আইভীকে অভিনন্দন, শামীমকে শুভেচ্ছা, তৈমুরকে ধন্যবাদ... by সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল

ইভী আ’লীগের সমর্থন ছাড়াই বিপুল ভোটের জোয়ারে বিজয় অর্জন করে দেখিয়ে দিলেন, জনগণই ক্ষমতার উৎস। তিনি একাই বিশাল এক চ্যালেঞ্জকে দৃঢ়তার সাথে অতিক্রম করে প্রমাণ করলেন, সততার জয় অনিবার্য। তাঁকে প্রাণঢালা অভিনন্দন।
ঐতিহ্যবাহী নারায়নগঞ্জে লক্ষাধিক ভোটে বিজয়ের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে দেশের প্রথম নারী মেয়র হিসাবে ইতিহাস গড়ে ‘বাপকা বেটি’ ১৯৭৪ সালের মতোই পুনরাবৃতি ঘটিয়ে দেখিয়ে দিলেন দলের চেয়েও ব্যক্তি কখনো কখনো গুরুত্ত্বপূর্ণ। তাই দলীয় সমর্থন না পেয়েও তিনি অত্যন্ত দৃঢ় প্রত্যয়ে সাধারণ মানুষের আশা-ভরসায়, ভালোবাসায় নির্বাচনী মাঠে নেমেছিলেন, অবতীর্ণ হলেন ভোটযুদ্ধে। বিজয়ের প্রাগ মহুর্তে আবারো সেই শান্তি-সততা এবং ভালোবাসার কথা শোনালেন! তাঁর রক্তেই মিশে আছে রাজনীতি। তাই রাশিয়া কিংবা নিউজিল্যান্ডের মতো উন্নত বিশ্বের প্রবাস জীবন ছেড়ে নাড়ির টানে ফিরে গেছেন নারায়নগঞ্জে। ডাক্তার হিসেবে নয়, জনপ্রিয় আইভি জনগণের সেবা করবেন একজন নির্বাচিত মেয়র হিসাবে। আইভী, আপনাকে আবারো কংগ্র্যাচুলেশন।

আর শামীমকে শুভেচ্ছা, কারণ তিনি এবাবের নির্বাচনে প্রমাণ করেছেন- ভালো আচরণ, আন্তরিকতা, ক্ষমা চাওয়া, বিনয়ী হওয়া, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে কাছে টানা প্রভৃতি তাঁর ইমেজকে অনেকাংশে উজ্জ্বল করেছে। তিনি পরাজিত হলেও তাঁর ভাবমূর্তি অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে বিশ্বাস। তিনি যদি এখন তাঁর ‘আদরের ছোটবোন’কে অভিনন্দন জানান, তাহলে যেমন আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে নতুন মাত্রা যুক্ত হবে, তেমনি তাঁর জন্য ভবিষতের জন্য নতুন দিগন্ত খুলে যাবে। শামীমের রক্তেও রয়েছে মাতৃভূমির প্রতি প্রবল দেশপ্রেম। তাই, কানাডার মতো দেশের নাগরিকত্বকে তুচ্ছ করে গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে ছুটে গেছেন মাটির টানে। নির্বাচনে হেরে গিয়ে যদিও তিনি পুরোনো ষ্টাইলে ‘কারচুপি’র প্রশ্ন তুলে নিজেকেই লজ্জা দিচ্ছেন। দলের তো আর দোষ নেই। যদিও দলীয় ‘নৌকা’ ডুবলো শীতলক্ষ্যার জলে।

আর বেচারা তৈমুর হঠাৎ করে মধ্যরাতে বলির পাঠা হলে গেলেন। তাঁর ভাষ্য- কুরবানির আগের আমি কুরবান আলি হয়ে গেলেন! নির্বাচনে হেরে যাওয়ার চেযে নেত্রী ও দলের প্রতি তাঁর যে আনুগত্য প্রকাশ পেয়েছে, সে জন্য তিনি ধন্যবাদপ্রাপ্ত। যদিও এই নির্বাচন ‘বর্জন/ প্রত্যাখান/ সরে দাড়াঁনো’ তাঁর দলেন জন্য মোটেও শোভন হয়নি। কারণ, বর্তমান সরকারের আমলে চট্টগ্রাম সিটি বিএনপিই কর্পোরেসন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী মঞ্জুরই বিজয় ছিনিয়ে এনে প্রমান করেছেন যে- নির্বাচন অবাধ ও নিরেপেক্ষ হয়েছে।

