বিচার বিভাগ নামেই স্বাধীন : যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের নামে চলছে প্রহসন - খন্দকার মাহবুব

সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, বিচার বিভাগ শুধু নামেই স্বাধীন। বিচার বিভাগের নিয়ন্ত্রণ এখনও সরকারের হাতেই। নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথক হলেও বিচারপ্রার্থী জনগণের আশা পূরণ হয়নি। কাগজে-কলমে পৃথক হলেও বিচার বিভাগ এখনও নির্বাহী বিভাগের অধীন রয়ে গেছে। নিম্ন আদালতের বিচারক নিয়োগ, পদায়ন, প্রমোশন, বদলি সবকিছু সুপ্রিমকোর্টের মাধ্যমে হওয়ার কথা থাকলেও তা আইন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে হচ্ছে। তিনি গতকাল সুপ্রিমকোর্টে এক ব্রিফিংয়ে বিচার বিভাগ নিয়ে তার আক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।


এর আগে সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধনে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যানকে নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এ ট্রাইব্যুনালে বিচারের নামে প্রহসন চলছে। এ বিচারের ফরমায়েশি রায় কারও কাছেই গ্রহণযোগ্য হবে না। দেশবাসী তা কখনোই মেনে নেবে না। দেশের সমস্যা থেকে জনগণের দৃষ্টি অন্যত্র সরিয়ে নিতে সরকার এ প্রহসনের বিচার অনুষ্ঠান করছে।
সুপ্রিমকোর্টে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে তিনি আরও বলেন, বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের পর এর জন্য অবকাঠামো, জনবল, অর্থ কোনোটিই হয়নি। সুপ্রিমকোর্টের জন্য একটি পৃথক সচিবালয় হয়নি। এছাড়া মাসদার হোসেন মামলার রায়ের ১২টি নির্দেশনাও প্রতিপালন হয়নি। এক কথায় বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ থেকে জনগণ উপকার পায়নি। যেসব বিচারকের বিরুদ্ধে আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ রয়েছে, তাদের ব্যাপারে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে অভিযোগ দেব। এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। যারা বিচারকের আসনে বসে কোড অব কন্ডাক্ট ভঙ্গ করবে তাদের বিরুদ্ধে আমরা যথাসময়ে অভিযোগ করব। সংবাদ সম্মেলনে এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বারের সম্পাদক ব্যারিস্টার মো. বদরুদ্দোজা বাদল, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দীন খোকন এমপি প্রমুখ।
আইনজীবী সমিতির সভাপতি বলেন, বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ হলেও মানুষ ন্যায়বিচার পায়নি। নিম্ন আদালতের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব এবং নির্বাহী কর্তৃত্বের প্রভাবে থাকায় মানুষ ন্যায়বিচার পাচ্ছে না। নিম্ন আদালতের বিচারকরা এখনও আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে রয়েছে। পৃথকীকরণের আগে নিম্ন আদালতের যে অবস্থা ছিল এখনও সে অবস্থায় রয়েছে। নিম্ন আদালতের বিচারকদের বসার জায়গা নেই। একজন বিচারকের কক্ষে আরও দুজন বিচারককে ভাগাভাগি করে বসতে হচ্ছে। এতে নিম্ন আদালতের মামলা নিষ্পত্তির হার কমে গেছে। তিনি বলেন, সুপ্রিমকোর্ট আগে থেকেই স্বাধীন ছিল। কিন্তু বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের পর হাইকোর্টের বিচারপতি নিয়োগের নীতিমালা করা হয়নি। এখন বিচারক নিয়োগের নীতিমালা না থাকায় আত্মীয়, ঘনিষ্ঠ এবং রাজনৈতিকভাবে বিচারক নিয়োগ করা হচ্ছে। বর্তমান সরকারের সময় হাইকোর্টে ৫২ জন বিচারপতি নিয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু এ নিয়োগ সম্পর্কে আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরাই বলছেন, অদক্ষ ও বিতর্কিতদের বিচারপতি নিয়োগ করা হয়েছে। যাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে তাদের অনেকেই অদক্ষ এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা নিম্নমানের। প্রায় দেড়শ’ বিচারককে ডিঙিয়ে নিম্ন আদালতের একজনকে হাইকোর্টের বিচারপতি নিয়োগ করা হয়েছে। এজন্য নিম্ন আদালতের বিচারকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এতে প্রমাণ হয়েছে দক্ষতা, যোগ্যতা ও সতাতার ভিত্তিতে পদায়ন হয় না। বিচারকরা যদি দক্ষ ও অভিজ্ঞ না হয়, তাহলে মানুষ ন্যায়বিচার পাবে না। মানুষ মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তিনি বলেন, মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।
ব্যারিস্টার মো. বদরুদ্দোজা বলেন, বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ হয়েছে চার বছর। যার মধ্যে তিন বছর কেটেছে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। তবে পৃথকীকরণের ফল না এলেও উচ্চ আদালতের বিচারকরা এখন স্বাধীন। বিদেশে গিয়ে কোনো কোনো বিচারক টিভি টকশোতে বক্তব্য দিচ্ছেন। এগুলো নজিরবিহীন ঘটনা। একজন বিচারপতি বিমানের ইকোনমিক ক্লাসের টিকিট কেটে বিজনেস ক্লাসে বসছেন। তার জন্য আবার বিমানে কোর্ট বসানোর কথা বলেছেন। তিনি বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক বলেছেন, বিচারকদের হাত-পা বেঁধে সাঁতার কাটতে বলা হচ্ছে। ২০৬ জন জ্যেষ্ঠ বিচারককে ডিঙিয়ে ঢাকা জেলা জজ নিয়োগ করা হচ্ছে। সম্প্রতি তাকে আবার হাইকোর্টের বিচারপতি করা হয়েছে। ১০ বিচারপতি মামলার রায়ে হাইকোর্টের বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে নীতিমালা করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু নীতিমালা না করেই বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে মাসদার হোসেন মামলার রায়কে বাইপাস করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সাজা দিচ্ছে, যা পলিটিকালি ব্যবহারের ব্যাপক অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বলতে কিছু থাকবে না।
মানববন্ধনে খন্দকার মাহবুব : ‘জাগ্রত জনতা ফোরাম আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ওপর সরকার রাজনৈতিক কারণে নির্যাতন চালিয়েছে। নির্যাতনের কথা তিনি আদালতে বলেছেন এবং নির্যাতনের চিহ্নও দেখিয়েছেন। সরকারের এ ধরনের বর্বর আচরণে জাতি হতবাক। তিনি বলেন, এ ট্রাইব্যুনালে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা হচ্ছে। মানববন্ধন কর্মসূচিতে আরও অংশ নেন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এনডিপি) মহাসচিব আলমগীর মজুমদার, জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দলের চেয়ারম্যান এমএম মেহবুর রহমান, সম্মিলিত গণতান্ত্রিক জোটের সভাপতি এমএম মেহবুব রহমান, জাগ্রত জনতা ফোরামের সভাপতি শহিদ চৌধুরী প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.