এমআরটির প্রতিবেদন- এক বছরে গুপ্তহত্যার শিকার এক হাজার ৮৪

এক বছরে দেশে গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছেন এক হাজার ৮৪ জন। মোট খুন হয়েছেন চার হাজার ৪১২ জন। রাজনৈতিক সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন ১৮৫ জন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে খুন হয়েছেন ৯৪ জন। সেন্টার ফর মিডিয়া রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিংয়ের (এমআরটি) বার্ষিক প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। গত সোমবার এই রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়।

এমআরটি জানায়, এক বছরে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে এক হাজার ৮৩৭টি, সীমান্তে নিহত হয়েছেন ৪২ জন, সাংবাদিক নিহত হয়েছেন পাঁচজন, আহত হয়েছেন ২০৫ জন। এই সময়ে দেশে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে ৬৭৫টি, গণপিটুনিতে নিহত হন ১২৬ জন। এমআরটি প্রতিবেদন বলছে, ২০১২ সালে দেশে মোট খুন হয়েছেন চার হাজার ৪১২ জন। প্রতিদিন গড়ে খুন হয়েছে ১২টিরও বেশি। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে ৩৩৬টি, ফেব্রুয়ারি মাসে ২৭৬টি, মার্চ মাসে ৩৩৮টি, এপ্রিল মাসে ৩২৪টি, মে মাসে ৩৬৮টি, জুন মাসে ৪০৯টি, জুলাই মাসে ৪৬৬টি, আগস্ট মাসে ৪২৭টি, সেপ্টেম্বর মাসে ৪২২টি, অক্টোবর মাসে ৪০৭, নভেম্বর মাসে ৩০৭ এবং ডিসেম্বর মাসে সারা দেশে ৩৩২টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এ সময়ে খোদ রাজধানীতেই আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি হত্যাসহ আড়াই শতাধিক খুনের ঘটনা ঘটেছে।

এমআরটি জানায়, ভয়ানক আকার ধারণ করেছে গুপ্তহত্যা। ২০১২ সালে দেশে মোট এক হাজার ৮৪টি গুপ্তহত্যা ঘটেছে। প্রতিদিন গড়ে গুপ্তহত্যা হয়েছে প্রায় তিনটি। জানুয়ারি মাসে ৩১টি, ফেব্রুয়ারি মাসে ৯০টি, মার্চ মাসে ৯৩টি, এপ্রিল মাসে ৮৩টি, মে মাসে ১২৩টি, জুন মাসে ১০৭টি, জুলাই মাসে ১২৪টি, আগস্ট মাসে ৭৪টি, সেপ্টেম্বর মাসে ৯৩টি, অক্টোবর মাসে ৮৬টি, নভেম্বর মাসে ৯৩টি এবং ডিসেম্বর মাসে ৮৭টি গুপ্তহত্যা ঘটেছে।

এই সময়ে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফের হাতে নিহত হয়েছেন ৪২ জন। প্রায় েেত্রই বিএসএফ তাদেরকে গুলি করে হত্যা করে। এ ছাড়া সীমান্তে বিএসএফের নির্যাতনে আহত হয়েছেন ১২৪ জন। এ সময় বিএসএফ অপহরণ করে ৯৬ জনকে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের হাবিবুর রহমান নামে এক যুবকের ওপর বিএসএফের সদস্যরা বর্বরোচিত নির্যাতন চালায়।

২০১২ সালে দেশের বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন ১৮৪ জন, আহত হয়েছেন ১৯ হাজার ৪৬৫ জন। প্রতিদিন গড়ে ৫৩ জন আহত হয়েছেন। বেশির ভাগ েেত্র মতাসীন দলে গ্রুপিংয়ের কারণে সংঘর্ষ ঘটেছে। শুধু আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর অভ্যন্তরীণ কোন্দলেই নিহত হয়েছেন ৩৯ জন।  ৯ জানুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ ক্যাডারেরা নিজ সংগঠনের নেতা যুবায়েরকে হত্যা করে। সর্বশেষ রাজধানীতে বিরোধী জোটের অবরোধের সময় ছাত্রলীগের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন নিরীহ পথচারী বিশ্বজিৎ।

২০১২ সালে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা রাকারী বাহিনীর হাতে মৃত্যু হয়েছে ৯৪ জনের। অর্থাৎ প্রতি মাসে গড়ে আটজনেরও বেশি মানুষ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে ৫৭ জন কথিত ক্রসফায়ার বা এনকাউন্টারে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। এ ছাড়া বিরোধীদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে পুলিশি বাধা ও হামলা ছিল লণীয়। বিশেষ করে বছরের প্রথম ও শেষ দিকে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। ২৯ জানুয়ারি বিরোধী জোটের পূর্বঘোষিত মিছিলে পুলিশের গুলিতে চারজন এবং ৩০ জানুয়ারি রাজশাহীতে একজন নিহত হন। বিরোধীদের মিছিলে পুলিশের গুলিতে সর্বশেষ নিহত হন শিবিরকর্মী মুজাহিদ।

২০১২ সালে সারা দেশে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন ১২৬ জন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থাহীনতার কারণেই আইন হাতে তুলে নেয়ার প্রবণতা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

২০১২ সালে সারা দেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন মোট এক হাজার ৮৩৭ জন। এ সময়ে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ৪৭২ জন। এ ছাড়া যৌতুক ও নানা কারণে স্বামীগৃহে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৭৯২ জন। এর মধ্যে স্বামীগৃহে নির্যাতনের ফলে জীবন দিতে হয়েছে ৩২৭ জন নারীকে। অ্যাসিড সহিংসতার শিকার হয়েছেন ১০৩ জন। তবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, বাস্তবের তুলনায় পত্রিকায় প্রকাশিত এই সংখ্যা একেবারেই নগণ্য। পুলিশের হিসাব অনুযায়ী জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত পাঁচ মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক হাজার ৪৮৬ জন। বেশির ভাগ যৌন হয়রানি ও ধর্ষণের ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের সংশ্লিষ্টতার কথা উঠে এসেছে।

৪ জানুয়ারি সাতীরা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে জুয়েল ও পলাশ স্বামীকে মারধর করে আটকে রেখে এক নৃত্যশিল্পীকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। ১৯ জানুয়ারি সিলেটের জকিগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতা মিছরা জামান কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হন এক মহিলা। ২৪ জানুয়ারি সরাইলে যুবলীগ ক্যাডার জাকির কর্তৃক যৌন হয়রানির শিকার হন এক তরুণী। ১৩ ফেব্রুয়ারি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে গণধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রীর বাবা মামলা করতে গেলে সন্ত্রাসীরা তাকে পিটিয়ে হত্যা করে। ১৭ ফেব্রুয়ারি পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার সমুদয়কাটি ইউনিয়নের সুন্দর গ্রামে মা (৩০) ও  মেয়েকে (১১) ধর্ষণের পর হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ২৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে র‌্যাব পরিচয়ে তিন বখাটে এক তরুণীকে ধর্ষণ করে। ১২ মার্চ নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার জয়াগ বাজার এলাকায় স্বামীর অনুপুস্থিতিতে ঘরে ঢুকে অস্ত্রের মুখে এক গৃহবধূকে ধর্ষণ করে যুবলীগ কর্মী সুমন।

২০১২ সালে দেশে পাঁচ সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মতাসীন দলের নেতাকর্মী ও পুলিশের হাতে নির্যাতনের শিকার হন ২০৫ জন সাংবাদিক। এ ছাড়া হুমকির শিকার হন ৬৭ জন এবং লাঞ্ছিত হন ৬১ জন সাংবাদিক।

No comments

Powered by Blogger.