শীতার্ত মানুষের জন্য কিছু করার আছে by শাহাদাত আনসারী

হেমন্ত শেষে ষড়ঋতুর দেশে আবারো ফিরে এসেছে শীত। চার পাশের পরিবেশ কাঁপতে শুরু করেছে। দিন যত যাচ্ছে শীতের প্রকোপ তত বাড়ছে।
এবার একটু আগেই শীত এসেছে। ঋতুর আবর্তনে শীতে আসবে এটাই স্বাভাবিক। তবে এ শীতকে মোকাবেলা করেই আমাদের বেঁচে থাকতে হবে। অতীতে আমরা এমন করেছি। শীতের শুরুতেই গরম কাপড় কেনার ধুম পড়ে যায়। কেউ নতুন কেউ বা আবার পুরনো কাপড় কিনে শীতের বিপরীতে নিজেকে প্রস্তুত করে সামর্থ্য অনুযায়ী। শীতে কর্মজীবী মনুষ খুব কষ্ট পায়। কুয়াশা আর ঠাণ্ডার মধ্যেও জীবিকার সন্ধানে সব কিছু অতিক্রম করে তাদের কাজে নামতে হয়। কুয়াশার চাদরে যখন প্রকৃতি ঢেকে থাকে, তখন অন্যদের মতো তাদেরও ইচ্ছে করে লেপের নিচে শুয়ে থাকতে। কিন্তু পেটে দু’মুঠো ভাত দেয়ার জন্য এটা করতে পারে না। এক দিন কাজে না গেলে বা কাজ না পেলে তাদের পরিবারে খাবারের জোগাড় হয় না। প্রতিদিন কাজ করে বাড়িতে ফিরলেই কেবল পরিবারের জন্য দু’মুঠো খাবার জোটে। কিন্তু এত শীতেও তারা বাইরে বের হবে এটা কল্পনা করতে কষ্ট হয়।

শীতকালীন রোগ এখন ব্যাপক হারে বেড়েছে। নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগের আগমনও ঘটেছে শীতের সাথে সাথে। হাসপাতালে গেলে এখন বৃদ্ধ আর শিশু রোগীই বেশি পাওয়া যায়। সব মিলে রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

বয়স্করদের তুলনায় শিশু ও বৃদ্ধের রোগ প্রতিরোধ মতা অনেক কম। আমাদের শিশুরা এবার ঠাণ্ডায় খুব কষ্ট পাচ্ছে। শীতের মধ্যে বস্তির শিশুরাও ভালো নেই। যারা অন্যান্য সময় দৌড় দিয়ে ঘুরে বেড়ায়। খালি গায়ে বিভিন্ন কাজে সর্বদা ব্যস্ত থাকে, তারা এখন শীতের কাছে হার মেনেছে। তাদের নেই কোনো গরম কাপড়। আবার কারো একটা জামাও জোটে না। তাই বস্তির মধ্যেই তাদের থাকতে হচ্ছে। এখানে প্রায় অলস দিন কাটাতে হচ্ছে তাদের। এসব শিশুর জন্য কেউ তেমন কিছু চিন্তা করে না। যদিও কোনো কোনো সংগঠন, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান শীতবস্ত্র বিতরণ করে থাকে। শীত আসার পরই কেবল এরা এগুলো করে থাকে। আবার এতে খুব অল্পসংখ্যক শীতার্তকে বস্ত্র সরবরাহ করা হয়। বেশির ভাগ শিশুই শীতের কাপড় থেকে বঞ্চিত হয়।

