সন্ত্রাসী চাঁদাবাজ গডফাদারের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জবাসী : একান্ত সাক্ষাত্কারে মেয়র আইভী

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত প্রথম নারী মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত্ আইভী শুরুতেই মিডিয়ার মাধ্যমে একটি বার্তা পৌঁছে দেয়ার অনুরোধ জানান। বললেন, তিনি দলমত নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে কাজ করবেন। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ভূমিদস্যুতাসহ জনমনে ভয়ের সৃষ্টি করে এমন কোনো কাজ মেনে নেবেন না। বিশেষ করে তিনি নির্বাচনে তার পক্ষে থাকা সব নেতাকর্মীর উদ্দেশে বলেছেন, কেউ এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়লে তার বিপক্ষে তিনি অবস্থান নেবেন। সবাইকে নিয়ে তিনি নারায়ণগঞ্জের উন্নয়ন কাজ করতে চান।


সন্ত্রাসের জনপদ হিসেবে যারা নারায়ণগঞ্জকে কলঙ্কিত করেছে, তাদের সুস্থ ধারার রাজনীতিতে ফিরে আসার আহ্বান জানান তিনি। এই নির্বাচনের মাধ্যমে নগরবাসী বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের এই ম্যাসেজ দিয়েছেন যে, মানুষ আর বাংলাদেশের রাজনীতিতে সন্ত্রাসবাদ মেনে নেবে না। তিনি নির্বাচন কমিশনকে প্রার্থীদের পোস্টার, মাইকিং, নির্বাচনী বুথে বুথে পোলিং এজেন্ট নিয়োগ প্রথা বাতিল করার দাবি করেন। এ প্রথাগুলোর কারণে নির্বাচনী পরিবেশ অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে। শুধুমাত্র নির্বাচন কমিশন ও সরকারি কর্মকর্তারা নিরপেক্ষ হলেই পোলিং এজেন্ট প্রথা বাদ দেয়া যায়। এই প্রথা বাদ দিলে কেন্দ্রে গোলযোগ কমে যাবে ৯০ শতাংশ। তিনি বলেন, আমার মেয়র হওয়ার পেছনে প্রধানমন্ত্রীর দোয়া আর নারায়ণগঞ্জবাসীর অকৃত্রিম ভালোবাসা ছিল। আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আবারও দোয়া চাইবো, যাতে আগের মতো সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দলমত নির্বিশেষে সবার সঙ্গে আলোচনা করে নারায়ণগঞ্জের উন্নয়ন করতে পারি। তবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার প্রধান দাবি থাকবে নারায়ণগঞ্জবাসীর উন্নয়নে অধিকতর প্রাধান্য দানের। সেলিনা হায়াত্ আইভী মঙ্গলবার দুপুর দেড়টায় আমার দেশকে দেয়া সাক্ষাত্কারে নানা বিষয়ে কথা বলেন। উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়টি দলমতের বাইরে সবার সঙ্গে কথা বলে এবং নতুন সংযোজিত এলাকার সমস্যা নিরূপণ না করা পর্যন্ত আমি কিছু বলতে চাই না।
মঙ্গলবার শহরের পশ্চিম দেওভোগ এলাকায় প্রয়াত জনপ্রিয় নেতা আলী আহাম্মদ চুনকার বাসায় ছিল গণমানুষের ঢল। সমাজের উঁচু স্তরের লোকের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও ব্যক্তিগতভাবে হাতে ফুলের মালা নিয়ে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছেন। পরিস্থিতি পরিবেশ দেখে মনে হয়েছে, যেন দীর্ঘদিন পরে নগরবাসী মুক্ত হয়েছে। তাদের সঙ্গে কথা বলেও একই চিত্র ফুটে উঠেছে। সন্ত্রাসের নগরীতে আইভীকে সবাই দেখছেন শান্তির দূত হিসেবে। শুভেচ্ছা জানাতে নারায়ণগঞ্জ জেলার বাইরে থেকেও অনেকে এসেছিলেন। বাড়িতে আইভীর অফিস কক্ষের দেয়ালে সাঁটানো তার বাবা আলী আহাম্মদ চুনকার একটি ছবি। এ ছবির ওপর রয়েছে তাজা ফুলের মালা। অন্যদিকে রয়েছে বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আইভীর নিজেরও একটি ছবি। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তোলা অপর একটি বিশাল ছবিও টানানো রয়েছে।
প্রশ্ন : দলীয় সিদ্ধান্তের বিপক্ষে কেন নির্বাচনে অংশ নিলেন?
