দিনবদল হচ্ছে বটেঃ আলুবীজ আমদানিতেও সিন্ডিকেট

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের মন্ত্রীদের, বিশেষ করে বাণিজ্যমন্ত্রীর হুমকি-ধামকি আশ্বাস অসাড় প্রমাণ করে বাজারে চিনির দাম আকাশ ছুঁয়েছিল ক'দিন আগেই। রোজা ও ঈদে শুধু চিনির পেছনেই মানুষের কত টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হয়েছে জানা না গেলেও ভুক্তভোগীদের দুর্ভোগের কথা কারও অজানা নয়। এখন একই অবস্থা দেখা যাচ্ছে আলু বীজ নিয়ে।

একদা বামপন্হী কৃষিমন্ত্রী তুলনামূলক কম কথা বললেও আলু বীজ ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট মোকাবিলায় তার কিছু করা এখনই জরুরি হয়ে পড়েছে। নতুবা রোগী মারা যাওয়ার পর ডাক্তার আসার মতো এখন যেমন আট চিনি ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা শোনা যাচ্ছে, আলু বীজ নিয়েও তেমনি করা হলে লাভ কী হবে? বেশি দামে চিনি কিনতে ভোক্তা সাধারণের পকেট থেকে কোটি কোটি টাকা বেরিয়ে গেছে। আলু উৎপাদনে বিপর্যয় দেখা দিলে তার চেয়ে কম ক্ষতি হবে না। গতকালের আমার দেশ জানিয়েছে, বপন মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই আমদানিকারক সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছে আলু বীজ বাজার। এ বছর নির্ধারিত ৪ লাখ হেক্টর জমিতে আলু চাষের জন্য প্রায় ৬ লাখ টন বীজ প্রয়োজন। প্রতিবছরের মতো এবারও মাত্র আড়াই শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ১১ হাজার ৪৭৬ টন বীজ সরকারি ব্যবস্থায় বিএডিসি বিক্রি করবে। বেসরকারিভাবে আরও প্রায় ৭ ভাগ বীজ দেশে উৎপন্ন হবে। বাকি ৯০ ভাগই আমদানি করা হবে। এবার কৃষি মন্ত্রণালয়ের যোগসাজশে বীজ আমদানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করে গুটিকতক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট গড়েছে। আগে যেখানে ৫০/৬০ ব্যবসায়ী আলু বীজ আমদানি করতেন, সেখানে এবার করছে মাত্র ৩টি প্রতিষ্ঠান। হল্যান্ড থেকে ৭৪.৫৫ টাকা কেজি দরে আমদানি করা বীজ খরচাপাতি ধরে ৭৬ টাকায় বিক্রির কথা থাকলেও মৌসুম শুরুর আগেই ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আলু চাষ শুরু হতে হতে এ বীজ কয়েক হাত ঘুরে কৃষকের হাতে পৌঁছবে আরও বেশি দামে। বাজারে সৃষ্টি করা হবে সঙ্কট। ফলে অসহায় কৃষককে অস্বাভাবিক বেশি দামেই বীজ কিনে আলু চাষ করতে হবে। না পাওয়া গেলে মাথায় হাত পড়বে। অথচ বিএডিসির আলু বীজের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আমদানি করা বীজের দাম প্রতি কেজি ৭৬ টাকা হলেও বিএডিসির 'এ' গ্রেডের বীজ বিক্রি হয় ৩৮ টাকা দরে। কম দাম ও ভালো মান হওয়ায় কৃষক এ বীজ কিনতেই আগ্রহী। কিন্তু সরবরাহ নেই। ফলে কৃষককে বাধ্য হয়েই মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের খপ্পরে পড়তে হয়। কৃষি উন্নয়নে আওয়ামী মহাজোট নেতা-নেত্রী ও মন্ত্রীদের মুখে যুগান্তকারী সব পদক্ষেপের কথা শোনা গেলেও বাস্তবে তেমন কিছুর দেখা মেলেনি এখনও। অপরিহার্য কৃষি উপকরণ সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের মুনাফা লোটার সুযোগ সৃষ্টি করা আর যাই হোক সরকার ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালনের দৃষ্টান্ত হতে পারে না। যদিও কৃষকের সাফল্যের দাবিদার সব সময়ই সরকার। এখন অবস্থা দেখে বোঝা যায়, গরিব মানুষের আলু ভর্তা-ভাত খেয়ে পেট ভরবার দিন বদলে গেছে বেশ দ্রুতই। গত বছরের ১৬-১৮ টাকা কেজি দরের আলু এখন বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩২ টাকা দরে। এক বছরে আলুর দাম বৃদ্ধির হার ৮৭.১০ শতাংশ। চালের দাম কিছুটা কম হলেও আলুসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশাও বাড়িয়েছে। এর বিনিময়ে কিছু লোকের পকেট ফুলে ওঠা এখন বেশ চোখে পড়ে। অসাধু চিনি ব্যবসায়ীদের মতো আলু বীজ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধেও হয়তো ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু তখন আর আলু উৎপাদনেও বিপর্যয় ঠেকানোর সময় থাকবে না। এখনই জরুরি ভিত্তিতে সরকারিভাবে বীজ আমদানির ব্যবস্থা নেয়া না হলে এ আশঙ্কাই বাস্তব হয়ে উঠবে। বেশি দামের বিদেশি আলুর বাজার দখল বন্ধ করতে হলে আমদানির পাশাপাশি আলু বীজ উৎপাদনে পরিকল্পিত পদক্ষেপ নিতে হবে। বিএডিসির অবকাঠামো ও জনবল কাজে লাগানোর ব্যবস্থা না নিয়ে একেও টিসিবির মতো ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত করা হলে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের উচ্চাশা মুখের কথায়ই সীমাবদ্ধ থেকে যাবে। এতে কৃষিতে মহাবিপর্যয় দেখা দিলেও ঠিকই কিছু মুখচেনা লোকের দিনবদল ত্বরান্বিত হবে সন্দেহ নেই।

No comments

Powered by Blogger.