শুধু তাই-ই নয়, গত জানুয়ারিতে সারাদেশে পৌরসভার নির্বাচনগুলোর সিংহভাগ পৌরসভায় আ’লীগের চেয়ে বিএনপিই অনেক বেশী ভালো ফলাফল করেছে। পরপর দু’টি স্মরণযোগ্য নির্বাচনে বিএনপির বিজয় পাওয়া সত্বতেও এবার কেনো সরে দাঁড়ালো, তা জনগণের প্রশ্ন! আর প্রশ্ন, দলের স্বতস্ফূর্ত নেতা-কর্মী-সমর্থকদেরকে কেনো তাঁদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করালেন? তাছাড়া কেনো অযথা প্রধান নির্বাচনের প্রতি অশোভন আচরণ করলেন, তা-ও বোধগম্য নয়!

গত ২৮ অক্টোবর বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমে ‘জিতলেও আ’লীগ, হারলেও আ’লীগ’ এবং ৩০ অক্টোবর ‘না’গঞ্জ নির্বাচনঃ স্বপ্ন-আশার গুড়েবালি’ শীর্ষক দুটি লেখা যা বিশ্লেষণ ছিলাম, তাই বাস্তবে পরিণত হলো।

না’গঞ্জ সিটি বিএনপিই সব চেয়ে বেশি ইমেজ নষ্ট হলো সরকারী দল আ’লীগের। প্রথেমতঃ আইভী আর শামীমকে এক করতে না পারা। দ্বিতীয়তঃ শেষ পর্যন্ত সেনা মোতায়েন না করে। তৃতীয়তঃ দলের সমর্থিত প্রার্থীর পরাজয়।

বিগত ১৮ জানুয়ারী ২০১১ দেশব্যাপী পৌরসভার ভোট যুদ্ধ পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, আ’লীগের সর্বোচ্চ পর্যায়ে এ অন্তর্দ্বন্দ্ব ও কোন্দল মাথাচারা দিয়ে না উঠলেও গ্রাম থেকে ইউনিয়ন, ইউনিয়ন থেকে উপজেলা, এবং উপজেলা থেকে জেলার মূলদল এবং প্রতিটি অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের মধ্যে মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়েছে।যার কারণে চলমান পৌরসভার নির্বাচন গুলোর সিংহভাগ পৌরসভায়ই আ’ লীগের প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে একাধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে দলের প্রার্থীর পরাজয়কে ত্বরান্বিত করছে। আ’ লীগ তথা মহাজোটের জনপ্রিয়তার বেরোমিটার নিম্নগামীই হয়েছে। আ’লীগের প্রচুর প্রার্থী ‘শামীম ওসমান’ হয়েছেন। এমন ধরণের ঘটনা সারা দেশের পৌরসভা নির্বাচনের জনগণ প্রত্যক্ষ করেছে। এর মূল কারণই হিসাবে আওয়ামী লীগের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব, কোন্দল ও টানাপোড়েনকেই দায়ী করছেন নির্বাচন বিশ্লেষকেরা। যদি ও এ নির্বাচনের জয়পরাজয়ে সরকার বদল হয়নি, তবু এ ফলাফল আ’ লীগের দলীয় শৃংখলাকে ভীষণ প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। যেমন করলো না’গঞ্জ সিটি কর্পোরেসন নির্বাচন।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেসন নির্বাচন, দেশব্যাপী পৌরসভার নির্বাচন এবং সদ্য সমাপ্ত না’গঞ্জ সিটি কর্পোরেসন নির্বাচন তিনটি থেকে সরকারি দলের অনেক কিছু শিক্ষার আছে। আ’লীগকে পুরোনো ঘড়ির ব্যাটারি বদলাতে হবে; শিক্ষা নিতে হবে দোয়াত-কলম থেকে। এই আবর্ত থেকে বেড়িয়ে আসতে না পারলে আগামী সাধারণ নির্বাচনের  বিরূপ প্রভাব পড়তে বাধ্য এবং ফলাফলও হবে ভিন্ন।

saifullahdulal@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.