ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় শেয়ারবাজার-সূচক বাড়লেও লেনদেন কমেছে ২৫ কোটি টাকা

বিপর্যয়কর পরিস্থিতির মধ্যে আগের দিন সোমবার সামিট পাওয়ারের শেয়ার কিনেছিলেন আবুল আসাদ। দরপতনের মধ্যে ৭৬ টাকায় কেনা এই কম্পানির শেয়ারের দর ৫ দশমিক ২০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে গতকাল সর্বোচ্চ ৮০ দশমিক ৯০ টাকায় লেনদেন হয়েছে। এ কারণে নিম্নমুখী বাজারে এই শেয়ার কিনে নিজেকে সচেতন বিনিয়োগকারী হিসেবে দাবি করছেন আসাদ। শুধু আসাদের কেনা কম্পানির শেয়ারের দাম বাড়েনি গতকাল। ঢাকা স্টকএক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হওয়া ২৫৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২২৮টিরই দাম বেড়েছে। কমেছে ২১টির। অপরিবর্তিত থেকেছে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম। এ কারণে ডিএসইর সাধারণ মূল্যসূচক ১৬৮.৬৭ বেড়ে ৫২০৫.১৭ পয়েন্টে স্থির হয়েছে।


এর মধ্য দিয়ে টানা চার দিনের দরপতনের ধারা থেকে বেরিয়ে এসেছে শেয়ারবাজার। বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, সূচকের পতন ৫০০০ পয়েন্টের নিচে নামতে না দেওয়ার চেষ্টা হিসেবে গতকাল এই মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে। তবে সূচক বাড়লেও ডিএসইতে লেনদেন কমে গেছে ২৫ কোটি টাকা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সভাপতি শাকিল রিজভী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'অধিকাংশ কম্পানির শেয়ারের দর মৌলভিত্তির নিচে চলে গেছে। ফলে বাজার ঘুরে দাঁড়াবেই। তার অংশ হিসেবেই গতকাল বাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে।'
ফিনিক্স সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কাদের চৌধুরী বলেন, 'পাঁচ হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে গেলে বাজারে বড় ধরনের দরপতন ঘটতে পারত। হয়তো তারই অংশ হিসেবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো আবার শেয়ার কিনেছে। মনে হয় ব্যাংকগুলো নিজের প্রয়োজনে শেয়ার কিনেছে। এখন তো বটম লাইনে রয়েছে। এর নিচে নেমে গেলে তো কিছু থাকে না।' তিনি আরো বলেন, 'আমার কাছে মনে হচ্ছে দাঁড়ানোর পথে রয়েছে বাজার। এই অবস্থান কিছু দিন ধরে রাখতে পারলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসবে। তাতে স্বাভাবিক হয়ে যাবে গত ১১ মাসের টালমাটাল শেয়ারবাজার।' বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার মধ্যে গতকাল শুরু হয় ডিএসইর লেনদেন। ১০ মিনিটের মাথায় সূচক ৮২ পয়েন্ট বেড়ে যায়। এরপর কিছুটা কমলেও আবার সূচক বাড়ে। লেনদেন শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে সূচক ২১৮ পয়েন্ট বেড়েছিল। পরে আবারও কিছুটা কমে যায়। দিনশেষে ১৬৮.৬৭ পয়েন্ট বেড়ে ৫২০৫.১৭ পয়েন্টে শেষ হয় লেনদেন।
স্টক এঙ্চেঞ্জটিতে ২৬৫ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে, যা সোমবারের তুলনায় ২৫ কোটি টাকা কম। গতকাল ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল দুই লাখ ৫৯ হাজার ২২৩ কোটি ৫৪ লাখ ১৬ হাজার ৭৮৪ টাকা।
এদিকে বাজার স্থিতিশীল করার দাবিতে গতকালও ডিএসই ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেছেন বিনিয়োগকারীরা। বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে বেলা ৩টার কিছুক্ষণ আগে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এঙ্চেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক ৪৪৮.৯১ পয়েন্ট বেড়ে ১৪৮৬২.৯৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। সিএসইতে লেনদেন হওয়া ১৭০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেড়েছে ১৪৪টির, কমেছে ২২টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে চারটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম। স্টক এঙ্চেঞ্জটিতে গতকাল ৩২ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে, যা আগের দিনের চেয়ে তিন কোটি টাকা বেশি।
ডিএসইতে গতকাল লেনদেনের শীর্ষে ছিল বেঙ্মিকো। লেনদেনের শীর্ষ ১০ তালিকায় পরের অবস্থানে ছিল গ্রামীণেেফান। বাকি আটটি কম্পানির মধ্যে ছিল তিতাস গ্যাস, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, বেঙ্মিকো ফার্মা, ইউসিবিএল, ন্যাশনাল ব্যাংক, সামিট পাওয়ার ও সিটি ব্যাংক।
মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষে গতকালের ১০টি কম্পানি হলো সায়হাম টেঙ্টাইল, ফাইন ফুডস্, মিরাক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ, মেঘনা সিমেন্ট, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ফু-ওয়াং সিরামিকস্, লিগেসি ফুটস্, অ্যাকটিভ ফাইন, ফিনিঙ্ ইনসুরেন্স ও আনলিমা ইয়ার্ন। অন্যদিকে দাম কমার শীর্ষে প্রধান ১০টি কম্পানি হলো উসমানিয়া গ্লাস, হাক্কানি পাল্প, অষ্টম আইসিবি, মুন্নু জুটেঙ্, মুন্নু স্টাফলার, সাভার রিফ্যাক্টরিজ, পূরবী জেনারেল, রহিম টেঙ্টাইল, লিব্রা ইনফিউশন ও মেঘনা পেট্রোলিয়াম।

No comments

Powered by Blogger.