ব্রিকলেন অলিম্পিকের কারি ক্যাপিটাল by হাসান শান্তনু

যুক্তরাজ্যের ব্রিকলেন আসন্ন অলিম্পিকে কারি ক্যাপিটাল বা কারি খাবারের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে। এর সঙ্গে ব্রিকলেনের রেস্তোরাঁগুলোর খাঁটি বাংলাদেশী খাবার যুক্তরাজ্যের পর এবার বিশ্ব খাবার রসিকদের মন জয় করতে যাচ্ছে। আর ব্রিকলেনের কারি শিল্প যুক্তরাজ্য ছাড়িয়ে এখন বিশ্ব দরবারে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। লন্ডন অলিম্পিকের আয়োজন কমিটির প্রধান লর্ড সেবকো ব্রিকলেনে হাজির হয়েই সম্প্রতি এ ঘোষণা দেন। এ ঘোষণা নিঃসন্দেহে আনন্দের। কারি শিল্পের জন্যও এটা একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। কেননা, অলিম্পিককে কেন্দ্র করে এককভাবে আর কোনো শিল্প এভাবে প্রচার পাচ্ছে না।


তাছাড়া অলিম্পিক চলাকালে সারা পৃথিবী থেকে যত বিমান ব্রিটেনে যাবে, সেগুলোর সব যাত্রীর জন্য অলিম্পিকের ওপর পুস্তিকা থাকবে। সেই পুস্তিকায় ব্রিকলেনের নাম থাকবে কারি ক্যাপিটাল হিসেবে। অলিম্পিক উপলক্ষে বিভিন্ন ইস্যুতে ২০ হাজারের বেশি ভিন্ন ভিন্ন প্রকাশনা হবে। তাই কারি ক্যাপিটাল এখন নতুন সাজ সজ্জার জন্য প্রস্তুত। শুধু নতুন থালা, বাসন, চামচ আর দেয়ালে নতুন রং নয়, খাবারের তালিকাতেও নতুনত্বের কথা ভাবছেন রেস্তোরাঁ মালিকরা।
টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত প্রথম বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মেয়র লুত্ফর রহমানও বার বার বিষয়টাকে ‘ঐতিহাসিক ঘটনা’ বলছেন। তিনি নিজের কার্যালয়ে দেয়া সাক্ষাত্কারে বিবিসি বাংলাকে বলেন, অলিম্পিকের সময় সারা পৃথিবী থেকে যত বিমান ব্রিটেনে আসবে সেগুলোর প্রতি যাত্রীর জন্য অলিম্পিকের পুস্তিকায় থাকবে কারি শিল্পের কথা। অলিম্পিকের আয়োজন কমিটির লর্ড সেবকো সম্প্রতি ব্রিকলেনে গেলে তাকে অনেকটা উত্সবের আমেজে বরণ করে নেন সেখানকার রেস্তোরাঁ মালিকরা। সড়কের ওপর টেবিল পেতে পাপড় আর আমের চাটনি দিয়ে তাকে স্বাগত জানান তারা।
ব্রিকলেনের অধিকাংশ রেস্তোরাঁর খাবার হয় খাঁটি বাংলাদেশী, নয় ভারত বর্ষের বিখ্যাত কোনো খাবার। যেমন সেখানকার সুপরিচিত একটি রেস্তোরাঁর নাম ‘গ্রামবাংলা’। এর মালিক বাংলাদেশী। ছোট পরিসরের এ রেস্তোরাঁতে খেতে আসেন প্রধানত বাংলাদেশীরা। এর মালিক বিবিসিকে জানান, তার রেস্তোরাঁর খাবারের কথা। মেন্যুতে আছে—সাতকড়া দিয়ে রুই মাছ, চিংড়ি মাছ ভর্তা, মগজ ভাজি ও কাচকি মাছ ইত্যাদি। রেড ফোর্ট’র মালিক আমিন আলীও বাংলাদেশী। তিনিও বিবিসিকে জানান তার রেস্তোরাঁর মেন্যুতে থাকা একেবারে বাংলাদেশী খাবারের কথা। ফলে এসব খাবারও পৌঁছে যাচ্ছে প্রায় পুরো বিশ্বের মানুষের কাছে। কেননা, অলিম্পিক উপভোগ করতে বিশ্বের প্রায় সব দেশ থেকেই সেখানে মানুষ জড়ো হবেন।
