স্মরণীয় ম্যাচ-মিরপুরের ৫৮ সাঙ্গাকারার ক্যারিয়ারসেরা!

খ্রিস্টপূর্ব ও খ্রিস্টাব্দের মতো কুমার সাঙ্গাকারার ক্যারিয়ারেরও দুটি যুগ। একটা উইকেটরক্ষক হিসেবে আরেকটা কিপিং গ্লাভস খুলে রেখে শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে। উইকেটরক্ষক হয়েও অবশ্য খুব খারাপ ব্যাটসম্যান ছিলেন না তবে দায়িত্বটা ছেড়ে ব্যাটিংয়ে মনোযোগ দেওয়ার পর হয়ে উঠেছেন শ্রীলঙ্কান কিংবদন্তি। উইকেটরক্ষক হিসেবে টেস্টে তাঁর ব্যাটিং গড় ছিল ৪০-এর মতো আর এখন সেটা ৫৬.৪২। সব মিলিয়ে ১০২ টেস্টে ৫৬.৪২ গড়ে করেছেন ৮৯৭২ রান।


এটা মাহেলা জয়াবর্ধনের (৯৮৯৫) পর লঙ্কান টেস্ট ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আর ৫৬.৪২ গড়টা তো এখনো টেস্ট খেলছেন এমন খেলোয়াড়দের মধ্যে তৃতীয় সেরা। ৫৭.৭৯ গড় নিয়ে ইংল্যান্ডের জোনাথন ট্রট ও ৫৭.৪৩ গড়ের ক্যালিসই কেবল সাঙ্গাকারার সামনে।
গড়ে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও এখনো খেলছেন এমন খেলোয়াড়দের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আটটি টেস্ট ডাবল সেঞ্চুরি সাঙ্গাকারারই। তাঁর সামনে কেবল ডন ব্র্যাডম্যান (১২) ও ব্রায়ানা লারা (৯)। অষ্টম ডাবলটা সাঙ্গাকারা করলেন গত মাসে ১০১তম টেস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে। আবুধাবি টেস্টে দ্বিতীয় ইনিংসে ৩১৪ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করেছিল শ্রীলঙ্কা। প্রথম বলেই ওপেনার পারানাভিতানা আউট হওয়ায় ইনিংস হারের শঙ্কাই পেয়ে বসেছিল তিলকরত্নে দিলশানের দলকে। সেই শঙ্কার মেঘটা কেটে যায় সাঙ্গাকারার অসাধারণ ডাবলে। ৭০০ মিনিটের মতো ক্রিজে কাটিয়ে ১৮ বাউন্ডারিতে করেন ২১১। তাতে কিছুটা হলেও কাটে শততম টেস্টে সেঞ্চুরি না পাওয়ার হতাশা। এই ইনিংসটির ওপর ভর করে শ্রীলঙ্কা অল আউট হয় ৪৩৮-এ আর নিশ্চিত করে ম্যাচ বাঁচানোটা। পাকিস্তান প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেটে ৫১১ রানে ইনিংস ঘোষণার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ১০ ওভারে ১ উইকেটে ২১ হলে ড্র মেনে নেন দুই দলের অধিনায়ক।
উইকেটরক্ষকের দায়িত্ব ছাড়ার পর এটা সপ্তম ডাবল সাঙ্গাকারার। উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান হিসেবে একমাত্র ডাবলটি (২৩০) করেছিলেন পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০০২ সালে লাহোর টেস্টে। ২০০৪ সালে বুলাওয়ে টেস্টে ২৭০ রানের ইনিংসটি যখন খেলেছিলেন তত দিনে শ্রীলঙ্কার উইকেটরক্ষক হয়ে গেছেন প্রসন্ন জয়াবর্ধনে।
আটটি ডাবলই নিঃসন্দেহে স্মরণীয় হয়ে থাকবে সাঙ্গাকারার ক্যারিয়ারে। তবে এগুলোর মধ্যেও কিছুটা পোড়াবে ২০০৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কলম্বো টেস্টটা। তৃতীয় উইকেটে মাহেলা জয়াবর্ধনের সঙ্গে গড়েছিলেন ৬২৪ রানের জুটি, যা টেস্ট ইতিহাসে যেকোনো জুটিতে সর্বোচ্চ পার্টনারশিপের রেকর্ড। জয়াবর্ধনে ট্রিপল (৩৭৪) পেলেও সাঙ্গাকারা ২৮৭ রানে অ্যান্ড্রু হলের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে বসেন মার্ক বাউচারকে। তাই ক্রিজ ছাড়তে হয় ১৩ রানের আফসোস নিয়ে। ৬৭৫ মিনিটে ৪৫৭ বলে ৩৫ বাউন্ডারিতে ক্যারিয়ারসেরা ইনিংসটা খেলেন সাঙ্গাকারা। আর শ্রীলঙ্কা ইনিংস ঘোষণা করে ৫ উইকেটে ৭৫৬ রানে। প্রথম ইনিংসে ১৬৯ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে প্রোটিয়ারা ৪৩৪-এ গুটিয়ে যাওয়ায় ১৫৩ রানের বড় জয়ই পায় লঙ্কানরা।
টেস্টের মতো ওয়ানডেতেও সফল সাঙ্গাকারা। ৩০১ ম্যাচে ৩৮.০০ গড়ে ১১ সেঞ্চুরি ৬৫ ফিফটিসহ করেছেন ৯৫৪০ রান। তবে সাঙ্গাকারা নিজেই তাঁর ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সেরা হিসেবে উল্লেখ করেন ২০০৯ সালে মিরপুরের ধীরগতির নিচু বাউন্সের উইকেটে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৫৮ রানের ইনিংসটা। ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ১৫২ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। জবাবে নাজমুলের আগুনে বোলিংয়ে (৩ উইকেট) ৬ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বিপদেই পড়ে যায় লঙ্কানরা। কিন্তু সাঙ্গাকারা আগলে রাখেন একটা প্রান্ত। জেহান মুবারকের সঙ্গে ষষ্ঠ উইকেটে ৪৫ রানের জুটি গড়ে কাটান প্রাথমিক ধাক্কাটা। আর সপ্তম উইকেটে ফারভিজ মাহরুফের সঙ্গে ৬৩ রানের জুটি গড়ে ম্যাচে ফেরান শ্রীলঙ্কাকে। ১৩৩ বলে ৬ বাউন্ডারিতে সাঙ্গাকারা ৫৮ করে সাকিবের হাতে কট অ্যান্ড বোল্ড হয়ে ফেরার সময় শ্রীলঙ্কার স্কোর ছিল ৪৩.১ ওভারে ৭ উইকেটে ১১৪। এরপর মাহরুফের ৭৬ বলে অপরাজিত ৩৮ আর মুরালিধরনের ১৬ বলে ঝড়ো ৩৩-এ ১১ বল বাকি থাকতে ২ উইকেটের জয় পায় শ্রীলঙ্কা। ওয়েবসাইট

No comments

Powered by Blogger.