পাহাড়ে যা ঘটল এর থেকে পরিত্রাণের একমাত্র পথ ॥ বেসামরিক প্রশাসন শক্তিশালী করা- স্বদেশ রায়

পার্বত্য চট্টগ্রামে এমন একটা ঘটনা যে ঘটবে এটা অনেকের ধারণায় ছিল। যাঁরা দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি নিয়ে চিনত্মা করেন, বিশ্লেষণ করেন তাঁরা এটা নিয়ে সজাগ ছিলেন।
হয়ত সরকারও সজাগ ছিল। কিন্তু সরকারের ব্যর্থতা হলো, তারা এড়াতে পারেনি। কেন এড়াতে পারেনি সেটা সরকার বিচার বিশ্লেষণ করবে। হয়ত সংসদে আলোচনা হবে। সেখান থেকেও অনেক কিছু বের হয়ে আসবে। তবে সরকারের আরও সজাগ থাকা উচিত ছিল। কারণ এই সরকারকে মনে রাখতে হবে, এবার নির্বাচনে তারা যে রাজনৈতিক কর্মসূচী নিয়ে বিজয়ী হয়েছে, তারা একের পর এক দেশের যে জঞ্জাল দূর করে যাচ্ছে, তাতে তাদের পথ মোটেই স্বচ্ছন্দ হবার নয়। বরং এক সময়ে গ্রামের তরম্নণীদের বয়স্করা যে উপদেশ দিতেন এই সরকারের জন্যও সেটা সত্য যে, 'মেয়ে তোমার পায়ে পায়ে শত্রম্ন। তোমাকে বুঝে পা ফেলতে হবে'। পার্বত্য এলাকায় বেসামরিক প্রশাসনের কতর্ৃত্ব জোরদার করার উদ্যোগ নিতেই হাইকোর্টে রিট হয়েছে। একটি চিহ্নিত গ্রম্নপ সেখানে টেবিলের দুই পাশেই। তাছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামে বেসামরিক প্রশাসন জোরদার করার বিরম্নদ্ধে দেশের অন্যতম প্রধান বিরোধী দল। এই অন্যতম প্রধান বিরোধী দলটি শুধু আজ পার্বত্য চট্টগ্রামের বেসামরিক কতর্ৃত্ব ও রাজনৈতিক কতর্ৃত্ব প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করছে না, তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের শানত্মি চুক্তিরও প্রকাশ্যে বিরোধিতা করেছিল। তারা শানত্মি চুক্তির বিরম্নদ্ধে কর্মসূচী নিয়েছিল।
কোন রাজনৈতিক দল জনসমর্থন বা ভোটের আশায় এ ধরনের গণবিরোধী কর্মসূচী কখনই নেয় না। কারণ যারা নির্বাচন করে, যারা মানুষের সমর্থন নেয়, তারা সকলেই জানে দেশের কোন শানত্মি প্রক্রিয়ার বিরম্নদ্ধে কোন রাজনৈতিক দল দাঁড়ালে ওই রাজনৈতিক দল বাসত্মবে জনসমর্থন হারায়। কারণ দেশের মানুষ সব সময়ই শানত্মির পৰে থাকে। তাছাড়া ওই রাজনৈতিক দল যে শুধু জনসমর্থন হারায় তা নয়, তারা আনত্মর্জাতিক সমর্থনও হারায়। সারা বিশ্বের গণতান্ত্রিক ও মানবাধিকারের পৰের শক্তি তাদের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে। এত ৰতির মুখে দাঁড়িয়ে এসব তথাকথিত রাজনৈতিক শক্তি কেন পার্বত্য চট্টগ্রামের শানত্মি চুক্তির বিরোধিতা করেছিল? কেন তারা শানত্মি প্রক্রিয়ার বিরম্নদ্ধে কর্মসূচী দিয়েছিল? কেন দিয়েছিল তার সামগ্রিক কারণ হয়ত কোন একদিন ইরফান হাবিব মানের গবেষক ঐতিহাসিক খুঁজে বের করবেন। তবে এসব তথাকথিত রাজনৈতিক শক্তির চরিত্র ও জন্মের উৎস বিশেস্নষণ করলে এটা স্পষ্ট হয় যে, এমন কিছু গোষ্ঠীস্বার্থের কাছে এরা বাঁধা আছে যে, তারা রাজনৈতিক স্বার্থ বাদ দিয়ে, জনগণের স্বার্থ বাদ দিয়ে গোষ্ঠীস্বার্থের কাজে নিজেদের ব্যবহার করছে। এক সময়ের অশানত্ম পার্বত্য চট্টগ্রাম ঘিরে এখানে বেশ কিছু গোষ্ঠীস্বার্থ জড়িয়ে গেছে। এছাড়া অশানত্ম হবার আগেও পার্বত্য চট্টগ্রাম অনেক ধরনের গোষ্ঠীস্বার্থ হাসিলের জন্যে ব্যবহার হতো। আবার অশানত্ম হবার পরেও এখানে অনেক ধরনের গোষ্ঠীস্বার্থ এসে হাজির হয়েছে।