আইভী : দল আমাকে সমর্থন দেয়নি এটা পুরোপুরি সত্য নয়। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আমি দোয়া নিয়ে এসেছিলাম। তিনি আমাকে দোয়া করেছিলেন। নারায়ণগঞ্জের জনতা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দাবি ছিল আমি নির্বাচন করি। আমার সঙ্গে দলের কিছু কিছু কেন্দ্রীয় নেতা না থাকলেও তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ছিলেন। তাদের অন্তরে ছিল আইভী। প্রথমেই বলব, আমার সঙ্গে ছিল লখো জনতা এবং মিডিয়ার বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনা। এ দুটি পুঁজিই আমাকে সাহস যুগিয়েছে।
প্রশ্ন : অনেক চাপ থাকা সত্ত্বেও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াননি কেন?
আইভী : নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে আমাকে অনেকেই অনেক লোভনীয় প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু আমি লোভী নই। নারায়ণগঞ্জবাসী যখন আমাকে সাহস যুগিয়েছে তখন থেকেই আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে নেই—নির্বাচন করবই। নারায়ণগঞ্জবাসীর সঙ্গে বেইমানি করে লোভনীয় প্রস্তাবগুলো লুফে নেব না। শেষ পর্যন্ত দেখলাম, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনমনীয় মনোভাবই আমার জয়কে ত্বরান্বিত করেছে। টাকার বিনিময়ে ঢাকা থেকে এক প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইতে অতিউত্সাহী নেতারা নারায়ণগঞ্জে এসেছিল। আমদানি করা নেতারা অনেক কথাই বলে গেলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কী হলো—টাকাকে হার মানিয়ে নৈতিকতার জয় হলো। জনগণ ভোটের মাধ্যমে প্রমাণ করেছে কেন্দ্র থেকে চাপিয়ে দেয়া কোনো সিদ্ধান্ত নারায়ণগঞ্জের মানুষ মেনে নেয় না। গণমানুষের মতামতের বিপক্ষে কোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্তই আলোর মুখ দেখে না, এটা আবারও অনুধাবন করতে হবে দলগুলোকে।
প্রশ্ন : এই ভোট বিপ্লব আপনার কাছে কেমন লাগছে?
আইভী : নিঃসন্দেহে ভালো। এ জয় লক্ষ জনতার। নগরবাসী আমাকে সম্মানিত করেছেন। মনে হচ্ছে, বড় একটি চ্যালেঞ্জ জয় করেছি। জয়ের পরপরই নিজেকে কিছুটা হালকা বোধ হলেও ধীরে ধীরে মনে হচ্ছে, অনেক ভারী একটি দায়িত্ব কাঁধে। কারণ, নারায়ণগঞ্জবাসীর ঋণে আমি জর্জরিত। উন্নয়নের মাধ্যমে মানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারলেই নিজেকে সার্থক মনে হবে। মানুষের সেবা করে, তাদের পাশে থেকে, তাদেরই দেয়া ভালোবাসার ঋণ বয়ে বেড়াতে চাই বাবার মতো মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। মানুষকে ভালোবেসেই যেন বাবার মতো কাফনের কাপড় পরতে পারি। আল্লাহর কাছে এই প্রার্থনাই করি। এসময় তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, মানুষকে ভালোবাসলে মানুষ ঠকায় না।
প্রশ্ন : বিজয়ের কৃতিত্ব কাকে দেবেন?
আইভী : আমি বলব, ব্যক্তি আইভীর বিজয় ঘটেনি, ঘটেছে নারায়ণগঞ্জবাসীর বিজয়। এখানকার প্রতিটি মানুষের বিজয়। এ বিজয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের বিজয়। এ বিজয় দেশবাসীরও। সারাদেশ থেকে আমি শুভেচ্ছাবার্তা পেয়েছি। দেশের কোনো একটি স্থানে যখন সত্যের জয় হয় তখন সে জয়ের আনন্দ সারাদেশের মানুষের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ে। নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনের পর সে সত্য আরও একবার প্রমাণিত হলো। যারা আমাকে ভোট দিয়ে মেয়র নির্বাচিত করেছেন তাদের কাছে আমি ঋণী রয়ে গেলাম। আমি ঋণী হলাম দেশবাসীর ভালোবাসার কাছেও। আমার চেষ্টা থাকবে সকলের দুখে-সুখে পাশে থাকার।
প্রশ্ন : মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন, ভবিষ্যত্ ইচ্ছে কী?
