৫০ শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা by শংকর কুমার দে

 দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে শীর্ষ ৫০ যুদ্ধাপরাধীর। বিমানবন্দর, স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন কর্তৃক্ষের কাছে তাদের তালিকা পাঠানো হয়েছে। পাকহানাদার বাহিনীর দোসর আলবদর,
রাজাকার, আলশামস ও শান্তিবাহিনীর সদস্য ছিল তারা। হত্যা, লুণ্ঠন, অগি্নসংযোগ, ধর্ষণসহ গুরুতর যুদ্ধাপরাধীর অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে। আগামী মার্চ মাসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করার লৰ্যে শীর্ষ ৫০ যুদ্ধাপরাধী যাতে দেশ থেকে পালাতে না পারে সেই জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও গোয়েন্দা সংস্থাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের ওপর নজরদারী করা শুরু করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। এ খবর সংশিস্নষ্ট সূত্রের।
যুদ্ধাপরাধীর তালিকাভুক্ত হিসেবে যাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে তাদের মধ্যে আছেন জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযম, বর্তমান আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী, কামরম্নজ্জামান, আবদুল কাদের মোলস্না অন্যতম। তালিকায় আছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী (সাকা চৌধুরী) এমপি, আবদুল আলীম প্রমুখ। এ ছাড়াও বিভিন্ন জেলার বিএনপি-জামায়াতের নেতা আছে যারা স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বিরোধিতা করে মুক্তিবাহিনী ও স্বাধীনতা যুদ্ধের পৰের মানুষজনকে হত্যা করার জন্য হুকুম দিয়েছে।
১৯৭৩ সালে আলবদর, আলশামস, রাজাকার, শান্তিবাহিনীসহ স্বাধীনতাবিরোধীদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়। এ ছাড়াও ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি, ঘাতক দালাল নিমর্ূল কমিটি, সেক্টর কমান্ডরস ফোরাম গবেষণা ও অনুসন্ধান করে দেশের যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা তৈরি করেছে। তাদের তালিকা থেকে যাচাইবাছাই করে ও খোঁজখবর নিয়ে শীর্ষ ৫০ যুদ্ধাপরাধীর তালিকা তৈরি করেছে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা। আগামী মার্চ মাসে শীর্ষ ৫০ যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে গুরম্নতর অপরাধ বিবেচনায় এনে পর্যায়ক্রমে শীর্ষ পর্যায়ের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরম্ন করা হবে। এ জন্য হাইকোর্ট ভবনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার জন্য আদালত কৰ স্থাপনের কাজ দ্রম্নততার সঙ্গে সম্পন্ন করার প্রক্রিয়া চলছে।
আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, সরকার অভিযুক্ত যে কোন ব্যক্তির দেশত্যাগে বাধা দিতে পারে। যেসব ব্যক্তির বিরম্নদ্ধে দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে তারা কে কি অপরাধ করেছে তার তথ্য নিশ্চয়ই সরকারের কাছে রয়েছে। নারী ও মেয়েশিশুর ওপর নির্যাতন বন্ধে বর্তমান আইনী কাঠামোর মূল্যায়ন শীর্ষক এক সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ কথা বলেছেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য হাইকোর্ট ভবনের কৰে আদালত স্থাপনের কাজ এগিয়ে চলেছে বলে তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এডভোকেট সাহারা খাতুন যুদ্ধাপরাধীরা যাতে দেশ থেকে পালাতে না পারে সেই জন্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাদের বিচারের প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেছে সরকার। মিরপুর স্টাফ কলেজে এ্যাপস্নাইড ক্রিমিনোলজি এ্যান্ড পুলিশ ম্যানেজমেন্ট শীর্ষক একটি কোর্সের অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের তিনি একথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু একই অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের বলেন, যুদ্ধাপরাধীরা পালাতে চাইলেও পালাতে দেয়া হবে না। পালাবার কোন পথ খোলা নেই। কেউ পালিয়ে গেলেও তাদের ফিরিয়ে এনে বিচার করা হবে।
যুদ্ধাপরাধীদের তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামী সাবেক আমির গোলাম আযম মুক্তিযুদ্ধকালীন ছিল রাজাকার বাহিনীর প্রধান উদ্যোক্তা। জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী মুক্তিযুদ্ধকালীন জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতা জামালপুরে আলবদর বাহিনীর উদ্যোক্তা ও সংগঠক ছিল। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ মুক্তিযুদ্ধের সময় ছিল জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন নিখিল পাকিসত্মান ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি ও আলবদর বাহিনীর প্রধান উদ্যোক্তা।
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারম্নজ্জামান ও জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মাওলানা একেএম ইউসুফ মুক্তিযুদ্ধকালীন খুলনার রাজাকার বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা ও উদ্যোক্তা ছিল। মুসলিম লীগ নেতা এ্যাডভোকেট আয়েনউদ্দিন মুক্তিযুদ্ধকালীন রাজশাহীর কেন্দ্রীয় শানত্মি কমিটির চেয়ারম্যান শানত্মি কমিটির নেতা ছিল।
যুদ্ধাপরাধীর তালিকায় আরও যাদের নাম আছে তাদের মধ্যে বিএনপি নেতা আবদুল আলীম ছিল জয়পুরহাটের শানত্মি কমিটির চেয়ারম্যান। জামায়াতের মজলিসে শুরার সদস্য দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য চট্টগ্রামের সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী (সাকা চৌধুরী) এমপি, পাবনার জামায়াতের সাবেক এমপি মাওলানা আবদুস সোবহান, কুমিলস্নার এবিএম খালেক মজুমদার প্রমুখ। যেসব যুদ্ধাপরাধী মারা গেছে তাদের নাম বিচারের তালিকা থেকে বাদ দেয়া হচ্ছে।
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক গত বছর মার্চ মাসে বিদেশে যেতে চাইলে তাকে বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন কর্তৃপৰ তাকে ফেরত দেয়। পরে তিনি উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন করে আদালতের রায়ে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি পান। জামায়াতের মজলিসের শুরার সদস্য মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী গত বছর এপ্রিল মাসে বিদেশে যেতে চাইলে বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন কর্তৃপৰ তাকে বাধা দেয়। পরে তিনি উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন করে আদালতের নির্দেশে বিদেশে যাওযার অনুমতি পান।
সরকারের নীতি নির্ধারক মহলে আলাপ করা হলে তারা জানান, বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার কথা উলেস্নখ করা হয়েছে। নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর। যুদ্ধাপরাধীরা দেশী-বিদেশী বিভিন্ন মহলের সহযোগিতায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে বাধা সৃষ্টির জন্য নানাভাবে প্রভাব বিসত্মারের চেষ্টা করে যাচ্ছে। শত বাধা বিপত্তি সত্ত্বেও সরকার নির্বাচনী ওয়াদা অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরম্ন করতে যাচ্ছে আগামী মার্চ মাসেই।
গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তাঁরা জানান, যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা তৈরি করে বিমানবন্দর ও স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন কর্তর্ৃপৰের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। তারা যাতে দেশ থেকে পালাতে না পারে সেই জন্য সরকারের কাছ থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের অনেকেই দেশ থেকে পালানোর চেষ্টা করছে বলে খবর পাওয়া গেছে। যুদ্ধাপরাধীদের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি করা হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.