প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তিতে কালিমা লেপন করেছেন : ড. মোশাররফ

নারায়ণগঞ্জে সেনা মোতায়েনের বিষয়ে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে জড়িয়ে বক্তব্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন বলে মনে করেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। একইসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেনা মোতায়েন না করার স্পষ্ট ব্যাখ্যাও দাবি করেন তিনি।খালেদা জিয়া জয়ের আশায় নারায়ণগঞ্জে সেনা চেয়েছিলেন—প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে গতকাল সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। এর মাধ্যমে দেশের সেনাবাহিনীর গৌরবোজ্জ্বল ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন হয়েছে।


‘গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে ৭ নভেম্বরের চেতনা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের সংগঠন ছাত্রদল ফোরাম।
৩০ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন ২৮ অক্টোবর সকাল থেকে নির্বাচনী এলাকায় চার কোম্পানি সেনা মোতায়েনের নির্দেশনা দেয়। কিন্তু তা না হওয়ায়
ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে কমিশন ও সরকার। প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে দাবি করেন, সেনা মোতায়েন না হওয়ায় ‘সংবিধানের ব্যত্যয় ঘটেনি’। শেখ হাসিনা বলেন, তিনি (খালেদা জিয়া) আশা করেছিলেন, সেনাবাহিনী এসে ভোট চুরি করে তাদের জিতিয়ে দেবে। সেনাবাহিনীর দায়িত্ব কি ভোট চুরি করা?
শেখ হাসিনার ওই বক্তব্যের সমালোচনা করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্য দেশের জন্য ক্ষতিকর। আমরা এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তিনি (শেখ হাসিনা) এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তিতে কালিমা লেপন করেছেন।
তিনি বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, ভোট চুরির জন্য নয়, জনগণের ভোট দেয়ার অধিকার নিশ্চিত করতেই নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়, ভোট চুরির সঙ্গে সেনাবাহিনী জড়িত থাকে না। নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী সেনা মোতায়েনে সহযোগিতা না করার অপরাধবোধ থেকেই হয়তো প্রধানমন্ত্রী এখন আবোল-তাবোল বলছেন।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সরকার নির্বাচন কমিশনকে সেনাবাহিনী দিতে বাধ্য। নির্বাচন কমিশনের অনুরোধ অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জে সেনা মোতায়েন না করে প্রধানমন্ত্রী সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যাও দাবি করেন তিনি।
ড. মোশাররফ নরসিংদী প্রসঙ্গ উত্থাপন করে বলেন, নরসিংদীতে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণেই পৌর মেয়র লোকমান হোসেনকে হত্যা করা হয়েছে। যে মন্ত্রীর সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব ছিল, সে মন্ত্রীর ভাইকে আসামি করে নিহতের ছোট ভাই মামলাও করেছেন। এখানে বিএনপির কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তবুও সরকার ‘উদর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানো’র জন্য বিএনপি নেতা খায়রুল কবির খোকনকে গ্রেফতার করেছে।
তিনি অবিলম্বে খোকনের মুক্তি ও প্রকৃত অপরাধীর শাস্তি দাবি করেন। এ সরকারের পতনের জন্য বেগম খালেদা জিয়ার ডাক দেয়া আন্দোলনে সবাইকে শরিক হওয়ার আহ্বানও জানান তিনি।
এই আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আহ্বায়ক ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি এমপি, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল, সাবেক ছাত্রদল সভাপতি আজিজুল বারী হেলাল, ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান।

No comments

Powered by Blogger.