পার্বত্য শানত্মি চুক্তির মাধ্যমে একদিকে যেমন দেশের দীর্ঘদিনের এক বিচ্ছিন্নতা সংবিধানের আওতায় সমাধান হয়, তেমনি নানান গোষ্ঠীস্বার্থের হাত থেকে বের হয়ে আসার পথ করে দেয় দেশকে। গোষ্ঠীস্বার্থের হাত থেকে বের হয়ে আসার পথ করে দেয় ঠিকই। কিন্তু একদিনে কোন মতেই গোষ্ঠীস্বার্থের হাত থেকে বের হয়ে আসতে পারে না। এ জন্যে একটা সময়ের প্রয়োজন হয়। গোষ্ঠীস্বার্থের হাত থেকে বের করে আনতে হলে অনেক কাজ করতে হয়। যার জন্যে সব থেকে বড় প্রয়োজন কাজের ধারাবাহিকতা। পার্বত্য শানত্মি চুক্তির পরে কাজের যে ধারাবাহিকতা রৰার প্রয়োজন ছিল রাষ্ট্রের _সেটা রাখা হয়নি। সরকার পরিবর্তনের পরে সংবিধানবহির্ভূত পথে এই কাজের ধারাবাহিকতা বন্ধ করে দেয়া হয়। এবং ওই সরকারের পৰ থেকে সরাসরি না হলেও পরোৰভাবে এমন আচরণ করা হয় যেন পার্বত্য শানত্মি চু্ক্তিটিই অসাংবিধানিক। তাই তারা চুক্তি থেকে পিছনে চলে যেতে না পারলেও চুক্তির পরে যে শানত্মি প্রক্রিয়া এগিয়ে চলছিল সে ট্রেনের গতি থামিয়ে দেয়। লাইনের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনের বগিগুলো স্বাভাবিক পথে নষ্ট হতে থাকে। নষ্ট না হলেও তার অনেক কিছুই বিকল হয়, মরিচা পড়ে। বর্তমান সরকার যখন ৰমতায় এসেছে তখন তাদের করা শানত্মি চুক্তি মূলত জং ধরা খাপে রাখা একটি তলোয়ার।
এই খাপ থেকে মরিচা তুলে তবেই এ তরবারির ব্যবহার শুরম্ন করতে হবে। নইলে তরবারির গায়ে বার বার মরিচা লাগবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে বেসামরিক প্রশাসন জোরদার করতে, মানুষকে গণতন্ত্রের প্রকৃত স্বাদ দিতে হলে এই মরিচা পড়া খাপকে মনে রাখতে হবে। তারপরে যেমন করে জলীয় আবহাওয়া লোহার ওপর মরিচা যোগান দেয় তেমনি করে দেশের ভেতরের তথাকথিত রাজনৈতিক শক্তি মরিচার যোগান দিয়ে যাচ্ছে। এ সময়ে একটু অসতর্ক হলেই যে বাঘাইছড়ি ঘটনা ঘটতে পারে এ বিষয়ে সরকারের সতর্ক থাকা উচিত ছিল। সরকারের সেই সতর্কতার অভাবে বাঘাইছড়ি ঘটনা ঘটল। বাঘাইছড়ির এ মৃতু্যর কারণ এখনও খুঁজে বের করা হয়নি। প্রশাসনিক বা বিচার বিভাগীয় কোন তদনত্ম এখনও হয়নি। সেনাবাহিনীর লোকেরা, সেটেলার এবং পাহাড়ী_ এ তিন থেকে তিন ধরনের বক্তব্য আসছে। সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও কী সংসদে, কী সংসদের বাইরে কোথাও এখনও এ সম্পর্কে কোন বিবৃতি দেননি। এরই ভেতর দেশের প্রধান বিরোধী দলের মুখপাত্র মীর্জা ফখরম্নল ইসলাম দেশবাসীকে জানিয়ে দিলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনা প্রত্যাহারের ফলে সেখানে এ হত্যাকা- ঘটেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঘাইছড়িতে দুইজন মারা গেছে, পঞ্চাশজন আহত হয়েছে। এর