অভিমত- কোথায় দাঁড়িয়ে ভাবব যে, আমরা নিরাপদ?

গত ১৭ ডিসেম্বর ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা জানতে পারলাম, ঢাকার মগবাজারের একট ফ্যাটে অভিযান চালিয়ে পুলিশ ইসলামী ছাত্রীসংস্থার ২০ কর্মীকে আটক করেছে।
তারা সবাই দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থী এবং ধর্মভীরু মুসলিম নারী। মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা জানতে পারলাম যে, তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। এতে গোটা বিষয়টিকে প্রশাসনের বাড়াবাড়ি ছাড়া আর কিছুই মনে হলো না। আমরা ভেবেছিলাম, শিগগিরই আদালত তাদের সবাইকে জামিন দিয়ে এই অনধিকার চর্চার প্রতিকার করবেন। কিন্তু সবাই বিস্মিত হলো যে, পরে তাদের বিরুদ্ধে এমনকি রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হলো এবং আদালত একজন অন্তঃসত্ত্বা ব্যতীত সবাইকে দুই দিনের রিমান্ড পর্যন্ত মঞ্জুর করলেন। রিমান্ডে নিয়ে তাদের শারীরিক, মানসিক নির্যাতন করা হলো। পুলিশে যারা চাকরি করেন, তারাও তো এ সমাজের মানুষ, তাদেরও মা-বোন আছেন। মায়ের জাতিকে সম্মান করতে হয়, এতটুকুও  কি তারা শেখেননি? কী লজ্জা!

২১ তারিখ শুনানিতে পুলিশ তাদের কাছ থেকে কথিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়ার দোহাই দিয়ে আবারো রিমান্ডের আবেদন জানায়। কিন্তু আদালত রিমান্ড নামঞ্জুর করলেও জামিনের আবেদন খারিজ করে দেন। এভাবে কেমন নজির স্থাপন করলেন আমরা বুঝতে পারলাম না। আইন-আদালতের মারপ্যাঁচ বুঝি না, কিন্তু আল্লাহ যে বুদ্ধি-বিবেক দিয়েছেন তা তো অকার্যকর হয়ে পড়েনি। মিডিয়ার মাধ্যমেই জনগণ জানতে পেরেছে, কিছু দিন আগেই এক শীর্ষ সন্ত্রাসীকে জামিন দেয়া হয়েছে; জামিন পাওয়ার পর সে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে যায়। অথচ তার মুক্তিলাভে সাধারণ মানুষেরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

আমাদের প্রশ্ন হলো, ছাত্রীসংস্থার যে কর্মীদের জামিন দেয়া হলো না এমনকি একজন অন্তঃসত্ত্বাকেও তারা কি সন্ত্রাসী বা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত? তারা কি সংশ্লিষ্ট শিক্ষাঙ্গনে অরাজকতা সৃষ্টি করেছিলেন? তারা কি কোনো আইন ভঙ্গ করেছিলেন বা আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছিলেন? তারা কি পুলিশকে হামলায় টার্গেট করে ছিলেন।

মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা যা জানতে পেরেছি, তাতে এসব বিষয়ে তাদের অবস্থান পরিষ্কার। তাদের ব্যাপারে এসব বিষয়ে কোনো নেতিবাচক বক্তব্য কারো পক্ষ থেকে আসেনি। তবুও কেন গুরুতর অভিযোগ রাষ্ট্রদ্রোহ?

আমরা জানতে চাই, রাষ্ট্রদ্রোহ বলতে কী বোঝানো হচ্ছে? পর্দার সাথে চলা কি রাষ্ট্রদ্রোহ? সেদিন ওই ফ্যাট থেকে কুরআন শরীফ ইসলামি বই পাওয়া গেছে, সেটা কি রাষ্ট্রদ্রোহ? ইসলামের অনুশাসন মেনে চলা এবং এ জন্য অন্যকে উৎসাহিত করা কি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা? অশ্লীলতার মহামারীর যুগে শালীনভাবে চলা কি অপরাধ? আর এজন্য মানবিক কারণেও অন্তঃসত্ত্বা জামিন পাবে না? শিক্ষাজীবন ব্যাহত করে শিক্ষার্থীদের জেলে আটকে রাখা হবে কেন? আমরাও পর্দা করি, কুরআন পড়ি; এ জন্য আমরাও কি কারো রোষানলে পড়ে যাবো?

এসব দেখেও মানবাধিকার কমিশন, নারীবাদীরা নীরব কেন? তাদের কাছে কি এসবের জবাব আছে? না থাকলে দর্শকের ভূমিকায় কেন? তারা কি তবে কোনো বিশেষ মতাদর্শ, দল ও গোষ্ঠীর জন্য কাজ করেন? তাহলে তো তাদের পরিচয় থেকে ‘মানবাধিকার’ শব্দটা মুছে ফেলা দরকার। কোথায় দাঁড়িয়ে ভাবব যে, আমরা নিরাপদ? বর্তমান পরিস্থিতিতেও মানবতাবাদী বিবেকবান মানুষেরা চুপ করে থাকলে, তা হবে চরম অনৈতিক, অন্যায়।

প্রতিবাদক্রমে

পুণ্যভূমি সিলেটের সাধারণ ছাত্রীরা

No comments

Powered by Blogger.