সব ওলটপালট করতে সময় লাগবে না :শামীম ওসমান

'চেঞ্জ ইমেজ, চেঞ্জ নারায়ণগঞ্জ'_ স্লোগান নিয়ে নারায়ণগঞ্জে নতুন ধারার রাজনীতি শুরু করতে যাচ্ছেন আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমান। সদ্য সমাপ্ত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পরাজয়ের চারদিনের মাথায় গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে চারটি থানা এলাকার আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় শামীম ওসমান এ ঘোষণা দেন। এদিকে অনুসারীদের এক অভিযোগের বিষয়ে শামীম ওসমান বলেন, 'নির্বাচনে কেউ জিতলে পরের তিন দিন তার মাথা গরম থাকে। তিন দিন শেষ হয়েছে।


কেউআপনাদের হুমকি দিলে সঙ্গে সঙ্গে আমাকে জানাবেন। প্রয়োজনে পাঞ্জাবি খুলে জিন্সের প্যান্ট পরে নামব। সব কিছু ওলট-পালট করে দিতে আমার বেশি সময় লাগবে না।' মতবিনিময় সভায় অনুসারীরা শামীম ওসমানকে বলেন, তাদের নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে শামীম ওসমান নেতাকর্মীদের ভীত না হয়ে রাজনীতির মাঠে থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, 'নারায়ণগঞ্জের রাজনীতি আমরাই করব। আর থানার নেতৃত্ব আপনাদের হাতেই থাকবে। এখানে তৃতীয় কারও স্থান নেই। কারণ আমরা নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের রাজনীতি না করলে অন্য কেউ এর হাল ধরবে না।'
আওয়ামী লীগ সমর্থিত পরাজিত এ প্রার্থী দেশের প্রবীণ সাংবাদিক এবিএম মূসাকে নিয়ে বিষোদ্গার করেন। তিনি বলেন, 'মূসা সাহেবের দুই পা কবরে চলে গেছে, তাও তার দালালি কমল না।' আওয়ামী লীগের কিছু শীর্ষনেতা সম্পর্কেও আপত্তিকর বক্তব্য রাখেন শামীম ওসমান। এ সময় আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের চরিত্র নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়।
শহরের চাষাঢ়ায় শামীম ওসমানের পৈতৃক বাড়ি হীরামহলে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে নির্বাচিত সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর অনেকেই সভায় উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া সভায় জেলা আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু, শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক হাজি ইয়াছিন মিয়া, ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম সাইফুল্লাহ বাদল, সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী, বন্দর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রশিদসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
শামীম ওসমান আরও বলেন, 'আমি নির্বাচনে পরাজিত হতাম না। বিএনপি-জামায়াত জোটের সঙ্গে আঁতাত করে প্রতিপক্ষ প্রার্থী জয়ী হয়েছেন।' তিনি বলেন, বিগত সংসদ নির্বাচনে সিটি করপোরেশন এলাকায় বিএনপি-জামায়াত এক লাখ ১১ হাজার ভোট পেয়েছিল। এখন গ্যাস, বিদ্যুৎ সংকট, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে বিএনপি-জামায়াতের ভোট আরও বাড়ার কথা। সিটি নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের ভোট কার বাক্সে পড়েছে। যেসব ভোটকেন্দ্রে ইভিএম ছিল, সেখানে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ ভোট পড়েছে।'
শামীম ওসমানের অভিযোগ, টাকার কাছে বিক্রি হওয়া নারায়ণগঞ্জের কিছু কথিত বুদ্ধিজীবীর ঢালাও অপপ্রচার এবং কিছু মিডিয়ার বিরুদ্ধাচরণই তার পরাজয়ের অন্যতম কারণ। প্রথম আলো এবং ইংরেজি ডেইলি স্টারের নাম উল্লেখ করে শামীম বলেন, এ দুটি পত্রিকা ভেবেছিল আমাকে হারিয়ে দিয়ে তারা জয়ী হয়েছে। যখন প্রধানমন্ত্রী আমাকে ডেকে নিলেন তখন তাদের মাথায় হাত পড়ল।
নির্বাচনে তার পক্ষে কাজ করায় তিনি নেতাকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং ধন্যবাদ জানান। এরপর অনুসারীদের নিয়ে শহরে একটি র‌্যালি বের করে তার নামে ছাপানো একটি লিফলেট বিলি করা হয়।
নাসিক নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় লিফলেটের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জবাসীকে অভিনন্দন জানান শামীম ওসমান। লিফলেটে বলা হয়েছে, 'আপনারা জানেন এ নির্বাচনকে ঘিরে নানামুখী ষড়যন্ত্র হয়েছিল। শুধু প্রগতিশীল হওয়ায় ও স্বাধীনতার সপক্ষে কথা বলার অপরাধে বিএনপি প্রার্থীকে রাতের আঁধারে বসিয়ে দেওয়া, নির্বাচন কমিশনের সর্বোচ্চ ব্যক্তিদের প্রশ্নবিদ্ধ আচরণ ও বক্তব্য দেওয়া, পয়সায় কেনা কিছু মুখচেনা বুদ্ধিজীবীর ব্যাপক অপপ্রচার এবং আমাকে ও নারায়ণগঞ্জবাসীকে সন্ত্রাসী বানানোর শত চেষ্টা সত্ত্বেও আপনারা সুষ্ঠু নির্বাচনের যে উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন সে জন্য আপনাদের অশেষ ধন্যবাদ। নির্বাচনে যারা আমাকে ভোট দিয়েছেন তাদের জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ। যারা ভোট দেননি নিশ্চয়ই আমি তাদের মন জয় করতে পারিনি। তাদেরও জানাই আমার শ্রদ্ধা ও সালাম। আপনারা দোয়া করবেন যেন আগামী দিনে আপনাদের মন জয় করতে পারি। অতীতে যেমন আপনাদের পাশে থেকে সেবা করার সুযোগ পেয়েছি, সকল অন্যায়, অবিচার ও অত্যাচার এবং সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলাম, তেমনি ভবিষ্যতের দিনগুলোতেও আপনাদের পাশে থাকব ইনশাল্লাহ। আসুন আমরা সবাই মিলে একটি আধুনিক সুখী নারায়ণগঞ্জ গড়ে তুলি। আমাদের স্লোগান হোক_ চেঞ্জ ইমেজ, চেঞ্জ নারায়ণগঞ্জ।'

No comments

Powered by Blogger.