পৃথিবীতে মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে প্রাণিকুলের শ্রেষ্ঠ করে। কিন্তু এ মানুষ যখন নিজের জন্য সব কিছু করতে ব্যস্ত থাকে এবং প্রতিবেশীর জন্য কিছুই করে না, তখনই সে তার শ্রেষ্ঠত্ব হারায়। আমাদের সমাজে অনেক মানুষ আছে যারা বছর বছর নতুন নতুন শীতের কাপড় কিনেন। কিন্তু পাশের বাড়ির কোনো বৃদ্ধ বা শিশু শীতে থরথর করে কাঁপছে, এটা তার বোধ হয় না। তার বাড়িতে যখন পোষা কুকুরটা কম্বল, সোয়েটার পরে থাকে তখন গরিব প্রতিবেশীর ভাগ্যে একটা ছেঁড়া চাদর জোটে না, এটা তিনি কখনো চিন্তা করেন না। এসব মানুষ দিয়ে অতীতে কিছু হয়নি এখনো তেমন কিছু হবে না। তবে তাদের সচেতন করলে আমাদের শীতার্ত বন্ধুরা কিছুটা উপকৃত হবে।

তীব্র শীতে যখন শিাপ্রতিষ্ঠানে শুরু হয় শীতের ছুটি তখন কর্মজীবী মানুষের কোনো ছুটি নেই। শিশুশ্রমিকেরাও কাটাতে পারে না কোনো ছুটি। অন্যান্য শিশুর মতো শীতে পায় না মায়ের আদর বা বাবার স্নেহ-ভালোবাসা। ঋতুর সাথে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের রুটিন পরিবর্তন করা হয়। কিন্তু প্রতিদিন যাদের শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে হয় তাদের অপরিবর্তিত রুটিনমাফিক চলতে হয়। এসব শ্রমজীবীর রুটিন শীতকালেও পরিবর্তন হয় না। অন্য ঋতুর মতো শীতেও তাদের কর্মেেত্র যেতে হয় এবং অন্য সময়ের মতো কাজ করতে হয়। যাদের কঠোর পরিশ্রম ও কাজের জন্য আমাদের দেশের এতটা উন্নতি তারা কেমনভাবে দিন অতিবাহিত করছে, তা হয়তো অনেকে ভেবেছেন। কিন্তু সরকারিভাবে যেমন ভাবা প্রয়োজন ছিল তা হচ্ছে না।

শীতের শুরু থেকেই একটা জিনিস খুব দেখা যায় আর তা হচ্ছে, বিভিন্ন জায়গায় শীতবস্ত্র বিতরণ। দেখা যায়, কোনো সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে একটা ব্যানার টাঙিয়ে কয়েকজন অতিথি এসে শীতার্তদের মধ্যে কম্বল, সোয়েটার কিংবা চাদর বিতরণ করছেন। সাথে সাথে সেটার ছবিও পত্রিকাতেও আসে। এটা খুব ভালো উদ্যোগ। কিছুটা হলেও শীতার্ত মানুষ স্বস্তি লাভ করে এমন গরম কাপড় পেয়ে। কিন্তু আমাদের দেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠান নাচ-গান, কনসার্ট কিংবা অযথা আপ্যায়নের নামে যে টাকা ব্যয় করে তার তুলনায় শীতবস্ত্রের পরিমাণ একেবারেই নগণ্য। পার্টির নামে আজ যখন সরকারি-বেসরকারি অফিসে ব্যয় করা হচ্ছে লাখ লাখ টাকা, ভ্রমণের নামেও কম না, তখন আমাদের দেশের শিশু ও বৃদ্ধরা পান্তাভাত খেয়ে হাড় কাঁপানো শীতে ঠক ঠক করে কাঁপছে। অনেক শিশু শীতে স্কুলে যেতে পারছে না। বৃদ্ধরা পারছে না বিছানা ছেড়ে উঠতে।

নিজস্ব উদ্যোগ ছাড়াও পত্রপত্রিকায় দেখা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন শীতবস্ত্র  কেনার  জন্য আর্থিক সহযোগিতা করছে। সরকারিভাবে অনেক সময় শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা কিংবা সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে এগুলো এসে থাকে। আবার কখনো সরকারদলীয় নেতাদের মাধ্যমে আসে। শীতে যে কাপড়গুলো শীতার্ত গরিব মানুষ পাবে বলে ধারণা করা হয় এ েেত্র ঘটে তার উল্টো। যাদেরকে কম্বল বিতরণ করতে দেয়া হয় তাদের মধ্যেই শুরু হয়ে যায় শীতবস্ত্র সংগ্রহ ও বিতরণের প্রতিযোগিতা। বাকি যা থাকে তা-ও আবার চলে যায় প্রভাবশালী নেতার আত্মীয়স্বজনের কাছে। আবার শীতবস্ত্র বিতরণে দলীয়করণও ল করা যায়। শীতবস্ত্র পাবে এমন যোগ্য ব্যক্তিকে বাদ রেখে দলীয় মানুষকে একটার পরিবর্তে তিনটা পর্যন্ত কম্বল দেয়া হয়।

