পুলিশ সদস্যের বাড়ি গুঁড়িয়ে দিল সন্ত্রাসীরা

বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার বিলকুল গ্রামে এক পুলিশ কনস্টেবলের বাড়িতে হামলা চালিয়ে বসতঘর গুঁড়িয়ে দিয়েছে একদল সন্ত্রাসী। তারা পুলিশ সদস্যের স্ত্রী, ছেলেমেয়ে ও আত্মীয়স্বজনদের মারধর করে স্বর্ণালংকার, আসবাবপত্রসহ পাঁচ লাখ টাকারমালামাল লুটে নেয়। সন্ত্রাসীদের হামলায় পুলিশ সদস্যের স্ত্রী-সন্তানসহ আটজন আহত হয়েছে। হামলার খবর পেয়েও স্থানীয় থানার পুলিশ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী পরিবার।


গতকাল শুক্রবার দুপুরে পুলিশ কনস্টেবল মো. জনাব আলীর বাড়িতে এ হামলা চালানো হয়। স্থানীয় বাধাল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আ. কাদেরের লোক পরিচয়ে শতাধিক সন্ত্রাসী এ হামলা চালায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় জনাব আলীর স্ত্রী কচুয়া থানায় একটি মামলা করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীরা জানায়, পুলিশ কনস্টেবল জনাব আলী সাতক্ষীরা সদর থানায় কর্মরত। তিনি বাড়িতে না থাকার সুযোগে ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আ. কাদেরের লোক পরিচয়ে একদল সন্ত্রাসী গতকাল দুপুরে লাঠিসোঁটা, দা, কুড়াল ও অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তাঁর স্ত্রী, ছেলেমেয়ে ও অত্মীয়দের মারধর করে বের করে দিয়ে বাড়িটি গুঁড়িয়ে দেয়। সন্ত্রাসীরা কোরবানির গরু কেনার জন্য ঘরে থাকা নগদ ৬০ হাজার টাকা, টেবিল-চেয়ার, খাট, ফ্যান, আড়াই ভরি স্বর্ণালংকার ও আসবাবপত্রসহ পাঁচ লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। সন্ত্রাসীদের মারধরে জনাব আলীর স্ত্রী জাহানারা বেগম, মেয়ে হেনা খাতুন ও হাজেরা খাতুন, ছেলে আবদুল্লাহ, ভাই জাফর হওলাদারের স্ত্রী জরিনা বেগম, আ. রব হাওলাদারের স্ত্রী রোজিনা বেগম ও লুৎফর রহমানের স্ত্রী হালিমা বেগমসহ আটজন আহত হন। তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
জাহানারা বেগম জানান, স্থানীয় চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল কাদেরের লোক পরিচয় দিয়ে জয়নাল হাওলাদারের ছেলে আবু বক্কর হাওলাদার, জয়নালের জামাতা রফিকুল ইসলাম, আকবর হাওলাদারের ছেলে ওমর আলী ও মোসলেম আলী, ওমর আলীর ছেলে কামরুল হাওলাদার ও রবিউল হাওলাদার, সুলতান আলী হাওলাদারের ছেলে হাবিবুর রহমানসহ শতাধিক সন্ত্রাসী এ হামলায় অংশ নেয়। তাদের বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা করা হয়েছে।
জাহানারা জানান, উপজেলার বাধাল ইউনিয়নের বিলকুল গ্রামে তাঁদের জমি নিয়ে তাঁর দাদা শ্বশুরের সৎ ভাইদের ওয়ারিশদের সঙ্গে বিরোধ চলছিল। এ জমি নিয়ে আদালতে মামলা রয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল কাদেরের সহায়তায় সন্ত্রাসীরা তা দখল করার হুমকি দেয়। তিনি অভিযোগ করেন, বৃহস্পতিবার রাতে তিনি কুচয়া থানার ওসি ও বাগেরহাটের এসপিকে বিষয়টি জানিয়ে তাঁদের রক্ষার জন্য আকুতি জানান। কিন্তু পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। হামলার সময় তিনি কুচয়া থানার ওসিকে মোবাইল ফোনে জানালেও ওসি তাঁকে গালাগাল করেন। এ সময় ইউপি চেয়ারম্যান আ. কাদের ও ইউপি সদস্য আ. বারেককে বিষয়টি জানালেও তাঁরা কোনো সহায়তা করেননি। পরে বাগেরহাটের এসপিকে মোবাইল ফোনে জানালে তিনি পুলিশকে পাঠিয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বস্ত করেন। ঘটনার তিন ঘণ্টা পর কুচয়া থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। ততক্ষণে সন্ত্রাসীরা সব গুঁড়িয়ে দিয়েছে। একজন পুলিশ সদস্যের স্ত্রী হিসেবে সন্ত্রাসীদের হামলার ঘটনা জানানোর পরও পুলিশের সহযোগিতা না পাওয়ায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
ঘটনাস্থল পরির্দশনকারী কুচয়া থানার এসআই আলমগীর হোসেন জানান, পুলিশ সদস্য মো. জনাব আলীর বসতবাড়ি সন্ত্রাসীরা একেবারেই গুঁড়িয়ে দিয়েছে।
বাধাল ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল কাদের বলেন, এ ঘটনার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। তাঁর লোকজনের এ ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয় তিনি অস্বীকার করেন।
কুচয়া থানার ওসি এ এস এম খায়রুল আনাম পুলিশ সদস্যের স্ত্রীকে গালাগাল ও অসহযোগিতার কথা অস্বীকার করে বলেন, 'মোবাইল ফোনে খবর পেয়ে তাঁর পরিচয় জানতে চাইলে তিনি পরিচয় জানাননি। এতে পুলিশ ঘটনাস্থলে যেতে সময় লেগেছে।' তবে এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
বাগেরহাটের এসপি খোন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, তাঁকে মোবাইল ফোনে সন্ত্রাসীদের হামলার খবর জানানোর সঙ্গে সঙ্গেই তিনি কুচয়া থানার ওসিকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। কী কারণে সন্ত্রাসীদের হামলা থেকে একজন পুলিশ সদস্যের বাড়ি রক্ষা করা যায়নি, তা তিনি খতিয়ে দেখবেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

No comments

Powered by Blogger.