ডাকাতি করতে গিয়ে ধর্ষণ করাই ছিল যার নেশা- আরেক 'রসু খাঁ' গ্রেফতার

জেলার মুরাদনগরে কুখ্যাত রসু খাঁ রূপী ডাকাত কাউছার গ্রেফতার হওয়ায় এলাকার লোকজন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে। উপজেলার খামারগ্রামের করিম বাড়ির মোকলেছুর রহমান প্রকাশ মনু মেম্বারের পুত্র কাউছার (২৭) দীর্ঘ দিন ধরে এলাকায় ডাকাতি করে আসছিল।
ডাকাতি করতে গিয়ে ধর্ষণ করা ছিল তার নেশা। পেশাদার ডাকাত কাউছার ডাকাতি করার আগে জেনে নিত ঘরের পুরম্নষ অভিভাবক প্রবাসী বা চাকরিজীবী কিনা। পুরম্নষ অভিভাবকহীন এমন বাড়িতে সুন্দরী রমণী বা যুবতী থাকলেই কেবল সে সদলবলে ডাকাতি করতে যেত। সশস্ত্র অবস্থায় ধর্ষণ শেষে মালামাল লুট করত। ডাকাত কাউছারের যৌন নির্যাতনের শিকার বহু পরিবার এখনও বাড়িছাড়া। দীর্ঘ দিন ধরে তার নির্যাতনের শিকার পরিবারগুলো এলাকা ছেড়ে পালিয়ে রয়েছে। ভয়ে অনেকেই থানা পুলিশের কাছে অভিযোগও করেনি। সমপ্রতি একটি ডাকাতির ঘটনায় কাউছার গ্রেফতার হওয়ায় একে একে বেরিয়ে আসছে তার ধর্ষণ আর নির্যাতনের লোমহর্ষক কাহিনী।
মুরাদনগর গিয়ে জানা গেছে, কাউছার ছিনতাইয়ের মাধ্যমে অপরাধ জগতে পা বাড়ায়। ছিনতাই যখন তার পেশা ছিল, তখন সে অল্প টাকায় এলাকার লোকজনের কাছে ভাল ভাল মোবাইল সেট বিক্রি করত। সে স্কুল-কলেজের মেয়েদের পথিমধ্যে অশালীন অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন করত। বখাটে কাউছারের বিরক্তিকর কর্মকা-ে অনেক মেয়ে পড়ালেখা ছেড়ে দিয়েছে। এরপর কাউছার শুরম্ন করে ডাকাতি। পুরম্নষ অভিভাবক প্রবাসী, কিংবা দূরে কোথাও চাকরি অথবা ব্যবসা করে এমন সব বাড়িতে সুন্দরী রমণী বা যুবতী মেয়ে ঘরে থাকার খবর পেলেই কাউছার দলবল নিয়ে ডাকাতি করতে যেত। ডাকাতি করতে গিয়ে প্রথমে ধর্ষণ করাই ছিল তার নেশা। নারীদের অজ্ঞান করেও সে ধর্ষণ করত বলে জানা গেছে। গত ৪/৫ বছর ধরে ডাকাত দল গঠন করে এভাবে বেপরোয়া ডাকাতি করছে কাউছার। এ সময়ের মধ্যে তার বিরম্নদ্ধে কয়েকটি মামলা হয়েছে মুরাদনগর থানায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, ডাকাতির ঘটনায় পুলিশ নিয়েছিল চুরির মামলা। আর তাই বাদী, সাীকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে কাউছার সহজেই পার পেয়ে গেছে মামলাগুলো থেকে।
মুরাদনগর থানা পুলিশ সূত্র জানায়, গত ১৭ জানুয়ারি রাতে একই গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সুবেদার আব্দুল মান্নান ও তাঁর ভাই আব্দুল মোন্নাফ ডিলারের বাড়িতে ডাকাতি হয়। এ ডাকাতির ঘটনায় ভয়ে কাউছারের বিরম্নদ্ধে থানায় মামলা করা হয়নি। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে থানা পুলিশ ১৯ জানুয়ারি রাতে অভিযান চালিয়ে দুর্ধর্ষ ডাকাত ও নারী নিযর্াতনকারী হিসেবে খ্যাত কাউছারকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর কাউছার প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানায়, জেলার বিভিন্ন উপজেলার পেশাদার ডাকাতদের সমন্বয়ে সে এলাকায় ডাকাতি করত। পুরম্নষ অভিভাবকহীন বাড়িতে সুন্দরী রমণী বা যুবতী মেয়ে আছে, এমন খোঁজ পেলেই সে ডাকাতি করতে যেত। ডাকাতি করতে গিয়ে সুন্দরী রমণী বা যুবতী মেয়েদের ধর্ষণ শেষে মালামাল লুট করত। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ডাকাত কাউছার জানায়, তাঁর চাচা স্থানীয় মুজিবুর রহমান ওরফে খোকা মিয়ার একটি পালিত কুকুর ছিল। এ কুকুরটিকে ছুরিকাঘাত করার কয়েক দিন পরই অর্থাৎ ১৪ ডিসেম্বর রাতে তাজুল ইসলাম মেম্বার, তাঁর ভাই নজরম্নল ইসলাম ও আমিরম্নল ইসলামের বাড়িতে ডাকাতি করে। এ ডাকাতির কথা স্বীকার করলেও রহস্যজনক কারণে পুলিশ তাকে ওই ডাকাতি মামলায় গ্রেফতার দেখায়নি। অবশ্য, পরে তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করতে ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে সোপর্দ করা হলেও সেই রিমান্ড মঞ্জুর হয়নি।
