ইসলামী সন্ত্রাসের আরেক স্বর্গরাজ্য সোমালিয়া by এনামুল হক

নাইন ইলেভেনের ঘটনার পর হাম্মামী মনে করেন যে ইসলাম সম্পর্কে তার জ্ঞান পর্যাপ্ত নয়। তাই তিনি আরও গভীরভাবে এ বিষয়ে পড়াশোনায় আত্মনিয়োগ করেন এবং অচিরেই শহরে নবাগত ইসলাম ধর্ম প্রচারক ৩৫ বছর বয়স্ক টনি সালভেট সিলভেস্টারের প্রভাবে পড়েন।
তিনি তখন আমেরিকান সালাকি আন্দোলনের এক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। আরবীতে সালাক শব্দের অর্থ পূর্বপুরুষ। এই আন্দোলনের অনুসারীরা ইসলামের মৌলিক চেহারায় ফিরে যাওয়ার পপাতী। সেজন্য তারা ইসলাম ধর্মের প্রতিষ্ঠাতাদের বিশেষত রসুল (দ.) তার সমকালীন ও মৃত্যুপরবর্থী দুই প্রজন্মে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের জীবন ও কর্মানুশীলন অনুসরণের চেষ্টা করে থাকে। সালাকীরা অনেক সময় সেই ধরনের পোশাক ও স্যান্ডেল ব্যবহার করে থাকে, যা সপ্তদশ শতাব্দীর আরব দেশের মুসলমানরা ব্যবহার করত বলে ধারণা করা হয়।
সিলভেস্টারের সংস্পর্শে এসে হাম্মামী সালাকি ভাবধারায় পুরোপুরি প্রভাবিত হন। এ সময় তিনি ইসলামী জঙ্গীবাদের নিন্দা করতে শুরম্ন করেন, যা এক সময় তিনি সমর্থন করতেন। এ সময় কঠোর ইসলামী বিধান মেনে চলতেন তিনি। মেয়েদের দিকে তাকাতেন না, মিউজিক শুনতেন না। ছবি তুলতে দিতেন না বা মক্কার দিকে পিছন ফিরে ঘুমাতেন না। সালাকিদের এই দলটিতে হাম্মামীর মতো অনেকেই ছিল। কিন্তু তার মতো এত গোঁড়া কেউ ছিল না। হাম্মামী তখন কলেজে কম্পিউটারের ওপর পড়াশোনা করছিলেন। কিন্তু ২০০২ সালের ডিসেম্বরে তিনি পড়াশোনা ছেড়ে দেন এই বলে যে, মহিলাদের সংম্পর্শে থাকা তার প েসম্ভব নয়। জীবিকা অর্জনের জন্য তিনি নানা ধরনের কায়িক কাজ করতে থাকেন। পরে তিনি কানাডার টরন্টোতে গিয়ে বিভিন্ন মসজিদে ঘুরে বেড়াতে থাকেন। এ সময় তিনি সমকালীন রাজনীতিকে পার্থিব জগতের ব্যাপার বলে তা থেকে দূরে সরে থাকতেন। একদিন তিনি ও বন্ধু কালভি হাউজ এক ইসলামী বইয়ের দোকানে যান। দোকানের মালিক এক আফগানের সংস্পর্শে এসে তিনি ইরাকে মার্কিন হামলা, দখলদারি, সৈন্যদের অত্যাচার ও এসবের বিরম্নদ্ধে ইরাকীদের প্রতিরোধ আন্দোলনের অনেক কিছু জানতে পারেন। পরবতর্ী কয়েক মাস তিনি ইরাক ও আফগানিসত্মানের ঘটনাবলী নিয়ে নেশার মতো ব্যাপৃত থাকেন। তিনি মনে করতে থাকেন যে নাইন ইলেভেনের ঘটনা আসলে মুসলমানদের বিরম্নদ্ধে একটা ষড়যন্ত্র। তিনি সালাকিদের অহিংস ভূমিকা নিয়ে নতুন করে ভাবতে থাকেন। আমেরিকানরা যেখানে দেশে-বিদেশে মুসলমান ভাইদের হত্যা করছে সেটা মেনে নেয়া হাম্মামীর জন্য উত্তরোত্তর কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তিনি ইন্টারনেটে পথের সন্ধান করতে থাকেন। অবশেষে কিংবদনত্মি জিহাদী পুরম্নষ আমীর খানত্মাবের জীবনের উপর এক প্রামাণ্য কাহিনী পেয়ে যান। এক সম্ভাবনাময় সৌদি ছাত্র চেঁচনিয়ায় মুসলমানদের স্বার্থ রায় কিভাবে জীবন দিয়েছিল এতে ছিল তার বিবরণ। সেই জীবনী হাম্মামীর পথের দিশা হিসেবে কাজ করে। তিনি জিহাদ নিয়ে প্রচুর পড়াশোনা ও খোঁজখবর করেন। কিছুদিনের জন্য মিসর সফরে যান। কিন্তু মিসর তার মনে রেখাপাত করতে পারেনি। অবশেষে সোমালিয়ার কথা তার মনে হয়। তিনি ঠিক করলেন সোমালিয়ায় জিহাদে শরিক হতে পারলে সত্যিকার অর্থে ইসলামের জন্য কিছু করা হবে। অনেক দিক চিনত্মা করে মালদোনাদো নামে এক বন্ধুর সঙ্গে গোপনে তিনি সোমালিয়া যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। অবশেষে ২০০৬ সালের ৬ নবেম্বর ভোরে মিসর থেকে হাম্মামী সোমালিয়ায় পাড়ি জমান। মিসরে তার কাছে বেড়াতে আসা মায়ের গালে চুমু দিয়ে হাম্মামী বলেন, চাকরির সন্ধানে তিনি কিছুদিনের জন্য দুবাই যাচ্ছেন। সেই থেকে তিনি সোমালিয়ায় শাবাব বাহিনীতে মিশে আছেন। শাবাব বাহিনীর সঙ্গে তার যোগসূত্র কে ঘটাল তা আজও পরিষ্কার নয়। এমনিভাবে হাম্মামীর মতো সেখানে আরও আছেন সাদিও মোহাম্মদ আবদিনে, দানিয়েল মালদোনাদো, জোসেফ স্টুয়ার্ট এবং এমনি অনেক আমেরিকান, যারা ইরাক ও আফগানিসত্মানে মুসলিমবিদ্বেষী আমেরিকার হামলা ও দখলদারিত্ব প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে সোমালিয়ার জিহাদে ঝাঁপিয়ে পড়েছে।
সূত্র : নিউইয়র্ক টাইমস অনলাইন/ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

No comments

Powered by Blogger.