আইভী : আপাতত ভবিষ্যত্ ইচ্ছে একটাই—এলাকার জন্য কাজ করা। পরিকল্পনা করে উন্নয়ন করতে পারলে বদলে যাবে নারায়ণগঞ্জের চিত্র। উন্নয়নের প্রশ্নে যা যা করা প্রয়োজন, যাদের সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন, এক টেবিলে বসে আমি সব করব। নির্বাচনে অংশ নেয়া অপর ৫ মেয়র প্রার্থীর সঙ্গেও আমি আলোচনা করে তাদের সহযোগিতা ও পরামর্শ নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই।
প্রশ্ন : আপনি কি মনে করেন সবাই আপনার সঙ্গে আসবে?
আইভী : আমি মনে করি আসা উচিত। আমি অনেক আশাবাদী মানুষ। আশা করি, সবাই এগিয়ে আসবে। কারণ, আমি দলবাজি পছন্দ করি না। আমি জনগণের জন্য কাজ করতে চাই। তবে কিছুটা শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, হয়তো কিছু মানুষ ও একটি মহল তাদের স্বার্থের জন্য কিছুটা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে চাইবে। এ ধরনের কোনো পরিস্থিতির উদ্ভব হলে নারায়ণগঞ্জের লক্ষ জনতাকে পাশে নিয়েই আমি প্রতিরোধ করব। আমার বিশ্বাস, গণজোয়ারের কাছে কোনো ধরনের বাধা অতীতে যেমন টেকেনি ভবিষ্যতেও টিকবে না। আমি কারও জন্যই ক্ষতিকারক নই। ফলে সাধারণ মানুষের সমর্থন হারাবার মতো কিছু আমার দ্বারা ঘটবে না।
প্রশ্ন : নির্বাচনের ব্যয় কিভাবে জোগাড় হলো?
আইভী : আমি খুব সাধারণ জীবনযাপন করি। অর্থ-বিত্ত নেই বলেই হয়তো মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। মানুষ আমাকে অন্তর থেকে দোয়া করেছে। আমাকে ভোট কিনতে হয়নি, তাই খরচ খুব বেশি না। আর যতটুকু খরচ তা চলেছে নিজের জমানো টাকায়। আমি ৮ বছর নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ছিলাম। ওই সময়ে যে সম্মানী পেতাম সেগুলো জমিয়ে ব্যাংকে রেখেছিলাম। জমানো সেই ১০ লাখ টাকা দিয়েই আমি নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। কিন্তু আমার জন্য নির্বাচন করা লোকজনদের পেছনে আমার খুব বেশি টাকা খরচ করতে হয়নি। নারায়ণগঞ্জের মানুষ আমার ও আমার বাবা আলী আহাম্মদ চুনকার প্রতি ভালোবাসা দেখিয়ে নিরলসভাবে দিনরাত হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেছেন।
প্রশ্ন : পৌরসভার প্রাপ্ত টাকা ব্যাংকে জমালেন, সংসার চলেছে কিভাবে?
আইভী : আমার দুই সন্তান। একজন থাকে নারায়ণগঞ্জে অপর ছেলে নিউজিল্যান্ডে তার বাবার সঙ্গে। আমার স্বামীই সংসারের খরচ বহন করেন।
প্রশ্ন : নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
আইভী : নারায়ণগঞ্জবাসী ব্যালটের মাধ্যমে একটি বার্তা সবাইকে দিয়েছে—সেটা হলো তারা অপশক্তি, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, গডফাদারদের প্রত্যাখ্যান করেছে। আমি মনে করি, আইভী এসব অপশক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার কারণেই মানুষ তাকে কাছে টেনে নিয়েছে।
প্রশ্ন : আপনি বিএনপিতে যোগ দিচ্ছেন—এমন কথা শোনা যাচ্ছে, আসলে ঘটনা কী?
