কেন্দ্রীয় সরকার থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত তৃণমূলের

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে চরম ক্ষুব্ধ তৃণমূল কংগ্রেস। কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের পক্ষে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদীয় কমিটি। তবে প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং দেশে না থাকায় ৮ ও ৯ নভেম্বর পর্যন্ত ওই সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার পর সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবে তৃণমূল। এরপর দলটি ইস্যুভিত্তিক সমর্থনকিংবা বিরোধিতা করার সিদ্ধান্ত নেবে।


গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজ্য সরকারের সচিবালয় মহাকরণে সংসদীয় দলের সদস্যদের পাশে নিয়ে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে দলটির সর্বভারতীয় সভানেত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'সংসদীয় কমিটি ইউপিএ সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের পক্ষে রেজ্যুলেশন করেছে। আমি তাদের এই ঐক্যে খুশি। এভাবে দ্বিতীয় বৃহত্তম শরিক দলকে উপেক্ষা করে রাতের অন্ধকারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো মানে মানুষের ওপর অন্ধকারের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া। এই দায় আমরা নেব না। তবে আমি সংসদীয় কমিটির সিদ্ধান্তে কিছুটা পরিবর্তন করেছি। প্রধানমন্ত্রী দেশের বাইরে আছেন। তাই এই মুহূর্তে এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি করতে চাই না। তিনি দেশে ফিরলে সংসদীয় কমিটি দেখা করে আজকের এই সিদ্ধান্তের কথা জানাবে প্রধানমন্ত্রীকে। কংগ্রেসকে ভুলে গেলে চলবে না, জোট শরিকদের নিয়ে চলতে হবে।'
এর আগে সকাল ১১টায় বাইপাসের তৃণমূলের প্রধান কার্যালয়ে ১৯ জন নির্বাচিত সংসদ সদস্য এবং চারজন রাজ্যসভার সদস্য এই ইস্যুতে জরুরি বৈঠক করেন। দুপুর ১টায় দলটির চিফ হুইপ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'সংসদীয় কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। এবার দলীয় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আমাদের মতামত পেশ করা হবে। তিনিই তা চূড়ান্ত ঘোষণা দেবেন।'
এই সংবাদ সম্মেলন যখন চলছিল, ঠিক তখনই মহাকরণে কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মার সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে আনন্দ শর্মা সাংবাদিকদের বলেন, আগামী বছর রাজ্যে একটি বাণিজ্য সামিট হবে। রাজ্যের বাণিজ্যিক পরিস্থিতি খুবই পজিটিভ।
দুপুরের জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে দলীয় সিদ্ধান্তের কথা জানানোর সময় মমতা ব্যানার্জি দাবি করেন, এই ইস্যুতে আনন্দ শর্মাকেও তৃণমূল কংগ্রেস তথা রাজ্য সরকারের ক্ষোভের কথা জানানো হয়েছে।
এদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের এই সিদ্ধান্তকে রাজনৈতিক স্টান্টবাজি বলে মনে করছেন বামফ্রন্টের নেতারা। রাজ্যের বিরোধী দলের নেতা সূর্যকান্ত মিশ্র অভিযোগ করেছেন, দফায় দফায় দাম বাড়ানোর দায় তৃণমূল কংগ্রসকে নিতে হবে। সরকারের ওপর তাঁর নিয়ন্ত্রণ নেই তৃণমূল নেত্রীর এই কথা মিথ্যাচার বলে দাবি করেন সিপিআইএমের ছাত্র সংগঠনের শীর্ষ নেতা ঋতব্রত ব্যানার্জি। দক্ষিণ কলকাতার বামফ্রন্টের প্রার্থী এই তরুণ নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরের আগে হঠাৎ তিস্তা চুক্তি নিয়ে বিরোধে শেষ পর্যন্ত তিস্তা চুক্তি হয়নি বাংলাদেশের সঙ্গে। তৃণমূল কংগ্রেসের যদি কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর প্রভাব নাই থাকত, তবে এই চুক্তি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্মত না থাকলেও হতো।
বৃহস্পতিবার মাঝরাত থেকে দেশজুড়ে লিটারপ্রতি পেট্রলের দাম এক রুপি ৩৮ পয়সা বাড়ে। এই মূল্যবৃদ্ধির জেরে কলকাতায় প্রতি লিটার তেলের দাম দাঁড়ায় ৭৩ টাকা ১২ পয়সা। গত ১২ মাসে ১১ দফায় জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে কংগ্রেস পরিচালিত ইউপিএ-টু সরকার।

No comments

Powered by Blogger.