ভাষা দিবসে ঢাকাজুড়ে ছিল অনুষ্ঠানের জোয়ার

যাদের প্রাণ উৎসর্গে আমরা আজ মাথা উঁচু করে বীরদর্পে দাঁড়িয়ে আছি। মাকে ডাকতে পারছি 'মা' বলে, সেই ভাষা এবং ভাষা শহীদদের প্রতি বাঙালীর অফুরনত্ম শ্রদ্ধা আর ভালবাসা অমলিন।
'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রম্নয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি' কিংবা 'মোদের গরব মোদের আশা, আ-মরি বাংলা ভাষা'র মতো অসংখ্যা জনপ্রিয় গানের সুরের সঙ্গে বাংলার স্বর্ণালী বর্ণমালাগুলো যেন সব সময় বাঙালী চিত্তে দোল খায়। আমাদের বোধকে উদ্বুদ্ধ করে। আর ফেব্রম্নয়ারি এলে তো কোন কথাই নেই। মাসব্যাপী বাঙালী মেতে ওঠে বর্ণীল আর বর্ণাঢ্য সাজে। কারণ এই একুশের চেতনা বাঙালীকে স্বপ্ন দেখায়, বাঁচতে শেখায় আর সৃষ্টি-সুখের উলস্নাসে খুঁজে দেয় নতুন পথের সন্ধান। বাঙালী অকপটে বিশ্বাস করে এই একুশই বাঙালীর সর্বময় প্রেরণা। এই জাতি এতদিন নিশ্চিত বুঝে গেছে যে, বাংলার সেই সাহসী সনত্মানেরা সেদিন যদি বুকের তাজা রক্ত ঢেলে বাংলা ভাষা ছিনিয়ে না আনত, তাহালে এই জাতি হয়ত কোন দিনই পরাধীনতার শিকল ছিঁড়ে বেরম্নতে পারত না। তার মানে একুশেই আমাদের সকল আন্দোলন, সকল জয় এবং সকল শক্তির প্রেরণা। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও রাজধানীবাসী একুশে ফেব্রম্নয়ারি আনত্মর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে পালন করেছে নানা আয়োজনে। অন্য বছরগুলোর চাইতে এবার ঢাকা যেন একুশের চেতনায় উদ্ভাসিত হয়েছে আরও ব্যাপক উৎসাহে। স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং রাজনৈতিক ও বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের ভিন্ন ভিন্ন আয়োজনে ঢাকা পরিণত হয়েছে উৎসবের নগরীতে। এর মধ্যে মহান একুশে উপলৰে বিভিন্ন সংগঠন দিনব্যাপী বা একাধিক দিন কিংবা সপ্তাহব্যাপী আয়োজনও করেছে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর উদ্যোগে মহান একুশে ফেরম্ন্রয়ারি উপলৰে শিল্পকলা একাডেমীর সেমিনার হলে আয়োজন করা হয় তিন দিনব্যাপী সেমিনার ও প্রবন্ধ পাঠ। আয়োজনের অংশ হিসেবে শিল্পকলার মুক্তমঞ্চে তিন দিনই ছিল একুশের গান মুক্তিযুদ্ধের গান, আবৃত্তি, নৃত্যসহ নানা আয়োজন। এছাড়া শিল্পকলা একাডেমীর পৰ থেকে প্রতিদিন দু'জন বিশিষ্ট ভাষাসৈনিককে সংবর্ধনা দেয়া হয়। একইভাবে ১৯ ফেব্রম্নয়ারি থেকে তিন দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। রবিন্দ্র সরোবরে আয়োজিত জোটের এই আয়োজনে দেশের প্রখ্যাত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা ছাড়াও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক দল ও থিয়েটারের আয়োজনে পরিবেশন করা হয় একুশে ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক পথনাটক, গান, আবৃত্তি এবং নৃত্য। টিএসসি প্রাঙ্গণে প্রতিবছরের মতো এবারও পদাতিক নাট্য সংসদ (টিএসসি) আয়োজন করে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা। আয়োজনে বেশকিছু পথনাটক প্রদর্শিত হয় নাটকগুলোতে মহান মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন এবং যুদ্ধ অপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গগুলো দারম্নণভাবে আলোচিত হয়। আয়োজনে সাত্তি্বক নাট্য সম্প্রদায়ের নতুন নাটক 'রসু খাঁ এবং আমি' দর্শকদের মাঝে আলোচনার ঝড় তোলে। নাটকটির রচনা ও নির্দেশনার দিয়েছেন সগির মোসত্মাফা। এছাড়া মিরপুর ধানম-ি, যাত্রাবাড়ী, পুরাতন ঢাকাসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় সামাজিক ও সাংস্কৃতিক এমনকি শিৰা প্রতিষ্ঠানের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় একুশের নানা আয়োজন। একুশে ফেব্রম্নয়ারি শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় নাট্যশালায় ছিল আরণ্যক নাট্যদলের ৪৬তম প্রযোজনা 'রাঢ়াং'। মান্নান হীরার রচনায় নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন নাট্যজন মামুনুর রশীদ। এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে মহান একুশে ফেব্রম্নয়ারির বিশেষ মঞ্চায়ন হিসেবে সময় মঞ্চস্থ করে দলের নতুন নাটক 'শেষ সংলাপ'। মিসরে প্রখ্যাত নাট্যকার তাওফীর আল হাকীমের 'সুলতানুজ্ জান্নাম' অবলম্বনে নাটকটির অনুবাদ করেছেন ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ ও ম. সাইফুল আলম চৌধুরী। নাটকে রাজ্যের সুলতানের দাসত্ব মোচনের এক অভিনব ঘটনাবলী বর্ণিত হয়েছে অসাধারণ নাট্যরসে। মহিলা সমিতি মিলনায়তনে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায় মঞ্চস্থ করে এ সময়কার মঞ্চ সফল প্রযোজনা অপেৰমাণ। নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন নাট্যব্যক্তিত্ব আতাউর রহমান। এছাড়া একুশের নানা আয়োজনে যান্ত্রিক নগরী ঢাকা ছিল আনন্দ কলতানে মুখর।
য় শিহাব ফারম্নক

No comments

Powered by Blogger.