একই সঙ্গে সমুদ্র নদী দ্বীপ পাহাড় বনের সৌন্দর্য- টেকনাফের শাহপরী দ্বীপ_ পর্যটনের অপার সম্ভাবনা

দেখা হয় নাই চৰু মেলিয়া, ঘর হতে শুধু দু'পা ফেলিয়া_ শাহপরীর দ্বীপে দাঁড়ালে কবির এ চরণ দু'টির সত্যতা উপলব্ধি করা যায়। দ্বীপটিকে প্রকৃতি রূপ ভা-ারে উজাড় করে দিলেও সেখানে পর্যটকদের পদধূলি পড়ে না।
নীল সমুদ্রের হাতছানি, সৈকত, অসংখ্য গাংচিলের উড়ে বেড়ানো, পেছনে পাহাড়, বন; কি নেই সেখানে। জেটিতে দাঁড়ালে ডানপাশে অদূরে দেখা যায় সেন্টমার্টিন। সমুদ্রে মাছ ধরার ছোট ডিঙি নৌকাগুলোও অন্যরকম সৌন্দর্য তৈরি করেছে। সুউচ্চ জেটিতে উঠলে দ্বীপের পুরো সৌন্দর্য একসঙ্গে চোখে ধরা পড়ে। এর পরও পর্যটকরা যান না সেখানে। বলা ভাল, পর্যটকরা স্থানটি সম্পর্কে একেবারেই অবগত নন। পর্যটনের অপার সম্ভাবনা থাকলেও পর্যটকদের কাছে স্থানটিকে পরিচিত করতে কোন ধরনের উদ্যোগও নেয়া হয়নি।
শোনা যায়, নবাবজাদা শাহসুজা ও পরী এ দ্বীপে বিশ্রাম নিয়েছিলেন। সেই থেকে দ্বীপের নাম শাহপরী দ্বীপ। দেশের সর্বদৰিণের উপজেলা টেকনাফের দৰিণের শেষ অংশ শাহপরী দ্বীপ। তবে এখন আর এটি দ্বীপ নয়, বরাকুল খালের ওপর ব্রিজের মাধ্যমে এটিকে মূল ভূখ-ের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পর্যটন স্পট হিসেবে একটি স্থানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যা যা থাকা উচিত, তার সবই আছে সেখানে। কিন্তু পর্যটকরা টেকনাফকে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছেন সেন্টমার্টিন। ফেরার পথেও মোহনীয় নাফ নদীর পারের টেকনাফকে না দেখে ফিরে যাচ্ছেন কক্সবাজার। টেকনাফ শহর থেকে শাহপরী দ্বীপে চলাচলের রাসত্মার দু'ধারে উঁচু পাহাড়, সমৃদ্ধ সংরৰিত বনাঞ্চল, লবণ চাষের দৃশ্য_ সবই উপেৰা করে চলে যাচ্ছেন পর্যটকরা। এর কারণ কি? এলাকাবাসীর এক কথায় জবাব, প্রশাসনের উদাসীনতা। এলাকাবাসী মোহাম্মদ সৈয়দ হোসাইন ৰোভ নিয়ে জনকণ্ঠকে বললেন, অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, টেকনাফ যেন দেশের বাইরের একটি অংশ। একইসঙ্গে সমুদ্র, নদী, দ্বীপ,পাহাড়, বনের সৌন্দর্য দেখতে চাইলে পর্যটকদের টেকনাফে আসতে হবে। কারণ, অপ্রশসত্ম রাসত্মার কারণে টেকনাফের মূল ভূখ- দিয়ে পর্যটকরা যাতায়াত করছেন না। অথচ দেখার স্থান, থাকার স্থান সবই আছে। সেন্টমার্টিন ও কক্সবাজারে যে মানের হোটেলের রম্নমের ভাড়া ৮শ' টাকা, টেকনাফে সেই মানের রম্নমের ভাড়া মাত্র ২শ' টাকা। এছাড়া পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় পণ্যও বিক্রি হয় অত্যনত্ম সসত্মায়।
টেকনাফের ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালনকারী পৌর কমিশনার নাজির আহমেদ কালু জানান, ২০০৫ সালে আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে শাহপরী দ্বীপে জেটি নিমর্াণ করা হয়েছিল। তবে টেকনাফ থেকে শাহপরী দ্বীপ পর্যনত্ম রাসত্মাটি প্রশসত্ম না হওয়ায় জেটি চালু হচ্ছে না। তিনি বলেন, শাহপরী জেটি চালু করে টেকনাফের পর্যটন স্পটগুলো নিয়ে যথাযথ প্রচারের ব্যবস্থা নিয়ে একটি পরিকল্পিত পর্যটন জোন হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে। তাহলে টেকনাফও হয়ে উঠবে কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিনের মতো জনপ্রিয় পর্যটন স্থান।
সরেজমিন দেখা যায়, শূন্য পড়ে আছে শাহপরী জেটি। জেটি দিয়ে অবাধে মিয়ানমার দিয়ে গরম্ন ঢোকে। তার চিহ্ন স্পষ্ট। জেটিজুড়ে শুকনো গোবর পড়ে থাকতে দেখা গেছে। তবে সাধারণ যাত্রী নেই একেবারেই। জেটিটি চালু না হওয়ায় এ স্থান থেকে ২১ কিলোমিটার আগে দমদমিয়ার জেটি থেকে পর্যটকদের সেন্টমার্টিনে চলাচল করতে হচ্ছে। সেখান থেকে সেন্টমার্টিনের দূরত্ব ৩৬ কিলোমিটার। অথচ শাহপরী দ্বীপের জেটি চালু হলে দূরত্ব কমে ১৫ কিলোমিটারে দাঁড়াত।
এলাকাবাসী জাবেদ ইকবাল জানালেন, এ জেটিটি চালু হলে স্পীডবোটে মাত্র আধ ঘণ্টার মধ্যে দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনের পৌঁছানো সম্ভব। সি-ট্রাকে গেলেও সময় লাগবে এক ঘণ্টা।

No comments

Powered by Blogger.