ফিলিস্তিনের জন্য নতুন ধাক্কা-নিরাপত্তা পরিষদে ভোটদানে বিরত থাকবে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কলম্বিয়া

জাতিসংঘের সদস্যপদ পাওয়ার ক্ষেত্রে নতুন ধাক্কা খেল ফিলিস্তিন। যুক্তরাষ্ট্র আগেই বলে রেখেছে, নিরাপত্তা পরিষদে ফিলিস্তিনের আবেদনের ওপর ভোটাভুটির সময় তারা ভেটো দেবে। এবার জানা গেল, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও কলম্বিয়া ভোটদানে বিরত থাকবে। জাতিসংঘের এক কূটনীতিক গত বৃহস্পতিবার এ কথা জানিয়েছেন। তবে এ তিন দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো এ ব্যাপারে কিছু জানায়নি।


ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস গত সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি চেয়ে জাতিসংঘে আবেদন করেন। পূর্ণ সদস্যপদ পেতে ফিলিস্তিনকে নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের মধ্যে কমপক্ষে ৯ সদস্যের সমর্থন লাগবে। এর মধ্যে স্থায়ী পাঁচ সদস্যের মধ্যে কেউ ভেটো দিলে প্রস্তাব বাতিল হয়ে যাবে। জাতিসংঘে আবেদনের পরিবর্তে ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে ফিলিস্তিনকে পরামর্শ দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। ইসরায়েল পশ্চিম তীরে নতুন বসতি নির্মাণের ঘোষণা দেওয়ায় ফিলিস্তিন গত বছর শান্তি আলোচনা থেকে সরে আসে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতিসংঘের ওই কূটনীতিক জানান, সম্প্রতি নিরাপত্তা পরিষদ কমিটির অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে পরিষদের দুই স্থায়ী সদস্য ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং অস্থায়ী সদস্য কলম্বিয়া ফিলিস্তিন বিষয়ে নিজেদের অবস্থানের কথা জানিয়েছে। তাদের এ অবস্থানকে ফিলিস্তিনের জন্য বড় ধরনের ধাক্কা বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। কারণ সদস্যপদ পাওয়ার জন্য ইউরোপীয় দেশগুলোর সমর্থন আশা করেছিল দেশটি। জার্মানিও ফিলিস্তিনের সদস্যপদ পাওয়ার আবেদনে সমর্থন করবে না বলে জানান ওই কূটনৈতিক। তবে তারা ভোটদানে বিরত থাকবে, না সরাসরি ফিলিস্তিনের আবেদনের বিরোধিতা করবে তা নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি। উল্লেখ্য, নিরাপত্তা পরিষদের কমিটি ফিলিস্তিনের আবেদন পর্যালোচনা করছে। এই সপ্তাহেই তারা প্রতিবেদন জমা দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে এ মাসেই ফিলিস্তিনের আবেদনের ওপর নিরাপত্তা পরিষদে ভোটাভুটি হতে পারে।
তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ইউরোপিয় দেশগুলোর এ অবস্থান আসলে ফিলিস্তিনের জাতিসংঘ সদস্যপদ পাওয়ার ব্যাপারে খুব একটা তাৎপর্যপূর্ণ হবে না। কারণ, বিষয়টিতে তাদের সমর্থন থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো সব চেষ্টা বানচাল করে দেবে। ফিলিস্তিন বর্তমানে জাতিসংঘে পর্যবেক্ষক ভূখণ্ড। নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব বাতিল হলে পরে তা সাধারণ পরিষদে তোলা যাবে। সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পেলে ফিলিস্তিন পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রের মর্যাদা পেতে পারে।
ফিলিস্তিনের ব্যাপারে নিরাপত্তা পরিষদে ভোটদানে বিরত থাকার বিষয়টি গতকাল শুক্রবার ব্যাখ্যা করার কথা ছিল ফ্রান্সের। আর ব্রিটেনের পররাষ্ট্র দপ্তরের এক সূত্র জানায়, ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম হেগ আগামী বুধবার পার্লামেন্টে ফিলিস্তিনের ব্যাপারে নিজেদের অবস্থানের বিষয়টি ব্যাখ্যা করবেন। ব্রিটেন ও ফ্রান্স নীতিগতভাবে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রের মর্যাদা পাওয়ার বিষয়টি সমর্থন করে। কিন্তু দেশটির জাতিসংঘ সদস্যপদ পাওয়ার বিষয়টি মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করবে _এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছে তারা। জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের আবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতার বিষয়টি মধ্যপ্রাচ্যে সহিংসতা উসকে দেবে বলেও ধারণা বিশ্লেষকদের।
জাতিসংঘের সাংস্কৃতিক সংগঠন ইউনেসকো গত সপ্তাহে ফিলিস্তিনকে তাদের সদস্য করে নেয়। এর প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র সংগঠনটির তহবিল বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা ইউনেসকোর বার্ষিক তহবিলের প্রায় এক-চতুর্থাংশের জোগান দেয়। গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন বলেন, ইউনেসকোর তহবিল বন্ধের এই সিদ্ধান্ত ফিলিস্তিন বা কারো জন্যই ভালো হবে না। সূত্র : বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকা।

No comments

Powered by Blogger.