ড.তারেক শামসুর রেহমানের বক্তব্য নিয়ে কিছু কথা by হায়দার আকবকর খান রনো

তৃতীয় বিশ্বের কোনো দেশে খনিজ ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদ থাকলে তার ওপর লোলুপদৃষ্টি পড়বে সাম্রাজ্যবাদের। বস্লজাতিক কোম্পানির স্বার্থে সাম্রাজ্যবাদী দেশের শাসকরা প্রাকৃতিক সম্পদ সমৃদ্ধ দেশে সামরিক আগ্রাসন চালানো থেকে শুরু করে অভ্যন্তরীণ স্যাবোটাজ, খুন, ক্যুদেতা—সবকিছুই করে থাকে। আমরা জানি, ইরাকে ইঙ্গ-মার্কিন সামরিক আগ্রাসনের পেছনে কারণ ছিল ইরাকের তেল সম্পদ।

যে দেশে শাসকশ্রেণীর মাধ্যমে সহজেই প্রাকৃতিক সম্পদ লুট করা যায় সেই দেশে যুদ্ধের দরকার হয় না। বাংলাদেশের এ যাবত্কাল যত শাসক এসেছে সবাই সাম্রাজ্যবাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল। বিশেষ করে গত দুই দশকে আমাদের প্রাকৃতিক গ্যাস অনুসন্ব্দান ও উত্তোলনের ক্ষেত্রে এরশাদ সরকার এবং নব্বই-পরবর্তী সময়ে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সরকার যেভাবে বস্লজাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানিগুলোর সঙ্গে চুক্তি করেছিল তা ছিল পরিপূর্ণভাবে জাতীয় স্বার্থবিরোধী। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি বিষয়গুলো আমাদের নজরে আসে। কারণ, চুক্তিগুলো হয়েছিল গোপনে এবং তখনকার মিডিয়ায় তা নিয়ে কোনো কথাবার্তা হয়নি। ১৯৯৬ সালের দিকে প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক এ ব্যাপারে বিবৃতি প্রদান করে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ১৯৯৬ সালে আমি একটি প্রবন্ব্দ লিখেছিলাম, যা জনকণ্ঠের দুটি সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল। আরও অনেকে লেখালেখি ও কথাবার্তা শুরু করেন। প্রধানত, বাম দলগুলো তত্পর হয়েছিল সাম্রাজ্যবাদী লুণ্ঠনের বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন করতে এবং এর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে। বাম দলগুলোর উদ্যোগে ১৯৯৮ সালে গঠিত হয়েছিল তেল-গ্যাস জাতীয় সম্পদ রক্ষা কমিটি। তখনই প্রকৌশলী মুহাম্মদ শহীদুল্লাহকে আহ্বায়ক করে এই কমিটি গঠিত হয়েছিল। তারপর থেকে এই কমিটি ধারাবাহিকভাবে সাম্রাজ্যবাদের লুণ্ঠনের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করে আন্দোলন করে আসছে। কয়লা, বন্দর ও বিদ্যুতের ক্ষেত্রে যে বিদেশি লুণ্ঠন ও ষড়যন্ত্র আছে তাকেও বিভিন্ন পর্যায়ে যুক্ত করা হয়। ফলে সংগঠনের নামটিও বর্ধিত ও পরিবর্তিত করে খনিজসম্পদ, বন্দর, বিদ্যুতের বিষয়টি নামের মধ্যে যুক্ত করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বিভিন্ন পর্যায়ে গ্যাস সংক্রান্ত পিএসসি চুক্তি করেছিল এবং এশিয়া এনার্জির সঙ্গে ফুলবাড়ী কয়লা খনি সংক্রান্ত চুক্তি করেছিল। স্বাভাবিকভাবে আমাদের আন্দোলনের বর্শা ফলক তাদের বিরুদ্ধেই যাবে। গিয়েছিলও। উভয়পক্ষ থেকে এবং সাম্রাজ্যবাদের দেশীয় এজেন্টদের পক্ষ থেকে তাই জাতীয় কমিটির বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার ও ধারাবাহিক বিভ্রান্তি ছড়ানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত ছিল। বিএনপির প্রয়াত নেতা ও সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান গ্যাস রফতানির পক্ষে যুক্তি হিসেবে বলেছিলেন, ‘মাটির তলে গ্যাস রেখে লাভ কি?’ এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও প্রায় একই কথা বলছেন, গ্যাস উত্তোলন করা না হলে বিদ্যুত্ সঙ্কটের মোকাবিলা কিভাবে হবে (নিউ ইয়র্কে ঠঙঅ-এর সঙ্গে সাক্ষাত্কার)। ভাবখানা এমন যেন আমরা গ্যাস উত্তোলনের বিরোধী। উভয়েই যেটা এড়িয়ে যাচ্ছেন, তা হলো যে শর্তে গ্যাস উত্তোলিত হবে তাতে বাংলাদেশের অংশে কার্যত কিছুই থাকবে না। কয়লা উত্তোলনের ক্ষেত্রেও এশিয়া এনার্জির সঙ্গে চুক্তির শর্ত অনুরূপ জাতীয় স্বার্থবিরোধী। আসল কথাকে গোপন করে মিথ্যা প্রচারণা দ্বারা জনগণকে বিভ্রান্ত করাই ছিল শাসকশ্রেণীর কৌশল। আমি খুবই বিস্মিত ও দুঃখিত হয়েছি, এ সম্পর্কিত ড. তারেক শামসুর রেহমানের নিবন্ব্দ পড়ে। ড. তারেক শামসুর রেহমানকে আমি ব্যক্তিগতভাবে জানি। তিনি মেধাবী গবেষক এবং অবশ্যই দেশপ্রেমিক; কিন্তু গত ১১ অক্টোবর ‘আমার দেশ’-এর পাতায় তার যে লেখা প্রকাশিত হয়েছে, তাতে তেল-গ্যাস খনিজসম্পদ রক্ষা জাতীয় কমিটির বিরুদ্ধে অযৌক্তিক আক্রমণ করা হয়েছে এবং ভুল তথ্য দেয়া হয়েছে। ঠিক যখন সরকার সমুদ্রের গ্যাস সম্পদ বিদেশিদের হাতে তুলে দেয়ার চক্রান্তে লিপ্ত এবং যখন জাতীয় কমিটি সরকারের বিরুুদ্ধে আন্দোলনে রয়েছে সেই সময় তার এই লেখা সরকারকেই সাহায্য করবে। আরও করবে সাম্রাজ্যবাদী মহলকে। ওদের প্রচারণাকেই জোরদার করবে। এটা দুঃখজনক। কারণ ড. তারেক শামসুর রেহমান সরকারের ঘরানার লোক নন এবং সাম্রাজ্যবাদের পক্ষে ওকালতি করা তার ইচ্ছা ছিল না। তার নিজের মধ্যেই যে বিভ্রান্তি রয়েছে সে সম্পর্কে কিছুটা দৃষ্টিপাত করা এবং অযৌক্তিক বক্তব্যের খণ্ডন করাই আজকের এই লেখার প্রধান উদ্দেশ্য। ‘গ্যাস ও কয়লা নিয়ে উন্মুক্ত সংলাপের প্রস্তাব প্রসঙ্গে দুটো কথা’—এই শিরোনামে ড. তারেক শামসুর রেহমান ‘আমার দেশ’ পত্রিকার ১১ অক্টোবর (২০০৯) সংখ্যায় যে দীর্ঘ নিবন্ব্দ লিখেছেন, সেই নিবন্ব্দে বিভিন্ন কথার মধ্যে জাতীয় কমিটির বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে—১. জাতীয় কমিটি কেন টিপাইমুখ, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনা প্রত্যাহার ও ট্রানজিট প্রসঙ্গে বক্তব্য রাখেনি; ২. জাতীয় কমিটি কেন বিরোধীদলের সঙ্গে সংলাপে বসছে না; ৩. জাতীয় কমিটির নেতৃবৃন্দের আচরণ সন্দেহজনক। জাতীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ ‘বিশেষ মহলের’ আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে একাধিকবার বিদেশ সফর করেছেন। ‘আন্দোলন করার জন্য বিদেশ থেকে টাকা এসেছে ...’ ইত্যাদি; ৪. জাতীয় কমিটি কয়লা রফতানির বিরোধিতা করেনি; ৫. উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা খনন করা ভালো; কিন্তু জাতীয় কমিটি বিরোধিতা করছে; ৬. গভীর সমুদ্রে এখন যে শর্তে গ্যাস উত্তোলিত হতে যাচ্ছে তাকে সমর্থন করে ড. তারেক শামসুর রেহমান অভিযুক্ত করছেন জাতীয় কমিটিকে। তিনি বলেছেন ‘... তা না করে আন্দোলন করে কি গভীর সমুদ্রে গ্যাস উত্তোলন বন্ব্দ করে দেব? এতে ক্ষতি কার হবে? কার স্বার্থ রক্ষা করা হবে?’ ওই নিবন্ব্দ থেকে আরও বেশকিছু উদ্ধৃত করা যায়, যার দ্বারা ড. তারেক শামসুর রেহমানের চিন্তার বিভ্রান্তিও ধরা পড়বে। তিনি জাতীয় কমিটির ভূমিকা ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে কিছুই জানেন না। যেমন ধরা যাক, কয়লা রফতানি প্রসঙ্গে। জাতীয় কমিটি যে কয়লা রফতানির বিরুদ্ধে এবং বস্ল লেখায়, সেমিনার, বক্তৃতায় এই বক্তব্য যে কতবার এসেছে, তা তার অজানা। জাতীয় কমিটি যে রাজনৈতিক দল বা মঞ্চ নয়, এটাও তার ধারণার মধ্যে নেই। তাই তিনি সব রাজনৈতিক ইস্যুতে জাতীয় কমিটির বিবৃতি দাবি করেন। তবে ড. তারেক শামসুর রেহমানের জানা উচিত যে, জাতীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ ও সংশ্লিষ্ট দলগুলো প্রায় সব রাজনৈতিক ইস্যুতে বক্তব্য রাখেন। ইঞ্জিনিয়ার শহীদুল্লাহ সাহেবও রাখেন তার ব্যক্তিগত মতামত হিসেবে। সংশ্লিষ্ট দলগুলোও রাখে। যেমন এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সক্রিয় সব দলই টিপাইমুখ বাঁধের বিরোধিতা করে মানববন্ব্দন, গোলটেবিল বৈঠক, বিবৃতি প্রদান ইত্যাদি করেছে। অধিকাংশ দল ভারতের একতরফা ট্রানজিটের বিরুদ্ধে। তবে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনা প্রত্যাহারের প্রশ্নে অধিকাংশ দল তারেক শামসুর রেহমানের সঙ্গে ভিন্ন মত পোষণ করে। আমরা মনে করি যে, শান্তিচুক্তি অনুযায়ী সেখান থেকে সেনাক্যাম্প প্রত্যাহার করা উচিত (স্বাভাবিক ক্যান্টনমেন্ট থাকবে)। জাতীয় কমিটির চরিত্র কি, সে সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই বলেই ড. তারেক শামসুর রেহমান অহেতুক প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন, জাতীয় সংসদে তার প্রতিনিধিত্ব আছে কিনা ইত্যাদি। জাতীয় কমিটি সুনির্দিষ্ট ইস্যুতে আন্দোলনের মঞ্চ। জাতীয় কমিটি বিরোধীদলও নয়, হওয়ার ইচ্ছাও রাখে না। এর কাঠামোও কোনো রাজনৈতিক দলের মতো নয়। এ ধরনের নির্দিষ্ট ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনের মঞ্চ পৃথিবীর বস্ল দেশেই ছিল ও আছে। সেই ইস্যুর প্রশ্নে এই কমিটি তো সরকারের সঙ্গেই আলোচনায় বসবে। যেমন, ফুলবাড়ী কয়লা খনি প্রসঙ্গে যে আলোচনা ও চুক্তি হয়েছিল তা তো তদানীন্তন বিএনপি সরকারের সঙ্গেই হয়েছিল। সেই আলোচনায় আমিও জাতীয় কমিটির পক্ষ থেকে অংশ নিয়েছিলাম। মনে রাখবেন আমি আলোচনায় গিয়েছি এবং চুক্তি স্বাক্ষরের ব্যাপারে যে ভূমিকা রেখেছিলাম, তা কিন্তু আমার রাজনৈতিক দলের নামে নয়, বরং জাতীয় কমিটির নামেই। এই পার্থক্যটুকু বোঝা দরকার। এখন যদি আলোচনা করতে হয়, তাহলে বর্তমান সরকারের সঙ্গেই করতে হবে। ড. তারেক শামসুর রেহমান আবারও বিভ্রান্ত হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা মিলিত হয়ে গভীর সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ব্দান, মডেল পিএসসি-২০০৮ চুক্তির বিরোধিতা করেছেন। দাবি এক হলেও তারা স্বতন্ত্র ফোরাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সরকারের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব করেছেন ও নাম ঠিক করেছেন। এর সঙ্গে জাতীয় কমিটিকে ড. তারেক শামসুর রেহমান গুলিয়ে ফেলেছেন। এদিকে সংসদীয় কমিটি জাতীয় কমিটির সঙ্গে বসার প্রস্তাব দিয়েছেন। আমরা সম্মত হয়েছি। জাতীয় কমিটিও তাদের প্রতিনিধির নাম ঠিক করেছে; কিন্তু সেটা হয়েছে গত ১৩ অক্টোবর, তারেক শামসুর রেহমানের প্রবন্ব্দ প্রকাশিত হওয়ার পর। প্রধান বিরোধীদল বা যে কোনো রাজনৈতিক দল এই ইস্যুতে তাদের সল্ট্যান্ড নিজেরাই ঠিক করবেন; কিন্তু আমরা দেখে আসছি, গ্যাস সংক্রান্ত চুক্তির প্রশ্নে (পিএসসি) সরকারিদলের মতো বিরোধীদলের অবস্থান প্রায় একই। অতীতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ আমলে যে চুক্তিগুলো হয়েছিল সবই ছিল চরমভাবে জাতীয় স্বার্থবিরোধী। পরে ১৯৯৮ সালে হাইকোর্ট বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে উৎপাদন বন্টন চুক্তি করতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বড় মাপের দেশপ্রেমিকের ভূমিকা পালন করেছিল। ২০০৭ সালে তদানীন্তন সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট কেবল সমুদ্রাঞ্চল থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে। তারপরই শুরু হয়েছে সমুদ্র গর্ভের গ্যাসসম্পদ নিয়ে ছিনিমিনি খেলা। এ ব্যাপারে বিএনপির অবস্থান এখনও সুস্পষ্ট নয়। যদিও তারা জাতীয় কমিটির ডাকা হরতালকে নৈতিক সমর্থন দিয়েছিল, তবুও ২০০৮ সালের মডেল পিএসসি বাতিলের কথা বলছেন না। জাতীয় কমিটি কেন বিরোধীদলের সঙ্গে সংলাপ করবে? জাতীয় কমিটি তো রাজনৈতিক প্লাটফর্ম তৈরি করতে যাচ্ছে না। বিএনপি বা যে কোনো রাজনৈতিক দল নিজস্ব ভাবনার ভিত্তিতে তার অবস্থান ঠিক করুক। ড. তারেক শামসুর রেহমান খুব আপত্তিকরভাবে বলেছেন, ‘সরকারের একটি অংশের নির্দেশে’ জাতীয় কমিটি নাকি পরিচালিত হচ্ছে অথবা বলেছেন, ‘যে অভিযোগটি উঠেছে তা হচ্ছে তারা কারও স্বার্থে পরিচালিত হচ্ছে।’ এমনকি তিনি বিদেশি টাকা, বিদেশ সফর ইত্যাদি খুবই আপত্তিকর কথা তুলে এনেছেন। কিছুদিন আগে সরকারের মন্ত্রীও (ক্যাপ্টেন তাজ) জাতীয় কমিটির নেতাদের বিদেশ সফর ও পাসপোর্ট পরীক্ষা করার কথা বলেছিলেন। জোট সরকারের এক সাবেক মন্ত্রীও জাতীয় কমিটির বিরুদ্ধে প্রায় একই কথা বলেছেন যা আবার তারেক শামসুর রেহমানের প্রবন্ব্দে উদ্ধৃত হয়েছে। ড. তারেক শামসুর রেহমান অনেক কথা বলে শেষ পর্যন্ত মডেল পিএসসিতে যে ধারায় সমুদ্রের গ্যাস উত্তোলনের শর্ত আছে, তার পক্ষে ওকালতি করেছেন এবং আন্দোলনের সরাসরি বিরোধিতা করেছেন। আশ্চর্য, সবার অভিযোগের ধারা একই রকম। ড. তারেক শামসুর রেহমান অধ্যাপক আনু মহম্মদ সম্পর্কে সম্প্রতি বিদেশ ভ্রমণের যে তথ্য দিয়েছেন