পাকিস্তানে সেনা সদরে তালেবান হামলা

পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে সেনা সদর দফতরে শনিবার চরমপন্হী বন্দুকধারীরা যে হামলা চালায় তাকে ভয়ঙ্কর বললেও কম বলা হয়। সে হামলার প্রথমদিনে ৬ জন সেনা সদস্য এবং ৪ জন হামলাকারী নিহত হয়। নিহতদের মধ্যে একজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেলও ছিলেন। দু'জন বন্দুকধারী সেনা সদর কমপ্লেক্সের একটি কক্ষে বেশ কয়েকজন সেনা সদস্যকে জিম্মি করে রেখেছিল।

স্বস্তির ব্যাপার হচ্ছে, গতকাল রোববার জিম্মিদের (সংখ্যায় ৪০ জনের মতো) উদ্ধার এবং শেষ দু'জন হামলাকারীর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এই রুদ্ধশ্বাস নাটকের যবনিকাপাত ঘটে। তবে রাওয়ালপিন্ডির একেবারে সেনাসদরে জঙ্গিদের হামলা একথা প্রমাণ করে যে, জঙ্গি দমনে সরকারের তাৎপর্যপূর্ণ সাফল্য সত্ত্বেও পাকিস্তানে জঙ্গি হামলার ঝুঁকি রয়ে গেছে। এক সরকারি কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে সিএনএন জানিয়েছে, তালেবান জঙ্গিগোষ্ঠী এ হামলার দায় স্বীকার করেছে। এর দু'দিন আগে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের রাজধানী পেশোয়ারে এক আত্মঘাতী বোমা হামলায় ৫০ জনের মতো নিহত হয়। ওই হামলাও তালেবান জঙ্গিদের কাজ বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। যদি তাই হয়, তবে এগুলো অবশ্যই প্রতিশোধমূলক হামলা। পাক সেনাবাহিনীর আক্রমণে সেদেশের তালেবান জঙ্গিরা এখন অনেকটা ছত্রভঙ্গ অবস্থায় রয়েছে। জঙ্গিরা এক সময় সোয়াত এলাকা দখল করে খোদ রাজধানী ইসলামাবাদকে কিছুটা হলেও হুমকির মধ্যে ফেলে দিয়েছিল। কিন্তু সেনাবাহিনীর পাল্টা আক্রমণে টিকতে না পেরে তালেবান জঙ্গিরা সোয়াত ছেড়ে পালিয়েছে। সেখানে ফিরে এসেছে শান্তি। জঙ্গিদের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ওয়াজিরিস্তানে একের পর এক পরিচালিত সেনা অভিযানেও সাফল্য এসেছে। বিশেষ করে মার্কিন বিমান হামলায় প্রধান তালেবান নেতা বায়তুল্লাহ মেহসুদ নিহত হওয়ায় তালেবানদের সাংগঠনিক কাঠামো নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। সর্বোপরি পাকিস্তানে জঙ্গিবিরোধী জনমত ক্রমেই প্রবল হচ্ছে। শুধু তাই নয়, সাধারণ মানুষও জঙ্গিবিরোধী সেনা অভিযানের সমর্থনে সক্রিয়ভাবে এগিয়ে আসতে শুরু করেছেন। এই পটভূমিতে পাকিস্তানে একের পর এক জঙ্গি হামলা সেখানকার জঙ্গিদের অস্তিত্ব রক্ষার মরিয়া চেষ্টার বহির্প্রকাশ হতে পারে। এর পেছনে বিদেশি মদত থাকার আশঙ্কাও একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। যে কোনো দেশে সন্ত্রাসী হামলা হলে এর পেছনে বিদেশি মদতের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হয় এবং বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়া মুখর হয়ে ওঠে। কিন্তু পাকিস্তানের বেলায় মর্মান্তিক বাস্তবতা হচ্ছে, জঙ্গি তৎপরতায় ক্ষতবিক্ষত হওয়া সত্ত্বেও এবং সাধ্যের বাইরে গিয়ে ওয়ার অন টেরর-এ সহযোগিতা করার পরও পাকিস্তানকে নিজের মাটিতে সন্ত্রাসের মোকাবিলা করতে হচ্ছে কার্যত এককভাবে। জঙ্গিপনা দমনে পাকিস্তানের প্রয়াসের প্রতি আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও সহানুভূতির ঘাটতি এত স্থূলভাবে প্রকট যে, ব্যাপারটা সেদেশে ঘাপটি মেরে থাকা জঙ্গিদের আরও হিংস্র হতে প্রলুব্ধ করতে পারে। দেশটিতে একের পর এক রক্তক্ষয়ী সন্ত্রাসী হামলার এটাও একটা হেতু হলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। আমরা বারবার দৃঢ়তার সঙ্গে বলে আসছি যে, সন্ত্রাস মানবতার শত্রু। কোনো অজুহাতেই সন্ত্রাসী তৎপরতা সমর্থনযোগ্য নয়। যে কোনো দেশে সন্ত্রাসী হামলা হলে সে আঘাতে গোটা মানব জাতিকেই ক্ষতবিক্ষত করে। এই অবস্থান থেকে আমরা পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানাই এবং আশা করি, পাকিস্তানের সরকার ও জনগণ শেষ পর্যন্ত সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে জয়যুক্ত হবে।

No comments

Powered by Blogger.