আজ পবিত্র হজ : আরাফাতে সমবেত পঁচিশ লক্ষাধিক হাজী by রুমী সাঈদ

জ পবিত্র হজ। মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে বড় ধর্মীয় জমায়েত। লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক অর্থ ‘হে আল্লাহ আমি হাজির তোমার দরবারে’ ধ্বনিতে মুখরিত গোটা আরাফাতের ময়দান। শুভ্র সেলাইবিহীন এক কাপড়ে সবাই হাজির হন মহান আল্লাহর দরবারে তার নৈকট্য লাভের আশায়। লাখ লাখ মানুষের পদচারণা আর হাজার হাজার তাঁবুতে পরিপূর্ণ মিনা এখন মানুষ আর তাঁবুর শহর। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আসা ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের স্রোত এসে মিশেছে মহানবী রাসুলের (সা.) বিদায় ভাষণের স্মৃতিবিজড়িত আরাফাতে।


বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের নজিরবিহীন মহামিলনের দিন আজ উকুফে আরাফাতে। আজ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাজীরা আরাফাতে অবস্থান করার মধ্য দিয়ে পালন করবেন হজের প্রধান আনুষ্ঠানিকতা। মধ্যাহ্নের পর মসজিদে নামিরা থেকে হজের খুতবা দেবেন সৌদি আরবের গ্রান্ড মুফতি শেখ আবদুল আজিজ বিন আবদুল্লাহ আল শেখ। দৃষ্টিহীন এ ইমাম তুলে ধরবেন মুসলিম বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতি ও কোরআন-হাদিসের আলোকে করণীয় দিকনির্দেশনা। হাজীরা জামাতবদ্ধ হয়ে একই আজানে ভিন্ন ভিন্ন একামতে একসঙ্গে আদায় করবেন জোহর ও আসরের নামাজ। হাদিস মোতাবেক
আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত দোয়া কবুলের সময় বিগত দিনের গুনাহ খাতা মাফ ও আল্লাহর শ্রেষ্ঠতম পুরস্কার জান্নাত লাভের আশায় প্রার্থনামগ্ন থাকবেন হাজীরা। সূর্যাস্তের পর পরই মুজদালেফার উদ্দেশে ত্যাগ করবেন আরাফাতের ময়দান। মুজদালেফায় পৌঁছে একই সঙ্গে আদায় করবেন মাগরিব ও এশার নামাজ। রাত যাপন করবেন খোলা আকাশের নিচে। রোববার ফজরের নামাজের পর আবার প্রত্যাবর্তন করবেন মিনায় এবং সেখানে শয়তানকে কংকর নিক্ষেপ ও কোরবানি আদায়ের মাধ্যমে পরিত্যাগ করবেন ইহরাম।
সৌদি সরকারের তথ্য অনুযায়ী এ বছর ২৫ লক্ষাধিক মুসলমান হজব্রত পালন করবেন। এর মধ্যে ১৮ লাখ হাজী বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছেন এবং সঙ্গে রয়েছেন ৭ থেকে ৮ লাখ অভ্যন্তরীণ হাজী। সৌদি আরবের অভ্যন্তরে বসবাসকারী বিদেশিদের হজের জন্য বিশেষ অনুমতি নিতে হয়। একজন বিদেশি প্রতি ৫ বছরে একবার হজের অনুমতি পেয়ে থাকেন। অনুমতিপ্রাপ্ত ছাড়া বিদেশিদের ঠেকানোর জন্য মক্কায় প্রবেশের পথগুলোতে বসানো হয়েছে একাধিক চেক পোস্ট। অনুমতি না থাকায় ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে কয়েক হাজার হজযাত্রীকে। হজের অনুমতিপ্রাপ্ত স্টিকার ছাড়া কোনো গাড়ি মক্কা এলাকায় প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না।
মধ্যপ্রাচ্যে চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে এ বছর নেয়া হয়েছে নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হয়েছে মিনা, আরাফাত ও মুজদালেফাসহ মক্কা এবং তার আশপাশের এলাকা। আকাশে সার্বক্ষণিকভাবে টহল দিচ্ছে নিরাপত্তা হেলিকপ্টার। বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নিরাপত্তা সেনা সদস্যসহ হাজীদের নিরাপত্তা বিধানে নিয়োজিত রয়েছে ১ লাখ নিরাপত্তা কর্মী। ৬ হাজার গাড়িতে টহল ডিউটি করছে নিরাপত্তা বাহিনীর ২২ হাজার সদস্য। প্রতি বছর ইরানি হাজীরা মক্কায় মিছিল করে থাকেন। এ বছর এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে সবাইকে বিরত থাকার জন্য হুশিয়ার করে দিয়েছে সৌদি সরকার। সৌদি সরকার এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলেও জানিয়েছে গণমাধ্যমকে।

No comments

Powered by Blogger.