ম্যাচ বাঁচানোর আশা বাংলাদেশের by তারেক মাহমুদ

শেষ দিনে লক্ষ্য কী? ড্র নাকি জয়? এই টেস্টে বাংলাদেশ হারতেও পারে। কিন্তু হারার লক্ষ্য তো কারও থাকে না। লক্ষ্য অবশ্যই ড্র অথবা জয়। দিনের খেলা শেষে প্রতিদিনই ড্রেসিংরুমে টিম মিটিং হয়। ঠিক হয় পরদিনের পরিকল্পনা। কাল খেলা শেষে বাংলাদেশ ড্রেসিংরুমে সে রকম কিছু হলো না। শেষ দিনের পরিকল্পনা ঠিক করার ব্যাপারটা আজ সকালের জন্য রেখে দিয়েছেন কোচ স্টুয়ার্ট ল। সকালেই আনুষ্ঠানিকভাবে ঠিক হবে, জয়ের জন্য খেলা, নাকি ড্রয়ের জন্য। তবে অনানুষ্ঠানিক লক্ষ্য হলো, সেশন ধরে ধরে খেলা।

যতক্ষণ সম্ভব উইকেটে থাকার চেষ্টা করবেন কালকের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিম। প্রাথমিক লক্ষ্য লাঞ্চ পর্যন্ত যত কম উইকেট হারানো যায়, সম্ভব হলে একটিও নয়। এরপর লাঞ্চে স্কোরবোর্ডের চেহারা দেখে ঠিক হবে টেস্টের শেষ খণ্ডের চিত্রনাট্য।
কাল দিন শেষের সংবাদ সম্মেলনে নাঈম ইসলাম নিজের যে চিন্তাভাবনা শুনিয়েছেন, তাতে অবশ্য জয়ের আকাঙ্ক্ষাই ছিল বেশি, ‘আমাদের লক্ষ্য এ ম্যাচ জেতা। ব্যাটসম্যানদের সামর্থ্যের প্রয়োগ ঘটাতে হবে। এই উইকেটে ব্যাটিং করা সহজ বুঝেও যদি কাজটা করতে না পারি, তাহলে হবে না।’
নাঈম সংবাদ সম্মেলনে জয়ের কথা বললেও ড্রেসিংরুমের করিডরে দাঁড়িয়ে সাকিব আল হাসান জানালেন, ড্র করার লক্ষ্য নিয়ে খেলাটাই বাস্তবোচিত হবে। মিরপুরের উইকেট টেস্টের চতুর্থ দিনেও রহস্যজনকভাবে ভালো ছিল। সাকিবের মনে লম্বা সময় ধরে ব্যাটিংয়ের সম্ভাবনা জাগাচ্ছে সেটা। তবে ভালো বলের বিপক্ষে এই উইকেটে রান করাটাও সহজ মনে হচ্ছে না তাঁর কাছে। টিম মিটিং হয়নি বলে সুনির্দিষ্টভাবে দলের চিন্তাভাবনার কথা না বললেও তাঁর নিজের মতামত, ‘ড্র সম্ভব। ভালো বল হলে এই উইকেটে রান করা সহজ হবে না। তবে ব্যাটসম্যান উইকেটে থাকতে চাইলে কাউকে আউট করাও কঠিন। চাইলে লম্বা সময় ধরে ব্যাটিং করা সম্ভব।’
শেষ দিনের লক্ষ্যের কথা বলতে গিয়ে উইকেটের প্রসঙ্গ চলে আসছিল বারবার। তাতে মনটাই খারাপ হয়ে গেল শাহরিয়ার নাফীসের। স্টেডিয়াম থেকে বের হওয়ার সময় শ্যাডো করে দেখাচ্ছিলেন কীভাবে আউট হলেন। মুখে আফসোস, ‘উইকেট খুবই ভালো। আমারই ভাগ্য খারাপ। বলটা একটু ওপরে থাকলেও কথা ছিল, ধরল তো একদম মাটির ওপর থেকে!’ নিজে আউট হয়ে গেলেও দলের বাকি ব্যাটসম্যানদের জন্য শাহরিয়ারের পরামর্শ, ‘ড্র তো হতেই পারে। লাঞ্চ পর্যন্ত যত কম উইকেট পড়ে, সেটাই দেখতে হবে।’
