'৭১-এর অক্টোবরে প্রচণ্ড মার খায় রাজাকাররা- মুক্তিযুদ্ধের ছিন্ন দলিলপত্র-৪৩ by মুনতাসীর মামুন

 হানাদার পাকিসত্মানী বাহিনী ১৯৭১ সালে অবরম্নদ্ধ দেশে শাসন ব্যবস্থা চালু রাখার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল। এর একটি ছিল, মহকুমা প্রশাসকের কাছ থেবে প্রতিদিনের এবং পাৰিক স্থানীয় অবস্থা সম্পর্কিত রিপোর্ট।
প্রতিদিনের রিপোর্ট দেয়ার জন্য নির্দিষ্ট একটি ছক ছিল। পাৰিক রিপোর্টের জন্য নির্দিষ্ট কোন ছক ছিল না। রিপোর্টগুলো স্বাভাবিকভাবেই ছিল ইংরেজীতে লেখা। এ রকম দু'টি রিপোর্টের নমুনা সংগৃহীত হয়েছে।
নেত্রকোনার বারহাট্টার সার্কেল অফিসার ১১ সেপ্টেম্বর দৈনিক রিপোর্ট পাঠিয়েছিলেন নেত্রকোনার এসডিও-র কাছে।
ক. আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক
খ. রাজনৈতিক
১. বিদেশী ও বিদেশী মিশনসমূহের কর্মকা- : কোন মিশন নেই।
২. হিন্দুদের কর্মকা- : স্থানীয় যারা বাসিন্দা তারা গৃহকর্মে ব্যসত্ম।
৩. রাজনৈতিক কর্মকা-ের বিশদ বিবরণ : কোন রাজনৈতিক কর্মকা- নেই।
গ. বেসামরিক কার্যকলাপ
১. প্রশাসন : খারাপ নয়
ঘ. যোগাযোগের অবস্থা
১. রাসত্মা ও রেলপথের অবস্থা : ভাল
২. সংস্কার/রেলওয়ে ব্রিজ/রাসত্মা নির্মাণ : নেত্রেকোনা-মোহনগঞ্জ সড়কে পাঁচটি কাঠের ব্রিজ নির্মাণ/পুনর্নির্মাণ এবং সংস্কার কাজ।
ঙ. শ্রম : শ্রমিকরা নিয়মিত কাজ করছে।
চ. কৃষি : শস্যের অবস্থা স্বাভাবিক। আমন রোপণের কাজ চলছে দ্রম্নত।
ছ. শিল্প : এটি কোন শিল্প এলাকা নয় এবং কর্মকা- তাই সনত্মোষজনক নয়।
জ. বিবিধ :
১. অন্য কোন বিষয় যা আগ্রহের সৃষ্টি করতে পারে : নেতিবাচক
২. নাগরিক কর্মকা- : স্বাভাবিক।
৩. শহর/গ্রাম জীবনে স্বাভাবিকতা সংক্রানত্ম কোন পর্যবেৰণ : মহকুমা ও থানা শানত্মি কমিটির মিটিং সহায়তা করতে পারে।
ঝ. কলেজে ছাত্র-শিৰক উপস্থিতি : এখানে কলেজ নেই।
সার্কেল অফিসার যে রিপোর্ট দিয়েছেন দেখা যাচ্ছে পাকিসত্মানী সেনাবাহিনীর তা কোন কাজে আসবে না। অর্থাৎ তারা যে বিষয়ে ['দুষ্কৃতকারী'] জানতে আগ্রহী সে বিষয়ে কোন রিপোর্ট নেই।
পূর্ব-ধলার সার্কেল অফিসার একটি পাৰিক রিপোর্ট পেশ করেছেন ১০ অক্টোবর। পাকিসত্মানীরা যা জানতে চায় তা ছিল সে রিপোর্টে। আবার এ রিপোর্ট তুলে ধরে তৃণমূল পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধারা কিভাবে নাসত্মানাবুদ করে তুলছিল পাকিসত্মানীদের।
সার্কেল অফিসার জানাচ্ছেন, হঠাৎ করে রেঞ্জার্সদের দফতর ৬/১১/৭১ তারিখে পূর্বধলা থেকে জারিয়া চলে যাওয়ায় পূর্বধলা থেকে জারিয়া রওয়ানা হন তিনি পরের দিন। ৯ তারিখ তিনি রিপোর্ট পাঠাতে পারেননি কারণ পূর্বধলা বা জারিয়ায় ৫ তারিখ থেকে একজন পিয়ন ছাড়া আর কোন স্টাফ নেই। ফাইলও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সুতরাং দু'টি গুরম্নত্বপূর্ণ বিষয় তিনি জানাচ্ছেন।
বিদ্রোহীদের আক্রমণ : ৯/১১/৭১ তারিখে তিনটার সময় শত্রম্নরা পূর্বধলা পুলিশ স্টেশনে ডিউটিরত পুলিশ এবং রাজাকার, পূর্বধলা রেলওয়ে ব্রিজে পাহারারত রেঞ্জার্স ও রাজাকার এবং কুমারখালী ব্রিজে রাজাকারদের ওপর আক্রমণ চালায়। শত্রম্নরা মর্টার, মেশিনগান এবং গ্রেনেড ব্যবহার করে। এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে আক্রমণ চলে। একজন রাজাকার নিহত ও তিনজন গুরম্নতর আহত হয়। শত্রম্নরা ব্রিজটির ৰতি করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালায় কিন্তু বীর রাজাকারদের কারণে হটে যায়।
ফেরার পথে শত্রম্নরা কুমারখালীতে দু'জন কর্তব্যরত ব্যক্তিকে হত্যা করে যাদের পুত্ররা রাজাকার।
খ. ২ নভেম্বর '৭১, ভোর ৪টায় আগিয়া ইউনিয়নের ফাইলাতি গ্রামের ওমর আলী, পূর্বধলার সি.ও-র পিয়ন এবং আগিয়া ইউনিয়নের দফাদার সমিরম্নদ্দীনকে হত্যা করে।
গ. ২৬.১০.৭১ তারিখে রাত ন'টায় ধলামূলগাও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তোজাম্মল হোসেন এবং ধলামূলগাও ইউনিয়ন শানত্মি কমিটির সদস্য মো. আবদুল আজিজ মসজিদ থেকে ফেরার পথে দুষ্কৃতকারীদের হাতে নিহত হন।
ধলামূলগাও ইউনিয়ন কাউন্সিলের অফিস রেকর্ড ছাড়া আর কোন ৰতি হয়নি। ডিসেম্বরের ২ তারিখে এসডিও এই রিপোর্ট তাদের পরবতর্ী রিপোর্টে অনত্মভর্ুক্ত করার নির্দেশ দেন। ততদিনে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পথে।
সংগ্রহ : মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর

No comments

Powered by Blogger.