অধিনায়ক মুশফিক সিরিজের প্রাপ্তি কিন্তু...

ন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট। ৫৮ ও ৭৮-এর বিশ্বকাপ-বিপর্যয় দিয়ে শুরু, জিম্বাবুয়ে সফরে তিন ফরম্যাটের ক্রিকেটে সিরিজ হারায় তলানিতে চলে যাওয়া, প্রতিক্রিয়ায় সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালকে অধিনায়কত্ব-সহঅধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে নতুন করে শুরুর চেষ্টা। মুশফিকুর রহিমের অধীনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেই পথচলার প্রথম পদক্ষেপটা কেমন হলো?মুশফিকের ছক্কায় টোয়েন্টি টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। প্রথম দুটো ওয়ানডেতে বিধ্বস্ত হলেও শেষটিতে ক্যারিবিয়ানদের ৬১ রানে গুটিয়ে দিয়ে বিশ্বকাপ-লজ্জা কিছুটা হলেও ফেরত দিতে পেরেছে।


এরপর চট্টগ্রামে বৃষ্টিস্নাত টেস্ট আধিপত্য নিয়ে ড্র, ঢাকায় রৌদ্রোজ্জ্বল ম্যাচে অনেক ইতিবাচক বিষয় নিয়ে হার। সব মিলিয়ে নবাযাত্রা মন্দ হয়নি বলেই মুশফিকুরের দাবি, 'এটি ছিল আমার প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট। খুব যে খারাপ হয়েছে, তা বলব না। তবে এর চেয়ে অনেক ভালো হতে পারত।'
তা হয়তো পারত। তবে অধিনায়ক হিসেবে এর চেয়ে ভালো শুরু সিরিজের আগে কষ্টকল্পনাই ছিল মুশফিকের জন্য। সাকিব-তামিম ইস্যুতে বিধ্বস্ত এক দলকে এক সুতোয় আবার গেঁথেছেন তিনি। নিজে পারফরম করেছেন সামনে থেকে। তাঁর ছক্কায় টোয়েন্টি টোয়েন্টি জিতেছে স্বাগতিকরা। ওয়ানডের তিন ম্যাচে একটি ফিফটিসহ ৫০ গড়ে ১০০ রান। টেস্টের ৪ ইনিংসে দুটি ফিফটিসহ ৪৬.৩৩ গড়ে ১৩৯ রান। সব মিলিয়ে অধিনায়ক মুশফিককে লেটার মার্কসই দিচ্ছেন আরেক সাবেক অধিনায়ক ফারুক আহমেদ, 'যখন প্রধান নির্বাচক ছিলাম, তখন অনূর্ধ্ব-১৭, অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক করেছিলাম ওকে। মুশফিকের ক্রিকেট-মস্তিষ্ক নিয়ে কখনোই কোনো সংশয় ছিল না। একটাই দেখার ছিল, দায়িত্ব পাওয়ার পর পারফরম্যান্সটা কেমন হয়। সেটি তো দেখলাম আরো ভালো হয়েছে। সব মিলিয়ে দুর্দান্ত শুরুই বলব।'
দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার পরও সাকিব-তামিমের উজ্জ্বল পারফরম্যান্স এই সিরিজের আরেক প্রাপ্তি। সাকিব টেস্টে হয়েছেন সিরিজসেরা, তামিমও করেছেন দুটো ফিফটি। আর মাঠের বাইরে যে মুশফিকের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিযেছেন, সেটি স্বীকারেও কুণ্ঠাহীন অধিনায়ক, 'রিয়াদ ভাই (মাহমুদ উল্লাহ, সহ-অধিনায়ক) অসুস্থ হওয়ার পর থেকে আমি মোটামুটি একা ছিলাম। সেখান থেকে সাকিব-তামিম মাঠে ও মাঠের বাইরে আমাকে দারুণ সমর্থন দিয়েছে। ওদের প্রতি আমি খুব খুশি।' এ ছাড়া প্রাপ্তির খাতায় আরো কিছু যোগ করেছেন মুশফিক, 'নাঈম মোটামুটি ভালো করেছে। ইলিয়াস সানি প্রথম টেস্টে ছিল দুর্দান্ত। নাসির হোসেন টেস্ট-ওয়ানডে মিলিয়ে অসাধারণ।'
অধিনায়কের অতৃপ্তির বড় একটা জায়গা টেস্টে ব্যাটসম্যানদের পারফরম করতে না পারা। সিরিজ শেষের সংবাদ সম্মেলনে সে জন্য ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেট কাঠামোর দুর্বলতাকেই দায়ী করেছিলেন মুশফিক। একই সুর পূর্বসূরি ফারুকের কণ্ঠেও, 'বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ৭০টির বেশি টেস্ট খেলেছে। কিন্তু প্রথম টেস্টে আমরা যেমন খেলেছিলাম, সেখান থেকে খুব কি এগোতে পেরেছি! পারিনি যে সে জন্য ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটকে গুরুত্ব না দেওয়ার কথা বলব।' টেস্টের গড়পড়তা পারফরম্যান্সের জন্য পুরো সিস্টেমকেই প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছেন সাবেক এ অধিনায়ক, 'মৌসুমের ক্যালেন্ডার তৈরির সময় এই ফার্স্ট ক্লাসকে সবচেয়ে অবহেলিত সময়ে রাখা হয়। সেখানে জাতীয় দলে ক্রিকেটাররা খেলতে পারবে কি না, বিবেচনাই করা হয় না। অথচ সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পায় ক্লাব ক্রিকেট। তো ওই ৫০ ওভারের খেলাকে গুরুত্ব দিয়ে পাঁচ দিনের টেস্টে ভালো করার স্বপ্ন দেখাই তো বোকামি।' আর দেরি না করে এদিকে মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ ফারুকের, 'এই ফার্স্ট ক্লাস প্রতিযোগিতা করা হয় কেবল মুখ রক্ষার্থে। আর এক মুহূর্ত দেরি না করে পুরো কাঠামোটাই তাই পাল্টে ফেলতে হবে। তখন দেখবেন আমরা টেস্টে ভালো করব। নইলে চট্টগ্রামের মতো দু-একটি ঝলক দেখাব, এরপর ১০ টেস্ট হারব জঘন্যভাবে।'
ফারুক আহমেদের এ চিরন্তন কথাগুলো কী আর বিসিবির কর্তারা জানেন না? জানেন, কিন্তু সে অনুযায়ী কিছু করেন না। টেস্ট ক্রিকেটের তিমির থেকে আলোর পথে যাত্রার জন্য এবার কি কিছু করবেন তাঁরা!

No comments

Powered by Blogger.