতি ব্যাহত করা ও হিমালয় পর্বতমালার বরফ গলে যাওয়ার জন্য দায়ী করেছিলেন বিজ্ঞানীরা।
ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানান, ১৯৩০-এর দশক থেকে বাদামি মেঘের আয়তন প্রায় ছয়গুণ বেড়েছে। অন্ধকার এ স্তরটি ওপরে সূর্যের আলো শুষে নেয়। আর নিচের স্তরের বায়ুকে শীতল করে রাখে। এর ফলে বায়ুমণ্ডলে জোরালো ঘূর্ণন তৈরি হয়। সরাসরি পর্যবেক্ষণ ও কম্পিউটার মডেল থেকে বিজ্ঞানীরা দেখতে পান, ঘূর্ণিঝড় তৈরি করার পরই মেঘের স্তরটি শান্ত হয়। ১৯৯৮ সালে ভারতের গুজরাটে ঘূর্ণিঝড়ে তিন হাজার লোকের প্রাণহানি, ২০০৭ সালের জুনে ওমান ও ইরানে ঘূর্ণিঝড় গনুর কারণে ৪৯ জনের মৃত্যু, গত বছরের জুনে সাইক্লোন ফেটের কারণে ২৬ জনের মৃত্যু ও কয়েক শ কোটি ডলারের ক্ষয়ক্ষতি এরই উদাহরণ। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশনের বিজ্ঞানী আঞ্জুলি বামজাই বলেন, 'গবেষণাটি মানুষের তৎপরতার কারণে সৃষ্ট দূষণের বড় উদাহরণ। আঞ্চলিক পর্যায়ের মারাত্মক বায়ুদূষণের ফলে কী অচিন্তনীয় পরিণতি আসতে পারে, এরই প্রমাণ এটি।' সূত্র : এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.