মায়ের আর্তি-আমির একটা বাচ্চা ছেলে!

মাত্র ১৭ বছর বয়সেই টেস্ট অভিষেক মোহাম্মদ আমিরের। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই ইনিংসে ৬ উইকেট নিয়ে অভিষেকেই আলো ছড়ানো আমিরের মধ্যে ছিল অমিত সম্ভাবনার হাতছানি। কিন্তু লোভের আগুনে সবই পুড়ে ছাই, এখন তাঁর ঠিকানা হতে যাচ্ছে ইংল্যান্ডের কোনো কারাগার। স্পট ফিঙ্ংি কেলেঙ্কারিতে জড়ানো তিন পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের সর্বকনিষ্ঠ আমিরের সাজা হয়েছে ছয় মাসের। টিনএজ এ ক্রিকেটারের ভুলকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে সাজা মওকুফ করার আবেদন জানিয়েছেন আমিরের মা নাসিম আখতার। তবে পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার ও সাধারণ জনগণের এ ব্যাপারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।


কেউ কেউ চাইছেন, তাঁদের সাজা হোক। তবে অনেকেরই কামনা, সাজার মেয়াদ কাটিয়ে আবারও ক্রিকেটে ফিরবেন আমির।
তসবিহ হাতে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছিলেন নাসিম আখতার। ছেলের কারাদণ্ডের খবর শুনে ভেঙে যায় মায়ের মন, 'আমি দেড় বছর ধরে এই পাষাণ বুকে বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছি। ছোটরা ভুল করবেই, আমির যদিও ক্রিকেটে অনেক নাম করেছিল, কিন্তু তার পরও তো সে একটা বাচ্চাই।' অবশ্য আমিরের বয়সটা বিবেচনায় নিয়ে তাঁকেই সবচেয়ে কম মেয়াদের সাজা দিয়েছেন বিচারক এবং তাঁকে কারাবাসের বদলে থাকতে হবে কিশোর সংশোধন কেন্দ্রে। যদিও আমিরের আইনজীবী জামিন শুনানিতে অংশ নিয়েছিলেন তবে শেষ পর্যন্ত বিচারককে তিনি জানিয়েছেন, জামিনের আবেদন না করলেও তাঁর ইচ্ছা আছে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার। সাউথওয়ার্ক ক্রাউন কোর্ট প্রাঙ্গণে আমিরের একটি লিখিত বিবৃতি পড়ে শুনিয়েছেন আমিরের আইনজীবী, যেখানে পাকিস্তানের সর্বসাধারণের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করেছেন তিনি, 'আমার স্বপ্ন ছিল বিশ্বসেরা ক্রিকেটার হওয়ার...জানি না কখনো সেটা আর সম্ভব হবে কি না। আমি ক্ষমাপ্রার্থনা করছি পাকিস্তানের ক্রিকেটের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাই ও জনগণের কাছে। জানি আমি এই খেলাটার কতটা ক্ষতি করেছি, অথচ এ খেলাটাই আমি কতই না ভালোবাসি। যেদিন আমি পাকিস্তানের হয়ে খেলার সুযোগ পেলাম, সেই দিনটা ছিল আমার জীবনের সেরা দিন। আমি জার্সিটা পেয়েছিলাম ম্যাচের আগের দিন রাতে। মনে আছে, অনেকবার আমি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সেই জার্সি গায়ে নিজেকে দেখছিলাম। এমনকি ইচ্ছে হচ্ছিল রাতে জার্সিটা গায়ে দিয়ে ঘুমাই, কিন্তু সেটা নষ্ট করতে চাইনি।' একই সঙ্গে সবচেয়ে কম বয়সে টেস্টে ৫০ উইকেট নেওয়া এ বাঁহাতি ফাস্ট বোলার জানিয়েছেন, চাপের মুখেই নো বল করতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি, 'আমি টাকার জন্য নো বল করিনি, আমার নির্বুদ্ধিতার জন্যই এমন ফাঁদে পা দিয়েছিলাম। আমি ভয় পেয়েছিলাম, তাই ভুল পথে পা বাড়িয়েছিলাম।' অনুতপ্ত আমির তাই জানিয়েছেন, 'আমার কৃতকর্মের জন্য সবার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী, আমি আদালতের রায় সম্মানের সঙ্গে মেনে নিচ্ছি।'
আমিরের একসময়ের সতীর্থ শহীদ আফ্রিদি ও জুলকারনাইন হায়দার অবশ্য পুরো ব্যাপারটা মোটেই ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখছেন না। প্রাণের ভয়ে সিরিজের মাঝপথেই হোটেল ছেড়ে পালিয়ে ইংল্যান্ডে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করা জুলকারনাইন হায়দার এখন জোরালো কণ্ঠেই বলছেন, 'অনেকেই আমার কথা হাসি-ঠাট্টায় উড়িয়ে দিয়েছিল। আজ আমি মনে করি, আমার কথাটাই সত্যি হয়েছে। ক্রিকেটে সত্যই দুর্নীতি ঢুকে পড়েছে, তাউ জুরিদের রায়ে আমি অবাক হইনি।' অন্যদিকে আফ্রিদি বলছেন, 'আমাদের দেশ, আমাদের ক্রিকেট কলঙ্কিত হয়েছে। এটা সবার জন্য একটা শিক্ষা।' ওয়েবসাইট

No comments

Powered by Blogger.