আগে রাজশাহীতে শিবিরের হাতে একজন মারা যায়, ৫০ জনের বেশি আহত হয়। সে সময়ে কিন্তু মীর্জা ফখরম্নল ইসলাম বলেননি রাজশাহীতে সেনা উপস্থিতি না থাকায় এমনটি ঘটেছে। আর যদি তিনি বলতেন, সেটাও কি দেশের মানুষ সঠিক হিসেবে মেনে নিতেন? কারণ দেশের মানুষ যদি মেনে নেয় যে, দেশের শানত্মিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে হলে সেনাবাহিনীকে রাখতে হবে তাহলে দেশের মানুষ পৰানত্মরে সামরিক শাসনকেই মেনে নিল! দেশের মানুষ কি আসলে সামরিক শাসনকে মেনে নিতে চায়, না গণতন্ত্র চায়-তার প্রমাণ তো এ ভূখ-ে বার বার হয়েছে। ফখরম্নল ইসলাম বা তাঁর দল সেনা শাসনের মধ্য দিয়ে এসেছে ঠিকই। কিন্তু তারা তো এখন ১/১১-এর আধা সামরিক শাসনের বিরোধিতা করেন। তাই একদিকে ১/১১-এর আধা সামরিক শাসনের বিরোধিতা করবেন, আবার মনে করবেন দেশের অভ্যনত্মরীণ শানত্মিশৃঙ্খলার জন্যে সেনাবাহিনী অপরিহার্য_ এমন বৈপরীত্য কীভাবে প্রকাশ করা সম্ভব হয়? তাছাড়া এ ধরনের বক্তব্য অগণতান্ত্রিকও। অবশ্য ফখরম্নল ইসলামের দল পার্বত্য এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহারের বিরোধিতা করে আসছে। এ নিয়ে তাদের মিত্ররা হাইকোর্টে রিটও করেছে। তবে তাদের এই পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর শাসন বা নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার দাবির পরে অনেক প্রশ্ন দেখা দেয়। এর ভেতর প্রথম প্রশ্ন মানবাধিকারের। দেশের ৰুদ্রতম সংখ্যালঘু সমপ্রদায় বা নৃতাত্তি্বক গোষ্ঠীকে আপনি সামরিক প্রশাসনের বা সেনাবাহিনীর অধীনে রাখবেন এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা গণতন্ত্র ও বেসামরিক প্রশাসনের সুবিধা ভোগ করবে এটা কী মানবাধিকারের চরম অবমাননা নয়? এটা শুধু মানবাধিকার বিরোধীই নয়, সংবিধানের চরম অবমাননা। গণতন্ত্র বিরোধীও। কারণ একটি গণতান্ত্রিক শাসন, গণতান্ত্রিক সংবিধানসম্মত শাসন কখনই এটা অনুমোদন করে না যে, দেশের ৰুদ্রতম সংখ্যালঘু সমপ্রদায়কে সামরিক বাহিনী দিয়ে শাসন করা হবে! দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি যদি এমনটি মনে করেও থাকে তাহলে সাংবিধানিক রাজনীতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে তাদের এই অবস্থান থেকে সরে আসতে হবে দেশের স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে। দেশের এক অংশে সংবিধান সমুন্নত না রেখে আরেক অংশে দেশের সংবিধান সমুন্নত রাখা যাবে এ ধরনের উদ্ভট চিনত্মা কোন প্রকৃত রাজনৈতিক শক্তির করা উচিত নয়। বরং এই সত্যটি বিএনপিকে উপলব্ধি করতে হবে, পার্বত্য চট্টগ্রামে যে ঘটনা ঘটছে সেটা মূলত ওই এলাকায় বেসামরিক প্রশাসন সত্যি অর্থে প্রতিষ্ঠিত না হওয়ার কারণে। এ কথা সত্য, স্বাধীনতার পর থেকে আজ অবধি যাকে সত্যি অর্থে বেসামরিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়া বলে সেই বেসামরিক প্রশাসন পার্বত্য এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এমনকি