সেটাও সঠিক নয়। বিভ্রান্তিকর তথ্য ও বিদ্বেষাত্মক বক্তব্য দিয়ে তিনি বস্তুত সরকারের হাতকে এবং তাদের বিদেশি প্রভু ও বস্লজাতিক কোম্পানিকে শক্তিশালী করেছেন। ড. তারেক শামসুর রেহমান উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন। এ নিয়ে বিতর্ক করা যেতে পারে; কিন্তু মনে রাখতে হবে যে, বিগত বিএনপি সরকারই জাতীয় কমিটির সঙ্গে যে চুক্তি করেছিল (৩০ আগসল্ট ২০০৬ সাল) সেখানে তারা সম্মত হয়েছেন যে, বাংলাদেশের কোথাও উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করা হবে না। শেখ হাসিনাও এই চুক্তিকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। ড. তারেক শামসুর রেহমান মাত্র ৬ শতাংশ রয়্যালিটির বিরুদ্ধে কয়লা খনি কোনো বিদেশি কোম্পানিকে ইজারা দেয়ার বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতিও একই অভিমত প্রকাশ করেছিল। এমনকি তদানীন্তন সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টা মাহমুদুর রহমানও ফুলবাড়ী প্রকল্পের চুক্তিকে জাতীয় স্বার্থবিরোধী বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। তারপরও ওই চুক্তি অনুযায়ী কয়লা সম্পদ লুট করে নিত এক ইংরেজ বস্লজাতিক কোম্পানি এশিয়া এনার্জি। তাকে ঠেকিয়েছে ফুলবাড়ীর জনগণ। তারপরও আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ লুট করে নেয়ার চক্রান্ত চলছে। আসছে দু’শ’ বছর আগের ইসল্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মতো একবিংশ শতাব্দীর বস্লজাতিক কোম্পানি। তাদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছে একবিংশ শতাব্দীর নতুন মীর জাফরের দল। জাতীয় কমিটি তো তার বিরুদ্ধেই গণসচেতনতা তৈরির কাজটি করে চলেছে। তাই ক্ষিপ্ত হয়েছে বিদেশি বস্লজাতিক কোম্পানি এবং তাদের এ দেশীয় দালালরা। তারাই মিথ্যা ও বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। দুর্ভাগ্যক্রমে ড. তারেক শামসুর রেহমানের প্রবন্ব্দে সেই বিভ্রান্তি আরও কিছুটা বাড়ানোর চেষ্টা হয়েছে মাত্র। ড. তারেক শামসুর রেহমানের মেধা এবং দেশপ্রেমের প্রতি আস্থা আছে বলেই আমি অনুরোধ করব, জাতীয় কমিটির কাজ, ভূমিকা ও অবস্থান সম্পর্কে ভালোভাবে খোঁজ-খবর নিন, কয়লা ও গ্যাস সংক্রান্ত অতীত চুক্তিগুলো এবং বর্তমানের মডেল পিএসসি-২০০৮ সালের শর্তগুলো ভালো করে পরীক্ষা করে দেখুন এবং নিজেকে বিভ্রান্তি থেকে মুক্ত করুন। সাম্রাজ্যবাদ কর্তৃক যে লুণ্ঠন প্রক্রিয়া চলছে, তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ড. তারেক শামসুর রেহমানের মতো পণ্ডিত ব্যক্তিদের দৃঢ় অবস্থান দেশের জন্য কত কাজে আসবে তা বিশেষ ব্যাখ্যা করে বলার প্রয়োজন নেই। কিছু স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি এবং রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে এমন কিছু ব্যক্তি বাদে এই সংগ্রামে সব নাগরিক ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়াবে, এটাই আশা করি।

No comments

Powered by Blogger.