যেকোনো বিপদ বা দুর্যোগ এলে আমাদের দায়িত্ব বেড়ে যায়। শীত এলেও এমন দায়িত্ববোধ নাড়া দেয়। এ সময় শীতার্তরা শুধু আমাদের দিকে চেয়ে থাকে। তাদের চেয়ে থাকা মুখে আমরা হাসি ফোটাতে পারি কেবল দু’মুঠো খাবার ও শীতবস্ত্র সরবরাহের মধ্য দিয়ে। তাদের সান্ত্ব—না দিতে পারি একটু সুন্দর ব্যবহার করে। পৃথিবীতে মানুষ কেবল মানুষের জন্য। একজনের দুর্যোগ-দুর্ভোগে অন্যজন এগিয়ে আসবে এটাই স্বাভাবিক। তাই আমাদেরও শীতার্তদের পাশে দাঁড়াতে হবে। যেসব শিশু বা বৃদ্ধ শীতে কাঁপছে তাদের পাশে আমরা দাঁড়াতে পারি। কেউ কম্বল কিনে আবার কেউ নিজের বাসায় ব্যবহৃত কোনো গরম কাপড় দিয়েও শীতার্ত দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারি। সাধ্যমতো আমরা যেন সর্বদা শীতার্ত মানুষের বিশেষ করে শিশুদের পাশে থাকি এটাই সবার প্রত্যাশা।

ansarisahadat4@gmail.com

style=’� . - a � �� inda;mso-hansi-font-family:SutonnyMJ;mso-bidi-language:BN’>১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসের ১৫ তারিখ অতি প্রত্যুষে, ঢাকা মহানগরীর ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার ৩২ নম্বর সড়কে নিজ বাসভবনে সশস্ত্র আততায়ীর গুলিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হয়েছিলেন। আততায়ীরা দলবদ্ধ ছিলেন। তৎকালীন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কিছু অফিসার এবং সেই অফিসারদের নেতৃত্বে সৈনিক, সেনাবাহিনীর চেইন অব কমান্ড ভঙ্গ করে, কার্যত সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, ঢাকা সেনানিবাস ত্যাগ করে, ধানমন্ডি আবাসিক এলাকায় গমন করে বঙ্গবন্ধুর বাসস্থান আক্রমণ করেন। আক্রমণ বলতে বুঝাচ্ছি যে, নিরাপত্তার নিয়ন্ত্রণ নেন। অতঃপর বঙ্গবন্ধু নিহত হন। আসলে কি বিদ্রোহ বা সরকার পরিবর্তনটি ওইটুকু কর্মকাণ্ডের মধ্যে সীমিত ছিল? উত্তর হচ্ছে, ছিল না। ১৫ আগস্ট দিনের বেলাতেই খোন্দকার মোশতাক আহমদ দেশের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন। ওই সময়ের বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর তিনজন প্রধানই তার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন। ওই সময়ের বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের চার ভাগের তিন ভাগ সদস্যই তার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন। তাদের মধ্য থেকেই নতুন করে সদস্য নিয়ে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়। খোন্দকার মোশতাক ছিলেন ১৯৭১ সালের প্রবাসী মুক্তিযুদ্ধ সরকারের অতি ুদ্র অবয়বের যে মন্ত্রিসভা, তারই একজন সদস্য। যেখানে মন্ত্রিসভার সদস্য সংখ্যায় ছয়জনের কম, সেই মন্ত্রিসভায় একজন সদস্য হওয়া প্রমাণ করে যে, খোন্দকার মোশতাক আওয়ামী লীগের অত্যন্ত আস্থাভাজন নেতা ছিলেন। ১৫ আগস্ট ১৯৭১ যেদিন বঙ্গবন্ধু নিহত হন, সেই সময়েও তিনি ক্যাবিনেটের একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ছিলেন। বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর, খোন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বেই তৎকালীন আওয়ামী লীগ বাংলাদেশ সরকার গঠন করে এবং সরকার পরিচালনা শুরু করে। খোন্দকার মোশতাক ভালো মানুষ ছিলেন কি ছিলেন না আমি সে মন্তব্য এখানে করব না। আমার মন্তব্য হচ্ছে তিনি কেমন মানুষ ছিলেন সেটা ১৫ আগস্টের পূর্বেকার আওয়ামী লীগ কি জানত, না জানত না? আর ১৫ আগস্টের পরের আওয়ামী লীগ তো জেনেশুনেই নেতা মেনে নিয়েছিলেন। ২০১২ এবং ২০১৩ সালের সন্ধিণে প্রশ্ন জাগে, আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে সব জ্যেষ্ঠ নেতাকে কি বাংলাদেশের নিরাপত্তা নিয়ে, জনগণের নিরাপত্তা নিয়ে, নেতাগণের নিরাপত্তা নিয়ে বিশ্বাস করা যায়?



