বাড্ডায় শিশু হত্যা : অভিযুক্তের স্বীকারোক্তি-হামলা পরিকল্পিত, চিনে ফেলায় সুবর্ণাকে হত্যা

রাজধানীর উত্তর-পূর্ব বাড্ডায় গৃহবধূকে নির্যাতন ও তাঁর চার বছরের মেয়ে সুবর্ণাকে হত্যার দায় স্বীকার করেছে মানিক। গতকাল মঙ্গলবার পুলিশি রিমান্ডে ঘটনাটি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছে সে। এসব তথ্যের সঙ্গে অভিযোগকারী ও নির্যাতিত গৃহবধূ রিনার বক্তব্যের মোটামুটি মিল পেয়েছে পুলিশ। গত রবিবার উত্তর-পূর্ব বাড্ডার পূর্বাঞ্চল এলাকার একটি বাড়িতে চার বছরের শিশু সুবর্ণাকে হত্যাসহ মা রিনা ও শিশু স্বর্ণাকে গুরুতর জখম করে দুর্বৃত্তরা। ঘটনার দিন রাতেই পুলিশ রিনার মুখে নাম শুনে অভিযুক্ত মানিককে গ্রেপ্তার করে। নিহত সুবর্ণা মানিকের খালাতো বোন।


রিমান্ডে মানিক স্বীকার করেছে, খালাতো বোন সুস্মিতাকে বিয়ে করার ইচ্ছা প্রকাশ করে কিছুদিন আগে খালা রিনা ও খালু ভবদীশকে প্রস্তাব দিয়েছিল সে। কিন্তু ষষ্ঠ শ্রেণীর স্কুল পড়ুয়া মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে মানিককে বাড়ি থেকে বের করে দেন তাঁরা। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে খালার ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা করে মানিক।
তাঁকে মারধর ও হত্যা করে টাকা-পয়সা লুট করা ছিল তার উদ্দেশ্য। এরপর বিষয়টি ডাকাতি হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা ছিল তার। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রকাশ নামের এক বন্ধুকে সে সঙ্গে নেয়।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, গত রবিবার বাড্ডার ওই বাড়িতে আবারও এসে খালার সঙ্গে দেখা করে মানিক ও প্রকাশ। খালা রিনা তাদের উপস্থিতি পছন্দ না করলেও কলা-মুড়ি দিয়ে আপ্যায়ন করেন। এরপর সুস্মিতার বিষয়ে কথা তুলে খালার সঙ্গে ঝগড়া শুরু করে সে। একপর্যায়ে সে রিনার ওপরে চড়াও হয় এবং তাঁকে মারধোর করে এবং কুড়াল দিয়ে আঘাত করে। রক্তাক্ত অবস্থায় রিনা অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাঁকে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে গলায় কাপড় বেঁধে জানালার গ্রিলে ঝুলিয়ে রাখে তারা। এরপর কাঠের ড্রয়ার ভেঙে ৪০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়।
মানিককে উদ্ধৃত করে পুলিশ জানায়, তারা টাকা লুট করে ঘর থেকে বের হওয়ার সময় পাশের ঘরে থাকা রিনার দুই শিশুসন্তান সুবর্ণা ও স্বর্ণা চিৎকার জুড়ে দিলে প্রকাশ মানিককে বলে, 'ওই মেয়েটি (সুবর্ণা) তোকে চিনে ফেলেছে।' এরপর নিজেদের পরিচয় গোপন করার উদ্দেশ্যে চার বছরের ছোট্ট সুবর্ণাকে ধরে মেঝেতে নিষ্ঠুরভাবে আছাড় মারে সে। একইভাবে স্বর্ণাকেও আছাড় মারে প্রকাশ। এই পৈচাশিক ঘটনায় শিশু দুটি মারাত্মক আহত হলেও রেহাই পায়নি। সুবর্ণাকে তাৎক্ষণিকভাবে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয় তারা। মানিক দাবি করেছে, ঘরে থাকা বড় একটি পাতিলের পানিতে আহত সুবর্ণার মাথাটি চুবিয়ে ধরে প্রকাশ। কিছুক্ষণ হাত-পা ঝাপটানোর পর থেমে যায় সে।
পানিতেই শ্বাসরোধে মৃত্যু হয় সুবর্ণার। এরপর নিরাপদে সটকে পড়ে তারা। মানিকের দাবি, লুট করা টাকা পলাতক প্রকাশের কাছে রয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রকাশকে গ্রেপ্তারের অভিযান অব্যাহত আছে। গ্রেপ্তারের পর মানিক হামলা ও হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে প্রথম দিন কথা না বললেও গতকাল রিমান্ডের দ্বিতীয় দিন ঘটনা স্বীকার করে।
এদিকে গুরুতর আহত গৃহবধূ রিনার অবস্থা এখনো অপরিবর্তিত। তিনি এখনো মহাখালীর আয়েশা মেমোরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁকে আইসিইউতে নেওয়া প্রয়োজন হতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

No comments

Powered by Blogger.