আবার সেই মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষা

রনে মরকেলের বলে ১ রান নিলেন শচীন টেন্ডুলকার, হেলমেটটা খুলে দুই হাতে ব্যাট আর হেলমেট উঁচিয়ে ধরলেন। একটা প্রতীক্ষার প্রহর শেষ হয়ে শুরু হয়ে গেল আরেকটি মাহেন্দ্রক্ষণের দিন গণনা। সেঞ্চুরির সেঞ্চুরিটা কবে করতে পারবেন অনেকের মতে ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা ব্যাটসম্যান? বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১১১ রানের ইনিংস খেলার পথে টেস্ট এবং ওয়ানডে মিলিয়ে শতরানের সংখ্যাটা ৯৯-তে নিয়ে গিয়েছিলেন 'লিটল মাস্টার', তারপর থেকেই শুরু হয়ে যায় জল্পনা-কল্পনা।


কিন্তু বিশ্বকাপের বাকি চার ম্যাচ ও ইংল্যান্ড সফরের টেস্ট সিরিজে যখন অপেক্ষার পালাটা আরো দীর্ঘ হতে থাকল, তখন অনেকেরই মনে জন্ম নিল শঙ্কা_শেষ পর্যন্ত সেঞ্চুরির সেঞ্চুরিটা কি করতে পারবেন টেন্ডুলকার, নাকি ডন ব্র্যাডম্যানের ব্যাটিং গড় ৯৯.৯৪-এর মতো আরো একটা বিখ্যাত ৯৯ যোগ হবে পরিসংখ্যান বইয়ের পাতায়?
এ বছরের ১২ মার্চের পর থেকেই চলছে দিন গোনা। অপেক্ষা সেই জাদুকরী মুহূর্তের। যদিও চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিপক্ষে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে সেঞ্চুরিটা প্রায় হয়েই যাচ্ছিল, কিন্তু ৮৫ রানের ইনিংসে গোটা পাঁচেক 'লাইফ' পেয়ে টেন্ডুলকার রেকর্ড গড়বেন, এমনটা বোধহয় 'ক্রিকেট-ঈশ্বর' ভাবেননি। তাই তো ২১, ৪৪, ৭০, ৭৯ রানে জীবন পাওয়া টেন্ডুলকারের ক্যাচটা অবশেষে তালুবন্দি করেছিলেন শহীদ আফ্রিদি। বিশ্বকাপ জয়ের অতৃপ্তি ঘুচিয়ে খেললেন ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে, সেই ক্লান্তিতেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ২১ বছর ভারতের বিশাল প্রত্যাশা কাঁধে বয়ে নেওয়া ছোট্ট শরীরটাকে দিলেন বিশ্রাম। তরতাজা হয়ে আগভাগেই ইংল্যান্ডে গিয়ে উইম্বলডনের টেনিস ম্যাচ দেখে টেস্ট সিরিজে মাঠে নেমেছিলেন তিনি। সামনে মাইলফলক ছিল অনেক! দুই হাজারতম টেস্ট ম্যাচ, লর্ডসের অনার্স বোর্ডে নাম না থাকার অতৃপ্তি ঘোচানোসহ অনেক কিছুই হাতছানি দিয়ে ডাকছিল টেন্ডুলকারকে। কিন্তু ইংল্যান্ড সফরের ৪ টেস্টের ৮ ইনিংসেও কোনো শতরান হলো না তাঁর। ওভালে শেষ টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে করেছিলেন ৯১। টিম ব্রেসনানের বল প্যাডে লাগার পর আম্পায়ার আঙুল তুলে দিলে হতাশ হয়েছিল স্বাগতিক দর্শকরাও। টেস্ট র‌্যাংকিংয়ের শীর্ষ দল হিসেবে ইংল্যান্ড সফরে এসে নাস্তানাবুদ হয়ে দেশে ফেরার কলঙ্কমাখা স্মৃতিটা হয়তো মন থেকে মুছেই ফেলতে চান টেন্ডুলকার। তাই হয়তো সেঞ্চুরির সেঞ্চুরিটা জমিয়ে রেখেছেন আরো বড় কোনো উপলক্ষের জন্য।
পায়ের পাতার চোটের জন্য ইংল্যান্ডের মাটিতে ও দেশে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে না খেলে অপেক্ষার পালাটা আরো লম্বা করেছেন টেন্ডুলকার। তবে অপেক্ষার খুব বেশি হয়তো আর বাকি নেই। কাল থেকে ফিরোজ শাহ কোটলায় শুরু হচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের প্রথম টেস্ট। এরপর ১৪ নভেম্বর থেকে ইডেনে হবে দ্বিতীয় টেস্ট। সবশেষটি হবে টেন্ডুলকারের নিজের শহর মুম্বাইতে। কেমার রোচ, ফিদেল এডওয়ার্ডসরা গতি কিংবা দেবেন্দ্র বিশু তাঁর ঘূর্ণিজাদুতে তিন টেস্টে টেন্ডুলকারের সর্বোচ্চ ৬ ইনিংসে কতবার হতাশ করতে পারবেন ভারতবাসীকে? ৫ ওয়ানডের সিরিজের হিসাবটা না হয় তোলা থাকল ভবিষ্যতের জন্য। টেস্ট এবং ওয়ানডে মিলিয়ে টানা ১২ ইনিংসে কোনো সেঞ্চুরি নেই, আগামীতে সম্ভাব্য ১১ ইনিংসে কি একটাও করতে পারবেন না টেন্ডুলকার? 'ক্রিকেট-ঈশ্বর' খুব সম্ভবত তাঁর 'একনিষ্ঠ ভক্তে'র প্রতি এতটা নির্দয় নন! এএফপি, ক্রিকইনফো

No comments

Powered by Blogger.