মৌসুমে চামড়া কিনতে ট্যানারি মালিকদের টালবাহানা by নাজমুল আলম শিশির

দাম বেশি_এই অজুহাতে কোরবানির মৌসুমে চামড়া কিনতে চান না ট্যানারি মালিকরা। আর সারা দেশ ঘুরে ঘুরে সংগ্রহ করা চামড়া বেশি লাভে বিক্রির অপেক্ষায় বসে থাকেন আড়তদাররা। দেশের অন্যতম প্রধান রপ্তানি পণ্য এ চামড়া একপর্যায়ে বাজারে খুঁজে পাওয়া যায় না। বিপুল চামড়া ভারতে পাচার হয়ে গেছে অভিযোগ করে হা-হুতাশ করতে থাকেন রপ্তানিকারকরা। প্রতিবছরের এ চিত্রের পুনরাবৃত্তির আভাস পাওয়া যাচ্ছে এবারও। কারণ ঈদের আগে চামড়ার দাম নির্ধারণ না করে এবার বিষয়টি বাজারের ওপরই ছেড়ে দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।


বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সভাপতি শাহীন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা কমে যাওয়ায় চামড়ার দাম কমে গেছে প্রায় ২০ থেকে ২৫ শতাংশ। রপ্তানিও কমে গেছে। দেশের ট্যানারিগুলোয়ও প্রচুর চামড়া আছে। ফলে গত বছর থেকেও এবার দাম কিছুটা কম হতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
দেশের বাজারে চামড়ার দাম কম হলে ভারতের পাচার হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তাঁদের মতে, দেশের বাজারে দাম না পেলে সীমান্ত এলাকার জেলাগুলো থেকে চামড়া রাজধানীর বাজারে আসার আগেই চোরাইপথে ভারতে পাচার হয়ে যায়। বিটিএ সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, ভৌগোলিক কারণেই কিছু চামড়া পাচার হয়ে যায়।
চামড়া ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, বড় বড় ট্যানারি মিলমালিকদের সিন্ডিকেট নিজেদের সুবিধার জন্য চামড়ার দাম কম রাখায় বিশ্বব্যাপী সমাদৃত বাংলাদেশি চামড়ার একটি বিশাল অংশ দেশের বাইরে পাচার হয়ে যায়! দেশের চামড়া পণ্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকরা একসময় প্রয়োজনীয় কাঁচামাল পান না। পেলেও বেশি দামে কিনতে হয়, ফলে রপ্তানি পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়।
ট্যানারি মালিকরা বিশ্ববাজারে চামড়ার চাহিদা কমে যাওয়ার কথা বললেও রপ্তানির তথ্য থেকে পাওয়া যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর হিসাবে, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে চামড়া রপ্তানি গত বছরের একই সময়ে তুলনায় ২০ শতাংশ বেড়েছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব ২০০৮-০৯ অর্থবছরে বাংলাদেশের চামড়া শিল্পের ওপর পড়েছিল। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে যেখানে চামড়া খাত থেকে ২৮ কোটি ৪৪ লাখ ডলার আয় হয়, সেখানে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে আয় কমে দাঁড়ায় প্রায় ১৭ কোটি ৭৩ লাখ ডলারে। তবে ২০০৯-১০ অর্থবছরে চামড়া খাত আবারও ঘুরে দাঁড়ায় চামড়া শিল্প। সে বছর রপ্তানি আয় দাঁড়ায় ২২ কোটি ৬১ লাখ ডলারে। সর্বশেষ ২০১০-১১ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে চামড়া রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৯ কোটি ৭৮ লাখ ডলারে।
বাংলাদেশ থেকে চামড়ার পাশাপাশি চামড়ার তৈরি জুতা, ব্যাগ, হাত মোজাসহ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি হয়। আর বাংলাদেশের চামড়া এবং চামড়ার পণ্যের প্রধান ক্রেতা জাপান, কোরিয়া, অস্ট্রিয়া, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, বেলজিয়াম , ব্রাজিল, জার্মানি, ইতালি ও সৌদি আরব অন্যতম।
গত বছর রাজধানী ঢাকায় গরুর চামড়ার দর প্রতি বর্গফুট ৫৫ থেকে ৬০, খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ২৫ থেকে ৩০ ও বকরির চামড়া প্রতি বর্গফুট ২০ থেকে ২২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। আর ঢাকার বাইরে গরুর চামড়া ৪৫ থেকে ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয় গত বছর। তবে চামড়ার মৌসুমি ব্যবসায়ী ও আড়তদারেরা নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দামে কোরবানির পশুর চামড়া কেনায় দেখা দেয় সংকট। ট্যানারি মালিকেরা তখন বেশি দরে চামড়া কিনতে চাননি। ফলে বেশ কিছু দিন এই নিয়ে চলে পক্ষে-বিপক্ষে নানা মতামত। বিপুল চামড়া নষ্ট হওয়ায় উপক্রম হয়েছিল। এ বছর যাতে এই ধরনের কোনো পরিস্থিতি তৈরি না হয়, তাই চামড়ার কোনো দরই নির্ধারণ করা হয়নি বলে জানান ট্যানারি মালিকরা।

No comments

Powered by Blogger.