বিশ্ব রেকর্ডের কথাও ভাবছে বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ১ম ইনিংস ৩৫৫ ও ২য় ইনিংস ৩৮৩/৫ ডিক্লেয়ার্ড-বাংলাদেশ : ১ম ইনিংস ২৩১ ও ২য় ইনিংস ১৬৪/৩(চতুর্থ দিন শেষে) by মাসুদ পারভেজ

ট বছর আগে-পরে একইভাবে ডাবল সেঞ্চুরিতে পেঁৗছাতে গিয়ে দুজনের একই পরিণতি! বীরেন্দর শেবাগের পর ড্যারেন ব্রাভো!মেলবোর্নে ২০০৩ সালের বঙ্ংি ডে টেস্টে সাইমন ক্যাটিচকে ছক্কা হাঁকিয়ে ১৯৫-তে পেঁৗছানো শেবাগ রাজসিক ভঙ্গিতেই ডাবল সেঞ্চুরি করতে গিয়ে বিপদ ডেকে এনেছিলেন। পরের বলে তাই আবারও ছক্কা মারতে গিয়ে আউট! এত দিন পর আবার একই চিত্রনাট্যের কুশীলব ব্রাভো। সোহরাওয়ার্দী শুভর বল লং অন দিয়ে বাতাসে ভাসিয়ে সীমানা ছাড়া করে দ্বিশতক থেকে ৫ রান দূরে গিয়ে দাঁড়ালেন। পরের বলেই সুইপ করে ছক্কা মারতে গিয়ে ব্যাটের ওপরের কানায় লেগে ক্যাচ উঠে গেল আর মুশফিকুর রহিমও তা ধরতে ভুল করলেন না।


