সেঞ্চুরির প্রান্তে তামিম... by জগন্নাথ বিশ্বাস

ক্ষ্য দূর_ অলক্ষ্যে মিলিয়ে যাওয়ার পথে। একা দাঁড়িয়ে আছেন তামিম ইকবাল। ৮২ রান নিয়ে। প্রয়োজন ৩৪৪ রান। টেস্ট ক্রিকেটের পঞ্চম দিনে যা তোলা প্রায় সাধ্যাতীত। দুয়ারের পরাজয় তাই অপেক্ষমাণ; কিন্তু নাঈম ইসলাম যে বললেন, আমরা জয়ের আশা করছি!করতেই পারেন। কারণ আশা শুধু মিছে ছলনা নয়, শক্তিও। কেবল চতুর্থ দিনের কথাই ভাবুন। আপনার মনেও আশাবাদের রঙ বাহার ছড়িয়ে পড়তে বাধ্য। গতকাল ছিল বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্ট সিরিজের সবচেয়ে ফলপ্রসূ দিন। বেশি রান উঠেছে। তুলনায় উইকেট পতন হয়েছে কম। ব্যক্তিগত অর্জনও নেহায়েত মন্দ নয়। ড্যারেন ব্রাভো মাত্র ৫ রানের জন্য ডাবল সেঞ্চুরি করতে পারেননি।


তামিমও সেঞ্চুরির সামনে দাঁড়িয়ে। চন্দরপল হারানো অতীত মনে করিয়েছেন। অঙ্কের হিসাবে গতকাল রান উঠেছে ৩৪০। দুই দলের উইকেট পড়েছে মাত্র ৫টি। পিচও আপাতদৃষ্টিতে ব্যাটিংবান্ধব। টার্ন নেই। নেই আনইভেন বাউন্সও। রানও উঠছে প্রস্রবণের মতো। তাছাড়া মিরপুরেই শ্রীলংকার বিরুদ্ধে পাঁচ শতাধিক রান তাড়া করে ৪১৩ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। এই সব হিসাব হয়তো আশাবাদী করেছে নাঈমকে; কিন্তু আশাবাদ দিয়ে তো আর ম্যাচ জেতা যায় না। বাস্তবের জমিন কণ্টকাকীর্ণ। চতুর্থ ইনিংসে ৫০৮ রান তাড়া করে টেস্ট জিততে হলে একাধিক সিংহহৃদয় চাই। কেবল অঙ্কের হিসাব বিস্ময় সৃষ্টির পক্ষে যথেষ্ট নয়।
তাহলে মিরপুর টেস্টের ভবিতব্য কী? যা অবস্থা, তাতে লেখা যেতেই পারে পরাজয়ের সামনে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ। হাতে ৭ উইকেট নিয়ে কেমন লড়াই করতে পারে, সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা। তামিমের সেঞ্চুরি দেখার অপেক্ষাটাও গৌণ নয়।
এ টেস্টের গতিপথ আগেই নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলার এবং ব্যাটসম্যানরা। মুশফিকদের প্রমত্ত ব্যাটিংয়ের দায়ও কম ছিল না। প্রথম ইনিংসের সেই ভাব-উন্মাদনা বোধহয় পরের ইনিংসেও টেনে এনেছে বাংলাদেশ। স্রেফ স্ট্রোক প্লের ওপর ভর করে ৪৭ ওভারে তুলেছে ১৬৪ রান। হারিয়েছে ৩ উইকেট।
অথচ বড় রান তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশের শুরুটা ধীর-স্থির ও প্রশান্ত হওয়াটাই উচিত ছিল। বিশেষ করে প্রথম ইনিংসের ব্যর্থ আক্রমণের পর। টেস্ট ক্রিকেটে সাবধানী আক্রমণ চলতেই পারে; কিন্তু টেকসই আক্রমণের ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ যে উইকেট ধরে রাখা, এটাও ভুলে গেলে চলবে না। বাংলাদেশ তাদের প্রথম ইনিংস থেকে এ শিক্ষাটা নিয়েছে বলে মনে হলো না। তাই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫ উইকেটে ৩৮৩ রান নিয়ে ইনিংস ঘোষণা করার পর রোচ-অ্যাডওয়ার্ডদের অকার্যকর শর্ট বলের বিরুদ্ধে তামিম-ইমরুলরা অপ্রয়োজনীয় স্ট্রোক খেলার লোভ সামলাতে না পেরে বারবার পরাস্ত হলেন। আপার কাট করতে গিয়ে অল্পের জন্য রক্ষা পেলেন। স্কোর বোর্ডে রান কিছু উঠেছে বটে; কিন্তু অ্যাডওয়ার্ডকে খোঁচা দিতে গিয়ে ফার্স্ট স্লিপে অন্য অ্যাডওয়ার্ডের তালুবন্দি হয়েছেন ইমরুল। চা বিরতির পর রাকিবুলের আউট ছিল সবচেয়ে হাস্যকর। আগের বলেই লেটকাট করতে গিয়ে অল্পের জন্য বেঁচে গেলেন। ঠিক পরের বলেই স্যামুয়েলসের কুইকার ডেলিভারিতে ড্যারেন স্যামির তালুবন্দি।
ব্রাভো আর চন্দরপলের কল্যাণে ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেঁৗছে গেছে অলঙ্ঘনীয় উচ্চতায়। যা অতিক্রম করার দুঃসাধ্য স্বপ্ন নিয়ে আজ মাঠে নামবেন তামিম-মুশফিকরা।

No comments

Powered by Blogger.