ফিলিস্তিনকে 'না' ফ্রান্স ব্রিটেন ও কলাম্বিয়ার-জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদ

পূর্ণ সদস্যপদ পেতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ভোটে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং কলাম্বিয়া ফিলিস্তিনকে সমর্থন দেবে না। তারা ভেটো না দিয়ে ভোটদান থেকে বিরত থাকবে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের শীর্ষ এক কূটনীতিক। এর ফলে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদ পাওয়ার ক্ষেত্রে ৯ ভোট পাবে না ফিলিস্তিন। যা তাদের জন্য বড় ধাক্কা। খবর বিবিসি অনলাইনের।ফ্রান্স ছাড়া অন্য দুটি দেশ সরকারিভাবে এ ধরনের কোনো ঘোষণা দেয়নি। তারা যদি ভোটদান থেকে বিরত থাকে তবে ফিলিস্তিনের জাতিসংঘ সদস্যপদ পাওয়ার ঘটনা কূটনৈতিকভাবে নতুন মোড় নেবে বলে দাবি কূটনীতিকদের।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতিসংঘের ওই কূটনীতিক জানান, ব্রিটেন, ফান্স এবং কলাম্বিয়ার প্রতিনিধি এক ব্যক্তিগত বৈঠকে আমাদের কাছে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। তিনি জানান, জার্মানি ইতিমধ্যেই জানিয়েছে, ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ পাওয়ার আবেদন তারা সমর্থন করবে না। ব্রাজিল, চীন, ভারত, লেবানন, রাশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা প্রকাশ্যে জানিয়ে দিয়েছে, তারা ফিলিস্তিনকে সমর্থন দেবে। তবে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য পর্তুগাল ও বসনিয়া এ বিষয়ে তাদের অবস্থান এখনও স্পষ্ট করেনি। কূটনীতিকরা বলছেন, এ তিনটি দেশ ফিলিস্তিন বিষয়ে ভোটদানে বিরত বা ভেটো দিতে পারে। পশ্চিমা কূটনীতিকরা বলেছেন, নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য নাইজেরিয়া ও গ্যাবন ফিলিস্তিনকে সমর্থন দিতে যাচ্ছে। এমনটা হলে ফিলিস্তিন নিরাপত্তা পরিষদে তাদের কাঙ্ক্ষিত ৯টি ভোট পাবে না।
উল্লেখ্য, নিরাপত্তা পরিষদের ভোটে যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দেবে বলে আগেই ঘোষণা দিয়েছে। নিয়মানুযায়ী নিরাপত্তা পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও যে কোনো একটি স্থায়ী সদস্য দেশ ভেটো দিলে ওই প্রস্তাব পাস হবে না। এ ক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিষদে এ প্রস্তাব পাসের সম্ভাবনা নেই। কিন্তু ব্রিটেন, ফ্রান্স ও কলাম্বিয়ার সমর্থন পেলে তা ফিলিস্তিনিদের জন্য বড় ধরনের কূটনৈতিক অর্জন বলে বিবেচিত হতো। নিরাপত্তা পরিষদের অধিকাংশ সদস্য দেশ সমর্থন দিলে শুধু যুক্তরাষ্ট্র যদি ভেটো দেয় তবে তা দেশটিকে নৈতিকভাবে কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে বলেই ধারণা বিশ্লেষকদের। এ তিনটি দেশ সমর্থন না দিলে ফিলিস্তিনের কূটনৈতিকভাবে বিজয়ের যে সম্ভাবনা ছিল তা আশার আলো দেখবে না। এ বিষয়ে ব্রিটিশ পরররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম হেগ জানিয়েছেন, ফিলিস্তিনকে সমর্থন দেওয়া হবে, নাকি ভেটো দেওয়া হবে_ বিষয়টি এখনও ব্রিটিশ পার্লামেন্টে। তিনি সতর্ক করে বলেন, ফিলিস্তিন যদি জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদ পায় তবে দেশ দুটি শান্তি প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে বড় সুযোগ হারাবে। সহিংসতা ছড়িয়ে পড়তে পারে বলেও সতর্ক করেন তিনি। উল্লেখ্য, আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদের প্রস্তাবটি উঠানো হবে। এরপরই ভোটাভুটির আয়োজন করা হবে।
পূর্ণ সদস্যপদের দাবিতে অনড় ফিলিস্তিন জাতিসংঘে পূর্ণ সদস্যপদ ছাড়া অন্য কিছু মানবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে ফিলিস্তিন। বৃহস্পতিবার ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ আল মালিকি বলেন, জাতিসংঘে বর্তমান মর্যাদা পর্যবেক্ষক হিসেবে উপস্থিতির উন্নতি নয়, পূর্ণ সদস্যপদ চাই। আল মালিকি রামাল্লায় সাংবাদিকদের বলেন, ফিলিস্তিন আরও আগেই পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রের মর্যাদা পেতে পারত। তবে এখন আর ওই বিষয়ে আগ্রহী নয়। ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ফিলিস্তিনি জনগণের এত ত্যাগ, তিতিক্ষা ও প্রচেষ্টার পর আমরা পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রের মর্যাদা চাই না। চলতি বছর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে পূর্ণ সদস্যের স্বীকৃতি চেয়ে আবেদন জানান ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি রাষ্ট্রের বিরোধিতায় বিষয়টি এখনও আলোর মুখ দেখেনি। সম্প্রতি জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা (ইউনেস্কো) ফিলিস্তিনকে পূর্ণ সদস্যের মর্যাদা দিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.