তিন কন্যার অভিশপ্ত জননী!

নারী আন্দোলন, নারী অধিকার এসব শব্দ বহুল উচ্চারিত কিন্তু ক্রমশ যেন তা অর্থহীন হয়ে উঠছে। যে দেশের রাজনীতিতে-সাহিত্যে-শিল্পকলায়-বিজ্ঞানে-চিকিৎসা সেবায়-প্রশাসনে নারীর অবদান অনস্বীকার্য সে দেশেই তাদের কারও কারও জীবনে নেমে আসে করম্নণ পরিণতি।
কটূক্তি, অশস্নীল মন্তব্য, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, এ্যাসিড ছুড়ে শরীর ঝলসে দেয়া, ধর্ষণ এবং হত্যা প্রভৃতি যাবতীয় পাশবিকতার শিকার হওয়া অনেক নারীর জীবনে বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকে শৈশবকাল থেকে আমৃতু্য সইতে হয় নির্মম লাঞ্ছনা, যতদিন বেঁচে থাকে ততদিন মানসিক পঙ্গুত্বকে অাঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকতে হয়। তাদের বিকশিত হতে দেয়া হয় না। অথচ জাতিসংঘের সনদে নারীর অধিকার নিয়ে কথা লিখিত রয়েছে, আলোচনাও হয়। আমাদের সংবিধানেও নারীপুরম্নষের সমানাধিকারের কথা বলা আছে। বিশ্ব নারী দিবসও পালিত হয়। আমাদের দেশে নারী বিষয়ক মন্ত্রণালয় আছে। কিন্তু সাধারণ নারীরা সেই অধিকার ভোগ করতে পারেন না।
গত ২৩ ফেব্রম্নয়ারি পত্রিকায় প্রকাশিত হয় দুটো সংবাদ_ মন্ত্রিসভায় পারিবারিক সহিংসতা আইন অনুমোদন, তৃতীয়বারও মেয়ে হওয়ায় মরতে হলো সাহেরাকে! কী এক নিষ্ঠুর বিদ্রূপ সচেতন মানুষকে তাড়িত করে বেড়ায়, বিবেক রক্তাক্ত হয়ে ওঠে। আইন অনুযায়ী কোন নারী পরিবারের সদস্যদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হলে আদালত তাকে সুরৰার আদেশ দেবে। আদালতের দেয়া এ সুরৰার আদেশ লঙ্ঘন করলে অনুর্ধ ছ' মাস কারাদ- অথবা দশ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দ-ের ব্যবস্থা থাকছে এই আইনে। সুরৰা আদেশ দ্বিতীয়বার লঙ্ঘন করলে অনুর্ধ এক বছর কারাদ- অথবা বিশ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দ-ে দ-িত করার বিধান রয়েছে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় আইনটির বিষয়ে উদ্যোগ নেয়। এ উদ্যোগকে অবশ্যই সবাই স্বাগত জানাবে। কিন্তু কিশোরগঞ্জের মেয়ে সাহেরা যে নরসিংদীর জয়নালের স্ত্রী হয়ে তিন কন্যা সনত্মান জন্ম দেয়ার 'অপরাধে' মরতে হলো তার ৰেত্রে কী হবে?
সনত্মান জন্ম দেয়ার ৰেত্রে মা সাহেরার কোন হাত ছিল কী না বিষয়টি তার স্বামী ভেবে দেখেনি। এদেশের অনেক স্বামী তা ভেবেও দেখে না, দেখার তাগিদ কিংবা মনোভাব তাদের নেই। সমাজ ও শিৰা ব্যবস্থা এবং সরকারের উদ্যোগ এত বেশি মলিন যে, নারী জাগরণের পথিকৃৎ বেগম রোকেয়ার বক্তব্য নারীদের হাতে পেঁৗছতে পারে না। কে বলবে এদেশে জন্মেছিলেন সরোজিনী নাইডু, প্রীতিলতা, কবি সুফিয়া কামাল প্রমুখ মহীয়সী নারী। বর্তমান সরকারে প্রধানমন্ত্রী একজন নারী এবং সংসদে বিরোধীদলীয় নেত্রীও নারী। সেই সরকারের আমলে কন্যা সনত্মানের জন্মদাত্রী সাহেরা খাতুনের নির্মম মৃতু্যর সুষ্ঠু তদনত্ম সাপেৰে আইনানুগ বিচারের দাবি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের। তাঁরা চান, এহেন মৃতু্য যেন বন্ধ হয়। কন্যা সনত্মান মানব সম্প্রদায়েরই অন্যতম অংশ।

No comments

Powered by Blogger.