পাকিসত্মান আমলেও সেটা ছিল না। যেমন এ বছর সাহিত্য প্রকাশ 'বনের কথা' নামে একজন সাবেক বন কর্মকর্তার আত্মজীবনী ছেপেছে। তিনি ঘটনা প্রসঙ্গে লিখেছেন, ষাটের দশকে বনের কাজে বনের ভেতর দিয়ে যাবার পথে কালো পোশাক পরা সশস্ত্র লোক দেখতে পান তিনি। তাদের দেখে তিনি একটু ভীত হলে পুরনো কর্মীরা বলেন, তিনি যেন ভয় না পান। ওরা মিজো গেরিলা। ওরা কিছু বলবে না। অর্থাৎ মিজো গেরিলাদের আশ্রয়স্থল ছিল ওই এলাকা। সত্যি অর্থে বেসামরিক প্রশাসন ও সংসদ দেশে শক্তিশালী থাকলে এভাবে গোপনে তারা থাকতে পারে না। তাদেরকে থাকতে হতো প্রকাশ্যে। যেমন আমাদের ৭১-এর গেলিরা মুক্তিযোদ্ধারা মাঝে মাঝে আশ্রয় নিতেন ভারতে। তবে সেটা প্রকাশ্যে। তাই সেই পাকিসত্মান আমল থেকে শুরম্ন করে স্বাধীনতার পরেও নানান সময়ে এমনি মিজো গেরিলাসহ অনেকের অভয়ারণ্য গড়ার মতো নানান কাজে ব্যবহৃত হয়েছে এই পার্বত্য এলাকা। ফার ইস্টার্ন ইকোনমি রিভিউয়ের রিপোর্টে বলা হয়েছিল এখানে লাদেনের সহযোগীরাও এসেছে।
লাদেন, মিজো গেরিলা বা উলফা যেই হোক সরকারের ভেতর থেকে বা সরকার সহযোগিতা না করলে তারা এভাবে প্রবেশ করতে পারে না। কিন্তু পাশাপাশি এটাও সত্য দেশে গণতন্ত্র আর বেসামরিক প্রশাসন থাকলে গোপনে কোন কিছুই করা সম্ভব হয় না। যেমন আমেরিকা গুয়ানতানামো বে'র কর্মকা-ও কিন্তু গোপনে করতে পারছে না। এ কারণে এটা সত্য যে, পার্বত্য চট্টগ্রামের যেটুকু সমস্যা এখন টিকে আছে তার মূল কারণ সেখানে শক্তিশালী বেসামরিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠিত না হওয়া। যারাই দেশের মঙ্গল চান, শানত্মি চুক্তির বাসত্মবায়ন চান,শানত্মি চুক্তির পরে সকলে মনে করেন পার্বত্য চট্টগ্রামে সত্যিকার বেসামরিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। প্রতিষ্ঠিত হতে হবে সেখানে সরকারের বিচার বিভাগের কতর্ৃত্ব। চট্টগ্রামের বাঘাইছড়িতে যেটা ঘটেছে তার মূলে অন্যতম হলো ভূমি সমস্যা। চট্টগ্রামের ভূমি বন্টন নিয়ে বা ভূমি আইন নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে দ্বন্দ্ব আছে। কিন্তু এটাও সত্য এ দ্বন্ধ কখনও জোর করে সমাধান করা যাবে না। এই দ্বন্দ্ব বিচার বিভাগ ও বেসামরিক প্রশাসন মিলেই সমাধান করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে এ দুইয়ের অবস্থান ও আওতা যত শক্তিশালী হবে ততই এ সব সমস্যা কেটে যাবে। কেউ বলতে পারেন, এই সমস্যা অনেক গভীরে বলে বাঘাইছড়ির পরে আবার খাগড়াছড়ি জ্বলে উঠলো। খাগড়াছড়ি আসলে নিজের বারম্নদে জ্বলে ওঠেনি। সেখানে আগুন লাগানো হয়েছে। এখানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ও ভুল করেছে। বাঘাইছড়ির ঘটনার পরদিনই যখন খাগড়াছড়ির ত্রাস ওয়াদুদ ভূইয়া উস্কানীমূলক সাংবাদিক সম্মেলন করলো ওই সময়েই তো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের উচিত ছিলো প্রশাসনকে সচেতন করা। তাদের সতর্ক হওয়া উচিত ছিলো খাগড়াছড়িকে নিয়ে। কারণ, খাগড়াছড়িতে সেই শানত্মিচুক্তির