স্থানীয় সূত্র জানায়, একই গ্রামের মাবিয়া খাতুন নামের এক সুন্দরী মহিলাকে বিয়ে করতে তাঁর স্বামী ইসমাইল মিয়াকে প্রায় ২০ বছর আগে কাউছারের চাচা ঝাড়ু মিয়া দেওড়ার বিলে নিয়ে রাতের আধাঁরে হত্যা করে। এ ঘটনায় ওই সময়ে হত্যা মামলা হলেও ঝাড়ু মিয়ার নির্যাতনের ভয়ে তিন শিশু সনত্মান নিয়ে এলাকা ছাড়া হন মারিয়া বেগম। দীর্ঘ দিন এলাকা ছাড়া থাকার পর ২০০৬ সালে সনত্মানদের নিয়ে স্বামীর ভিটায় ফিরে আসেন। বাড়িতে আসার পরই মাবিয়া বেগমের সুন্দরী যুবতী মেয়ের ওপর কুনজর পড়ে ডাকাত কাউছারের। ওই বছরই কাউছার সিঁদ কেটে ঘরে ঢুকে অজ্ঞান করে ধর্ষণ করে তাঁকে। এতে সে অনত্মঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে স্থানীয় মাতব্বররা কাউছারকে দোররা মারেন। একই গ্রামের সুন্দরী গৃহবধূকে ২০০৫ সালে কাউছার ধর্ষণ করার ঘটনায় মৃত জলিল মিয়ার ছেলে সৌদি প্রবাসী শাম মিয়া বাড়িতে এসে স্ত্রীকে তালাক দিয়ে নববধূ নিয়ে নিরাপদে থাকার জন্য পাশর্্ববর্তী বাংগরা গ্রামে চলে যায়। ডাকাত কাউছারের নির্যাতনের ভয়ে তার আপন ছোটভাই ফারম্নক আহমেদের স্ত্রী পাপিয়া আক্তারকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। স্ত্রী ও মেয়েদের নিরাপদ রাখার জন্য ঘরবাড়ি ছেড়ে মৃত বাচ্চু মিয়ার ছেলে প্রবাসী হেলাল মিয়া ও শাহজালাল মিয়া উপজেলার কোম্পানিগঞ্জ সংলগ্ন নগরপাড়, মৃত রঙ্গু মিয়ার পুত্র হালিম মিয়া, মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে হিরম্ন মিয়া চট্টগ্রাম, নুর মোহাম্মদ পার্শ্ববতর্ী দৌলতপুর, ঢাকার ব্যবসায়ী আলম মিয়ার স্ত্রী শিল্পী বেগম বাবার বাড়ি হাটাশ, মৃত রব্বান মিয়ার ছেলে রেজাউল করিম ও তাঁর ভাই মৃত লোকমান হোসেনের স্ত্রী দেবিদ্বার চলে গেছেন।
সূত্র জানায়, এলাকাবাসীর কাছে 'আরেক রসু খাঁ' হিসাবে পরিচিত ডাকাত কাউছারের মা ছোবেরা খাতুন সকল বিষয়কে সাজানো ও শত্রম্নতামূলক বলে দাবি করলেও এলাকার অত্যাচারিত লোকজন তা প্রত্যাখ্যান করেন এবং চোরের মা'র বড় গলা হিসাবে অহঙ্কারি ছোবেরা খাতুনেরও দৃষ্টানত্মমূলক বিচারের দাবি জানান। এলাকাবাসী জানায়, গ্রাম থেকে চলে যাওয়া প্রতিটি পরিবারই ডাকাত কাউছারের দ্বারা নির্যাতনের শিকার। এসব নির্যাতনের ঘটনায় প্রবাসী শাহজালালের স্ত্রী তাহমিনা বেগম প্রতিবাদ করে থানায় অভিযোগ করায় দুর্ধর্ষ কাউছার এসিড নিপে করে মুখম-ল ঝলছে দেয়ার হুমকির ভয়ে পরদিনই এলাকা ছাড়া হয় সে। ফলে অনেকেই তাঁর বিরম্নদ্ধে থানা পুলিশের কাছে কোন অভিযোগ করার সাহস পায়নি।
সর্বশেষ খবরে জানা যায়, ডাকাত কাউছারের সহযোগী একই গ্রামের মৃধন মিয়ার পুত্র ইকরাম ও কালু ওরফে হাসান, জুলহাসের মেয়ের জামাই আবদুল লতিফ মিস্ত্রি কয়েক দিন পলাতক থাকলেও আবারও বীরদর্পে প্রকাশ্যে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। কাউছারসহ তাদের রা করার জন্য একটি মহল বিশেষ তদবির করছে বলে জানা গেছে।
মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিরম্নল আলম জানান, ধৃত কাউছারের বিরম্নদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। তবে কেউ তাঁর ভয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দিচ্ছে না। লিখিত অভিযোগ পাওয়া না গেলে ব্যবস্থা নেয়া যায় না।

No comments

Powered by Blogger.