অন্যদিকে ব্রিকলেনের রেস্তোরাঁগুলোও প্রস্তুত হচ্ছে। সারা পৃথিবী থেকে আসা ভোজনরসিকদের প্রত্যাশা পূরণে তারা সক্ষমতা তাদের দেখাতে হবেই। সেখানকার সবচেয়ে বড় রেস্টুরেন্ট ‘ক্যাফে নাজের’র মালিক মুকিম আহমেদ এ বিষয়ে বিবিসিকে জানান ‘অনেকেই প্রস্তুত হচ্ছেন’। রেডফোর্ট রেস্তোরাঁর প্রতিষ্ঠাতা আমিন আলী বিবিসিকে বলেন, ‘রেস্টুরেন্টের পরিবেশ বিশ্বমানের হতে হব, না হলে হিতে বিপরীত হতে পারে। অলিম্পিকের সময় এখানে যারা আসবেন, তাদের অনেকে বিশ্বমানের সেবা পেয়ে অভ্যস্ত’। আসলে মালিকদের প্রস্তুতিটা সেলক্ষ্যেই। আমিন আলী বিবিসিকে এমন আশঙ্কার কথাও জানান, ‘রেস্টুরেন্টের পরিবেশ বিশ্বমানের না হলে প্রত্যাশা পূরণ হবে না। তখন লাভের বদলে ব্রিকলেনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে’।
অলিম্পিককে সামনে রেখে টাওয়ার হ্যামলেটস্ কাউন্সিল ব্রিকলেনের পরিচ্ছন্নতা বাড়াতেও নানারকম বিধিনিষেধ আরোপ করছে। রেস্টুরেন্টের সামনে ময়লার বিন রাখা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রেস্টুরেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে খদ্দের ধরার জন্য ডাকাডাকির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। নিরাপত্তা বাড়াতে বাড়তি পুলিশ টহলের ব্যবস্থা হয়েছে। টাওয়ার হ্যামলেটসের মেয়র লুত্ফর রহমান বিবিসিকে জানান, ‘অলিম্পিক উপলক্ষে ব্রিকলেন আর পাশের হোয়াইট চ্যাপেল, মাইল অ্যান্ড এলাকার সৌন্দর্য বাড়াতে এক কোটি পাউন্ড খরচ করা হচ্ছে।
তবে কারি ক্যাপিটাল ব্রিকলেনের রেস্টুরেন্টগুলো তাদের নতুন পাওয়া মর্যাদার প্রতি কতটা সুবিচার করতে পারবেন, সেটা এখনও অনেকের কাছে খুব স্পষ্ট নয়। কারি ক্যাপিটাল ঘোষণায় কতটা লাভ হবে, অধিকাংশ রেস্তোরাঁ মালিক এ হিসাব মিলাতে পারছেন না। কারও কারও প্রশ্ন, ‘অলিম্পিকের সময় ছয় সপ্তাহে আর কত টাকার ব্যবসা বাড়বে? একশ’ ভাগ? তার বেশিতো আর নয়। সেজন্য প্রস্তুতি হিসেবে তারা হাজার হাজার পাউন্ড বিনিয়োগ করতে অর্থনৈতিক মন্দার এ সময়ে রাজি নন। তবে মেয়র লুত্ফর রহমান বিবিসিকে বলেন, ‘ধারণা করা হচ্ছে অলিম্পিকের সময় কয়েক সপ্তাহে লন্ডনে সারা পৃথিবী থেকে ১০ লাখের মতো মানুষ আসবেন। ব্রিকলেনকে কারি ক্যাপিট্যাল হিসেবে ঘোষণা আর প্রচার প্রচারণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে কয়েক হাজার মানুষ সেখানে খেতে গেলেও ব্যবসা বাড়বে’। ‘গ্রামবাংলা’ রেস্তোরাঁর মালিক মোহাম্মদ শহিদও তা বিবিসির কাছে স্বীকার করেন। তিনি আরও জানান, তাদের মূল টার্গেট বিদেশিরা।

No comments

Powered by Blogger.