পর থেকে ওয়াদুদ ভূইয়ার নেতৃত্বে বিএনপি- জামাত বাঙালিদের ভিতর একটি শানত্মি বিরোধী গোষ্টি গড়েছে। এর পাশাপাশি জামায়াত বিএনপি জোট সরকারের সহায়তায় ও তাদের প্রতিনিধি ওয়াদুদ ভূইঁয়ার সহযোগীতায় এখানে পাহাড়ীদের ভিতর যে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা এখনো আছে তাদেরকে বেড়ে উঠার পথ করে দেয়া হয়েছে। যার অর্থ দাঁড়ায় খাগড়া ছড়িতে উগ্র গ্রম্নপ আছে দুই পৰে। এই যেখানে বাসত্মবতা সেখানকার ত্রাস ওয়াদুদ ভূইঁয়া যখন উস্কানীমূলক সাংবাদিক সম্মেলন করলো কেন তখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় সজাগ হলো না? ওয়াদুদ ভূঁইয়া কর্মকান্ড তীক্ষ্ম নজরে রাখলো না। এ কাজ করলে দুটি প্রাণহানি ঘটার মত সহিংসতা এড়ানো যেতো । তাছাড়া ২৩ তারিখের খাগড়াছড়ির ঘটনায় এটাও স্পষ্ট যে, প্রশাসন প্রথম থেকে সজাগ হলে এমন ঘটতো না। কারণ ওই দুই পৰের উগ্র গ্রম্নপ ছাড়া সেখানে সাধারণ বাঙালি ও পাহাড়ীদের ভিতর সম্পর্ক অনেক ভালো। তাই ওয়াদুদ ভূইঁয়ার উস্কানী এবং প্রশাসননের সচেতনতার অভাব -এই দুইয়ের মিলন না হলে খাগড়া ছড়িতে এই দুঃখজনক ঘটনা ঘটতো না।
খাগড়াছড়ির এ ঘটনার পরে দেশের ভিতর এখন অনেক আলোচক, অনেক তথাকথিত রাজনীতিক ও রাজনৈতিক দল ইনিয়ে বিনিয়ে একথা প্রমান করার চেষ্টা করবে যে, আসলে পাহাড়ী এলাকা এখনও পুরো বেসামরিক প্রশাসন দিয়ে চলে না। যা ঘটে গেলো সেটা তাদের মতে এই সত্য চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে গেলো। অত্যনত্ম- দুঃখের হলেও এটা সত্য, বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও সিভিল প্রশাসন কায়েম হবার বিরম্নদ্ধে এক ধরনের কথা বলার শক্তি আছে। এরা গণতন্ত্রের সুযোগ নিয়েও একথা প্রচার করে আবার অগণতান্ত্রিক সময়েও একথা বলে। বাসত্মবে এরা গণতন্ত্র, শানত্মি ও মানবাধিকার বিরোধী শক্তি। এদেরকে পরাজিত করেই বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক শক্তিকে এগুতে হবে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এ ধরনের বাঘাইছড়ি বা খাগড়াছড়ির ঘটনার পরে এ ঘটনাকে কখনই সাময়িক চাপা দিয়ে রাখার ব্যবস্থা করার পথে হাঁটার সুযোগ নেই। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অবশ্যই এধরনের ঘটনার মূলোৎপাটন করতে হবে। আর সেটা করতে হলে একদিকে যেমন ওয়াদুদ ভূঁইয়াদের মত উস্কানীদাতাদের উস্কানী দেবার পথ বন্ধ করতে হবে অন্যদিকে আইনের শাসন কায়েম করতে হবে এসব এলাকায়। আইনের শাসন কায়েমের একমাত্র পথ হলো বিচার বিভাগ ও বেসামরিক প্রশাসনকে এ এলাকায় শক্তিশালী করা। শক্তিশালী করা সামগ্রিক গ্রহণযোগ্য রাজনীতিকে। এর পাশাপাশি অন্যকোন প্রশাসন বা কোন শক্তি না রাখা। প্রকৃত অর্থে এ পথেই যাতে সরকার এগুতে না পারে তারজন্যেই এই বাধা বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এই বাঘাইছড়ি, খাগড়াছড়ি ঘটছে।
ংধিফবংযৎড়ু@মসধরষ.পড়স

No comments

Powered by Blogger.