এ পর্যন্ত সবই মিলে গেছে 'খাপের খাপ'! তবে ক্রিকেটীয় অনিশ্চয়তার কথা মাথায় রেখেও ঝুঁকি নিয়ে এটা বলে ফেলা যায় যে পরের অংশটুকু আর কিছুতেই মিলছে না। শেবাগের ১৯৫ রানের ইনিংসটি বিফলে গিয়েছিল ভারতের ৯ উইকেটের হারে। কিন্তু ব্রাভোরটি যে যাচ্ছে না, এর স্বপক্ষে জোরালো যুক্তি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে টেস্ট ক্রিকেটের ১৩৫ বছরের সুদীর্ঘ ইতিহাসও। যেখানে চতুর্থ ইনিংসে রান তাড়া করে জেতার রেকর্ডই ৪১৮ রানের, সেখানে বাংলাদেশকে কিনা করতে হবে ৫০৮ রান! করে ফেললে নতুন এক বিশ্বরেকর্ডই হয়ে যাবে কিন্তু এও কি সম্ভব?
প্রথম ইনিংসের ব্যাটিং ব্যর্থতার পর ব্যাটসম্যানরা এবার দায়িত্ব সচেতন হয়েছেন ঠিক, আবার শেষ বিকেলে ফুলে ওঠা আশার বেলুন পরদিন সকালে চুপসে দেওয়ার নজিরও তো কম নয় বাংলাদেশের ১১ বছরের টেস্ট ইতিহাসে। চতুর্থ ইনিংসে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দৌড় ৪১৩ রানের। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে এ মিরপুরেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৫২১ রানের টার্গেটের পেছনে ছুটে ম্যাচের শেষদিনে অবশিষ্ট ৫ উইকেট হারিয়ে মাত্র ১৫৯ রানই তুলতে পেরেছিল তারা। আর এবার শেষদিনে ৭ উইকেট হাতে রেখে ৯০ ওভারে বাংলাদেশকে করতে হবে ৩৪৪ রান। ৩.৪৯ রান রেটে ৩ উইকেটে ১৬৪ রান তুলে চতুর্থ দিন শেষ করা বাংলাদেশকে শেষদিনে ওভারপ্রতি করতে হবে ৩.৮২ রান। চারেরও কম! কাগজে-কলমে অবশ্যই সম্ভব। কিন্তু কাগজ-কলমের হিসাব আর বাস্তবতা তো এক নয়। এক হলে নেটে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ আশরাফুলকে ব্যর্থতার দায় মাথায় নিয়ে টেস্ট দল থেকে ছিটকে পড়তে হয় না!
কী আশ্চর্য! এতক্ষণ কেবল বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা খারিজ করে দেওয়া নিয়েই কথা হয়ে গেল! ড্রর কথাও তো ভাবা যেতে পারে। যেখানে ২০০৫ সালের জানুয়ারিতে ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৪২ ওভার ব্যাট করে ড্র করে ফেলার ঘটনা আছে। কিন্তু কাল সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ দলের মুখপাত্র নাঈম ইসলামকেও ড্র নিয়ে খুব একটা আগ্রহী মনে হলো না, 'আমরা তিন সেশন ব্যাট করতে পারলে ড্রর কোনো সুযোগই নেই।' এটা বলেছেন দলের ব্যাটসম্যানদের বেশি বেশি শট খেলার প্রবণতা বিবেচনায়ই। এ স্বভাব না পাল্টালেও আবার দ্রুত কিছু উইকেট হারিয়ে ফেলার আশঙ্কা। সেই সঙ্গে সম্ভাব্য একটা বিশ্বরেকর্ডের উত্তেজনায় এ তরুণ দলের ভেঙে পড়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সব মিলিয়ে ঢাকা টেস্টের শেষদিন ব্যাটসম্যানদের চরমতম এক পরীক্ষার সামনেই দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে!
তাতে সফল হওয়ার ইঙ্গিতও চতুর্থ দিনের শেষবেলায় ছিল তামিম ইকবালের ব্যাটিংয়ে। ইনিংস ঘোষণার জন্য ব্রাভোর ডাবল সেঞ্চুরির অপেক্ষাতেই থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক তিনি আউট হয়ে যেতেই আর দেরি করেননি। এরপর জবাব দিতে নামা বাংলাদেশের ইমরুল কায়েস (৯) ব্যর্থতার ধারাই অব্যাহত রেখেছেন। ফিদেল এডওয়ার্ডসের গতিতে পরাস্ত হয়ে স্লিপে ক্যাচ দিয়েছেন। লম্বা ড্যারেন সামি ফলো থ্রুতে নিচু হয়ে রিটার্ন ক্যাচ নিয়ে ভড়কে দিয়েছেন শাহরিয়ার নাফীসকে (১৮)। এই সিরিজে বেশ কয়েকটা ক্যাচ ফেললেও এবার স্লিপে রকিবুল হাসানের (১৭) ক্যাচও ঠিক নিয়েছেন ক্যারিবীয় অধিনায়ক। ১২ রানে ফিরে যেতে পারতেন তামিমও। ফিদেলের বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে মারলন স্যামুয়েলস তাঁর ক্যাচ ফেলার পর থেকে তামিমও ধীরে ধীরে সংযত হয়েছেন। আর তা দিনশেষে ৮২ রানে অপরাজিত এ বাঁহাতি ওপেনার ৫৮ বলে ফিফটি করার পর থেকেই। পরের ৩২ রান করতে তাই খেলেছেন ৯১ বল। অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের (৪৭ বলে ৩৩*) মতো তিনিও পরে প্রথম ইনিংসে একাই ধসিয়ে দেওয়া ফিদেলকে দেখেশুনে খেলেছেন। শেষদিনের সকালে একটি অসম্ভবকে সম্ভব করার বার্তাটাও আসতে হবে তাঁদের দুজনের ব্যাট থেকেই প্রথম।
এরপর অন্যরাও যদি...। নাহ্, কিছু না বলে অপেক্ষা করাই ভালো। ব্রাভোকে যদি শেবাগের কাতারে ফেলে দিতেই পারেন এবং তা না হলেও যদি হয় ড্র, ক্রিকেটারদের মাথায় তুলে নাচার সুযোগ তো থাকলই!

No comments

Powered by Blogger.