টাকা আটকে আছে ট্যানারি মালিকদের কাছে-মূলধন সংকটে বগুড়ার চামড়া বাজারে মন্দার আশঙ্কা by জে এম রউফ,

দুল আজহাকে উপলক্ষ করে বগুড়ায় পশু কোরবানির পর চামড়া কেনাবেচার প্রস্তুতি চলছে। তবে মূলধন সংকটের কারণে চামড়া ব্যবসায়ীদের মধ্যে এবার আগের মতো উৎসাহ-উদ্দীপনা নেই। ট্যানারি মালিকদের কাছে বছরের পর বছর বিপুল অঙ্কের টাকা বকেয়া থাকায় ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। মূলধনের অভাবে সব ব্যবসায়ীই পড়েছেন বিপাকে। ঈদের আগে বকেয়া টাকা প্রাপ্তি নিশ্চিত ও মূলধনের সংস্থান করতে না পারলে অনেক ব্যবসায়ী এবার চামড়া কিনতে পারবেন না বলে জানা গেছে।


ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ঢাকার কিছু ট্যানারি মালিক ও আড়তদার তাঁদের পথে বসিয়েছেন। কয়েক বছর ধরে ট্যানারি মালিকরা অল্প সময়ের মধ্যে চামড়ার টাকা পরিশোধের আশ্বাস দিয়ে বগুড়া থেকে চামড়া কিনে নিয়ে যাওয়ার পর নানা অজুহাতে পাওনা টাকা আটকে রাখছেন! আবার পরের ঈদে চামড়া দিলে বাকি টাকা পরিশোধ করা হবে_এমন শর্তও জুড়ে দেওয়া হচ্ছে! ট্যানারি মালিক ও আড়তদারদের কাছে কোটি কোটি টাকা আটকে থাকায় জেলার ব্যবসায়ীরা নতুন কোথাও মাল সরবরাহ করার সাহস পান না। এ কারণে প্রতিবছর ঋণ নিয়ে ব্যবসা করে এবার অনেক ব্যবসায়ীর অবস্থা নাজুক।
বগুড়া জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক বজলুর রহমান জানান, চামড়া ব্যবসায়ীদের বেশির ভাগই কোরবানি ঈদের আগে বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ নিয়ে চামড়া কেনেন। তাঁরা আশায় থাকেন ট্যানারি মালিক বা আড়তদারের কাছে চামড়া বিক্রির টাকা পেয়ে ঋণ পরিশোধ কররেন; কিন্তু ট্যানারি মালিকরা টাকা দিতে বিলম্ব করেন। অনেকে আবার বছরের পর বছর টাকা পরিশোধ না করে ব্যবসা করতে বাধ্য করেন। ফলে বিপাকে পড়তে হয় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের।
বগুড়ার চামড়া ব্যবসায়ী আবুল হোসেন জানান, গত রমজান মাসের পর থেকে চামড়ার দাম বেশ কমেছে। আগে যেখানে মাঝারি গরুর চামড়া (২২ থেকে ২৬ ফুট) বিক্রি হতো দুই-আড়াই হাজার টাকায়, এখন একই মাপের চামড়া বিক্রি হচ্ছে এক-দেড় হাজার টাকায়। সেই সঙ্গে ছাগলের চামড়ার দামও কমেছে। বর্তমানে প্রতি বর্গফুট ছাগলের চামড়া বিক্রি হচ্ছে প্রকারভেদে ২৫ থেকে ৪৫ টাকা। সে হিসেবে ছাগলের ভালো চামড়ার দাম বর্তমানে ১২০ থেকে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা।
বগুড়ার অধিকাংশ চামড়া ব্যবসায়ী জানান, চামড়া ব্যবসার ক্ষেত্রে বাকি বিক্রির যে প্রথা চালু রয়েছে, এই প্রথায় হাতেগোনা কিছু ব্যবসায়ীর লাভ হলেও ক্ষতিগ্রস্তদের সংখ্যাই বেশি। এ কারণে তাঁরা বকেয়া পরিশোধ করে নগদ টাকায় চামড়া কেনার দাবি জানান। ব্যবসায়ীরা জানান, বগুড়া জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির তালিকাভুক্ত ২২০ জন সদস্য হলেও উপজেলাপর্যায়ের ফড়িয়া ও ব্যাপারী শ্রেণীর ব্যবসায়ীর সংখ্যাও প্রায় সমান। সেই ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীসহ প্রায় ৫০০ জন ব্যবসায়ীর প্রত্যেকেই কোনো না কোনোভাবে জিম্মি দশায় রয়েছেন।
বগুড়া জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন সরকার জানান, এবার চামড়ার দাম গত বছরের তুলনায় একটু কমেছে। বিশ্ববাজারেও চামড়া ব্যবসায় মন্দাভাব বিরাজ করছে। ফলে চামড়ার বাজারে এর একটা প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করেন তিনি।
তিনি বলেন, মূল্যবৃদ্ধি বা কমার চেয়েও বড় সমস্যা হলো ব্যবসায়ীদের অনেকের কাছেই এবার পুঁজি সংকট। ঈদের আগে গত কয়েক বছরের পাওনা টাকার যদি কিছুটা পাওয়া যায়, তাহলে অনেকেই চামড়া কিনতে পারবেন। না হলে বাজারে নগদ টাকায় চামড়া কেনার লোকের অভাব দেখা দেবে। তখন স্বাভাবিকভাবেই কম দামে চামড়া কেনাবেচা হবে। তিনি জানান, প্রতিবছর বগুড়ায় ৫০ কোটি টাকার ওপরে চামড়া কেনাবেচা হয়। এর সিংহভাগ টাকাই দীর্ঘদিন আটকে থাকে আড়তদার ও ট্যানারি মালিকদের কাছে।

No comments

Powered by Blogger.