১৯৮৬ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তার সামরিক সরকারকে রাজনৈতিক বৈধতা দেয়ার জন্য একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করেছিলেন। ১৯৮৬ মানে, আজ থেকে মাত্র সাতাশ বছর আগের কথা। এই কলামের প্রায় অর্ধেকের বেশি পাঠকের মানসপটে ১৯৮৬-এর স্মৃতি এখনো থাকার কথা। সেই সময় বাংলাদেশের পুরো রাজনৈতিক অঙ্গন জেনারেল এরশাদের বিরোধিতা করছিল। বিরোধিতাকারীরা একাধিক শিবিরে ছিলেন কিন্তু প্রধান দু’টি শিবির ছিল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন এবং বিএনপির নেতৃত্বাধীন। তৎকালীন আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির মধ্যে সে সময় একটি রাজনৈতিক সমঝোতা হয়েছিল এই মর্মে যে, জেনারেল এরশাদ কর্তৃক পরিকল্পিত ও বাস্তবায়নাধীন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বা বিএনপি কেউই অংশ নেবে না। যারাই নির্বাচনে অংশ নেবে তারা জাতীয় বেঈমান হিসেবে চিহ্নিত হবে। এই সমঝোতাটি প্রকাশ্যে ঘোষিত বা প্রচারিত হয়। আশ্চর্যের বিষয় হলো এই যে, প্রকাশ্যে ঘোষিত বা প্রচারিত হওয়ার আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে, তৎকালীন আওয়ামী লীগ তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ঘোষণা দেয়। অতঃপর এরা নির্বাচনে বাস্তবেই অংশ নিয়ে এবং সংসদ পরিচালনায় সহায়তা করে। সামরিক শাসন জারি এবং সংশ্লিষ্ট সব কর্মকাণ্ডকে সংসদীয় বৈধতা দেয়। সরকারকে স্থিতিশীল হওয়ার সুযোগ দেয়। অতএব এটা বললে বেশি হবে না যে, খোন্দকার মোশতাক আহমদের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ যেমন বঙ্গবন্ধু হত্যা-পরবর্তী পরিবেশকে বৈধতা দিয়েছিল, তেমনি ১৯৮৬ সালের আওয়ামী লীগ সামরিক শাসন জারি পরবর্তী পরিবেশকে বৈধতা দিয়েছিল।

ওয়ান ইলেভেনের সরকার থাকা অবস্থায় বা সরকার চলে যাওয়ার অব্যবহিত পরে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ওয়ান ইলেভেনের সরকারকে বৈধতা প্রদান প্রসঙ্গে কী বলেছেন, স্থানাভাবে সেটি আজকের কলামে আলোচনা করছি না।

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি

www.kallyan-ibrahim.com

No comments

Powered by Blogger.