গরুর হাট-ভিড় বাড়লেও বিক্রি বাড়েনি

গারগাঁওয়ে কোরবানির পশুর হাটে ইজারাদারের প্রতিনিধি আকরাম হোসেন বলেন, 'লোকজন আজও (শুক্রবার) গরু দেখতেই হাটে আসছে বেশি। আগে গরু কিনে রাখার মতো জায়গা নেই বলে এমন অবস্থা। তবে কাল (শনিবার) ও পরশু (রবিবার) হাট পুরোপুরি জমবে।'কুষ্টিয়া থেকে আজমপুর হাটে গরু বেচতে আসা কোরবান আলী ও রহমত জানান, বিক্রি না হওয়ায় তাঁদের আরো ৫০টি গরু রয়ে গেছে।


গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কোরবানির পশুর হাটগুলো ঘুরে দেখা গেল, ক্রেতাদের ভিড় যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে গরু, ছাগলসহ কোরবানির পশুর সমারোহ। হাটগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহলও ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে বিক্রেতা ও হাটের ইজারাদাররা জানান, মানুষের ভিড় বাড়লেও গতকাল বিক্রি তেমন হয়নি। ক্রেতারা হাটে আসা শুরু করেছেন মাত্র। আজ শনিবার ও আগামীকাল রবিরারই পশু বিক্রি হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইজারার শর্ত অনুযায়ী গতকাল থেকেই অস্থায়ী হাটে বিক্রি শুরু করার কথা। ছুটির দিন হওয়ায় গতকাল থেকেই হাট জমে উঠবে বলে ধারণা ছিল সংশ্লিষ্টদের। কিন্তু আশানুরূপ বেচাকেনা হয়নি।
আগারগাঁও, তালতলা, বনানী, আজমপুর, বাড্ডা নতুনবাজার হাট ঘুরে দেখা গেছে, ইজারার বরাদ্দকৃত জায়গা অতিক্রম করে রাস্তা ও ফুটপাতে গরু-ছাগল রাখা হয়েছে।
রাজধানীর সবচেয়ে বড় কোরবানির পশুর হাট গাবতলীতে গতকাল দুপুরে কথা হয় কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে। কেরানীগঞ্জের আটিপাড়া থেকে গরু কিনতে আসা মোহাম্মদ সিরাজ বলেন, 'খালি বেশি দাম চায়। তবু নিয়া নিলাম। কোরবানির গরু তো, বুঝেন না। দাম তো ভাবতাছি না।' সিরাজ ২৯ হাজার ৮০০ টাকা দিয়ে একটি গরু কিনেছেন। বড় গরুর দাম বেশি চাওয়ার কারণে তিনি ছোট বা মাঝারি আকারের গরু কেনার সিদ্ধান্ত নেন।
গাবতলী হাটের ইজারাদার লুৎফর রহমানের প্রতিনিধি রাকিব ইমরান জানান, হাটে নিয়মশৃঙ্খলা বজায় রাখা হচ্ছে। প্রতিটি হাসিলঘরে জাল টাকা পরীক্ষার মেশিন বসানো হয়েছে।
গাবতলী হাটের সামনে এঙ্েিলন্ট করপোরেশন ও সোনালী ব্যাংকের জাল টাকা পরীক্ষার কাউন্টারে ভিড় করেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো জাল নোট পাওয়া যায়নি।
তালতলা হাট থেকে ৭৩ হাজার টাকা দিয়ে একটি ষাঁড় কিনেছেন মিরপুর ১০ নম্বরের বাসিন্দা লোকমান হোসেন। তিনি জানান, হাটে বড় গরুর দাম বেশি। তা ছাড়া সব গরুর দামই বিক্রেতারা বেশি হাঁকাচ্ছে। তবে বিক্রি করছে কম দামেই। কয়েকজন ক্রেতা জানান, দাম এবার গত বছরের মতোই। বনানী-কাকলী হাটে গুলশান কালাচাঁদপুর থেকে আসা ক্রেতা রহমত আলী জানালেন, গত বছরের চেয়ে একটু বেশি দাম চাইছে বিক্রেতারা। তবে আগামীকাল দাম কমবে এই আশায় গরু কেনেননি তিনি।
গাবতলী হাটে ৭০টি বড় গরু উঠিয়েছেন ব্যবসায়ী আনোয়ার মণ্ডল। তিনি জানান, বড় গরু বিক্রি হচ্ছে কম। গতকাল বিকেল পর্যন্ত চারটি বড় গরু বিক্রি করেছেন তিনি। সবচেয়ে বড় গরুটি বিক্রি করেছেন ১০ লাখ টাকায়। তিনি আরো জানান, আর খুব বেশি গরু রাজধানীতে আসার সম্ভাবনা নেই।
গরু ব্যবসায়ীরা জানান, রাজধানীতে গরু নিয়ে আসতে হয়রানি ও চাঁদাবাজি হচ্ছে নির্দিষ্ট কিছু পয়েন্টে। চুয়াডাঙ্গা থেকে গাবতলীর হাটে ট্রাকে করে (কুমিল্লা ট-৩৫১৩) ৩৫টি গরু নিয়ে আসেন মজনু ব্যাপারী। ট্রাকে গরু বহন করে নিয়ে আসা রাখাল আয়নাল জানালেন, পাটুরিয়া ফেরিঘাটে সব গরুর ট্রাককেই পুলিশকে টাকা দিতে হয়। তাঁদেরও দিতে হয়েছে। তবে টাকার পরিমাণ জানাননি আয়নাল।
হাটগুলোতে গরুর পাশাপাশি ছাগলও বিক্রি হচ্ছে। তবে এবার ছাগলের দাম বেশি বলে জানান ক্রেতারা। আজমপুর হাট থেকে আট হাজার টাকা দিয়ে একটি খাসি কিনেছেন ১০ নম্বর সেক্টরের বাসিন্দা আবদুল লতিফ। গাবতলীর হাট থেকে ৯ হাজার টাকায় খাশি কিনেছেন টোলারবাগের বাসিন্দা তানভীর হোসেন। তিনি বলেন, গরুর দামের চেয়ে খাশির দাম বেশি বেড়েছে।
জানা গেছে, অনিয়ম ঠেকাতে ঢাকা সিটি করপোরেশনের (ডিসিসি) ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করলেও তার কোনো সুফল মিলছে না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত হাজারীবাগ, জিগাতলা ও কমলাপুর হাটের বর্ধিত অংশ এবং অবৈধ হাট উচ্ছেদ করেন ডিসিসির ভ্রাম্যমাণ আদালত। উত্তরার আজমপুরেও অভিযান চালান অপর একটি আদালত। অভিযানকালে ডিসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা গোলাম রহমান উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, আগামী দুই দিনও একইভাবে অভিযান চলবে।

No comments

Powered by Blogger.