শাহরিয়ারের কথায় একটু অন্যভাবে হলেও দলের চিন্তাটাই এল। সংবাদ সম্মেলনে নাঈমও বোঝাতে চেয়েছেন, শেষ দিনের লক্ষ্য ঠিক হবে মূলত লাঞ্চ পর্যন্ত ম্যাচের চিত্র দেখেই, ‘প্রথম সেশনে অনেক উইকেট হারিয়ে ফেললে জেতার টার্গেট করব না। ব্যাপারটা নির্ভর করছে আমরা প্রথম সেশন কেমন খেলি, সেটার ওপর। পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলতে পারলে ফলাফল অবশ্যই আমাদের পক্ষে আসবে। সারা দিন খেলতে পারলে মনে হয় না ড্র হবে...আমরাই জিতব।’
কিন্তু চ্যালেঞ্জ তো ওই সারা দিন খেলতে পারাটাই! প্রথম ইনিংসের ব্যাটিংয়ের ধরন বলছে, সারা দিন ব্যাট করার মতো ধৈর্য নেই দলটার। কোচ স্টুয়ার্ট ল তৃতীয় দিন শেষের সংবাদ সম্মেলনে এসে এ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে গেছেন। শেষ দিনের লক্ষ্য কী হবে, সেটার আগে তাই বাংলাদেশ কীভাবে ব্যাট করবে, সেটাই বড় আলোচনা। এ ক্ষেত্রে নাঈমের প্রথম ইনিংসের ব্যাটিংটাকে আজ আদর্শ মানতে পারেন ব্যাটসম্যানরা। ১৫৮ মিনিট উইকেটে ছিলেন, খেলেছেন ১১৩ বল, রান করেছেন ৪৫। ‘ব্যাটিংয়ে শুধু ভেবেছি বাজে বল ছাড়া আমি কোনো শট খেলতে যাব না। যদি ওরা আমাকে বাজে বল দেয়, তাহলেই মারব। ওয়ানডেতে যেমন অনেক সময় বাজে বল না হলেও মারতে হয়, সেভাবে খেলব না বলে ঠিক করে রেখেছিলাম’—নিজের প্রথম ইনিংসের ব্যাটিং নিয়ে বলছিলেন নাঈম।
কিন্তু টেস্টের পঞ্চম দিনটা তো শুধু বাংলাদেশই নয়, খেলবে ওয়েস্ট ইন্ডিজও! তামিম-মুশফিকরা কীভাবে খেলবেন, সেটা অনেকটাই নির্ভর করছে আজ ক্যারিবীয়রা কেমন বল করে, তার ওপর। ফিদেল এডওয়ার্ডসের মতো যদি জ্বলে ওঠেন আর কেউ? নাঈমের তাই পরামর্শ, সতর্ক থাকতে হবে প্রতি বলেই, ‘এডওয়ার্ডস প্রথম ইনিংসে অনেক ভালো বোলিং করেছে। দ্বিতীয় ইনিংসে পরিকল্পনা ছিল, ওকে আক্রমণ না করে কোনোভাবে খেলে দেওয়া। অন্য বোলাররাও খারাপ নয়। আউট হওয়াটা তো এক বলের ব্যাপার। সব বলেই সতর্ক থাকাটা ভালো।’
লক্ষ্য ড্র কিংবা জয়-ই হোক, নাঈমের শেষ কথাটাই বোধ হয় শেষ দিনের পরিকল্পনার মূল সুর।

No comments

Powered by Blogger.