আইভী : এটি ডাহা মিথ্যা কথা। আমাকে বিতর্কিত করতে কিছু মানুষের অপপ্রচার মাত্র। কিছু মানুষ চেয়েছিল আমার বিরুদ্ধে এ ধরনের কথা বলে ফায়দা লুটতে। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছে। আমি স্পষ্ট ভাষায় বলছি, আমার গায়ে সেই আলী আহাম্মদ চুনকার রক্ত বইছে, যে চুনকা নারায়ণগঞ্জ জেলা ও শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। তাকে মানুষ দুইবার পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছিল। দলের সঙ্গে কখনও আমার বাবা বেইমানি করেননি। ’৭৫ পরবর্তী সময়ে দলের নেতাকর্মীদের দুঃসময়ে পাশে ছিলেন। সেই চুনকার মেয়ে হয়ে আমি কখনও দলচ্যুত হবো, এটা তো ভাবার কোনো কারণ নেই। আমি আওয়ামী লীগ করি, আওয়ামী লীগ করব। কারণ, আমি বাবার আদর্শে অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল মানুষ। চুনকার মেয়েও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মেধা মস্তিষ্কে লালন করে।
প্রশ্ন : আওয়ামী লীগ থেকে আপনার প্রত্যাশা কি?
আইভী : আমি সব সময় দলের একজন কর্মী হয়ে কাজ করতে চাই। কোন পদ-পদবির প্রতি আমার দুর্বলতা নেই। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এক প্রার্থীর পক্ষে ঢাকা থেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অনেক নেতা এসেছিলেন। কিন্তু তারা পারেননি। স্থানীয় নেতাদের নিয়ে আমি জিতেছি। আমি আশা করব, দল এ ব্যাপারটা গুরুত্ব সহকারে দেখবে। দল যদি আমাকে কোনো দায়িত্ব দেয় তাহলে অবশ্যই সকলের সঙ্গে আলোচনা করে কাজ করব। কিন্তু সিটি করপোরেশনের উন্নয়নে আমি কোনো দলবাজি করব না। রাজনীতি থাকবে রাজনীতির স্থানে।
প্রশ্ন : আপনার সামনের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করবেন কিভাবে?
আইভী : ২০০৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি যখন আমি পৌরসভার চেয়ারে বসেছিলাম, তখন পৌরসভার দেনা ছিল দুই কোটি আট লাখ টাকা। গত ২৭ জুন আমি যখন ছেড়ে আসি, তখন পৌরসভায় জমা ছিল ১২ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। আরও ৪০ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ চলছিল। আমি মেয়র হওয়ার আগে পৌরসভার নিজস্ব রাস্তা ছিল ৭৮ কিলোমিটার। গত ৮ বছরে সেটা হয়েছে ১৪০ কিলোমিটার। আগে পৌরসভার বিভিন্ন কর আদায় হতো গড়ে ৩০ শতাংশ। আমি সেটা ৯০ শতাংশে উন্নীত করেছি। আমি দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দুই বছর ছিল সবচেয়ে কঠিন সময়। তখন পৌর এলাকার লোকজন কাজকে সানন্দে গ্রহণ করেনি। কিন্তু পরে যখন পৌরবাসী সুবিধা ভোগ করতে লাগলো তখন তারা কাজগুলো করতে সহায়তা করতে এগিয়ে আসে। সুতরাং আমি জানি এবং চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করি। আগামীতেও মানুষের সহযোগিতায় সেটা করতে পারব।
চার ভাইবোনের মধ্যে আইভী সবার বড়। ১৯৮৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তাদের বাবা আলী আহাম্মদ চুনকা মারা যাওয়ার পর চুনকা পরিবারের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আইভীকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার পরামর্শ দিলেন। কিন্তু আইভী চিকিত্সক হওয়ার বাসনায় ১৯৮৫ সালে বৃত্তি নিয়ে পড়তে গেলেন তত্কালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের ওদেসা নগরের পিরাগভ মেডিকেল ইনস্টিটিউটে। সেখানে ডাক্তারি পাস করে দেশে ফেরেন ১৯৯২ সালে। মিটফোর্ড হাসপাতালে শিক্ষানবিস চিকিত্সক হিসেবে কাজ করার সময় ওই বছরই নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পান আইভী। ওই সময়ে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। তখন শহরের ২টি হত্যাকাণ্ড আইভীকে ভাবিয়ে তোলে। স্বামী কাজী আহসান হায়াতের সঙ্গে চলে যান নিউজিল্যান্ডে। সেখানেই জন্ম নেয় সন্তান কাজী সাদমান হায়াত। নিউজিল্যান্ডে ইমিউনোলজি অ্যান্ড ব্লাড ট্রান্সফিউশনের ওপর চার বছরের স্নাতকোত্তর ডিগ্রি শেষ করেন আইভী। ২০০৩ সালের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনের আগে আইভীর নাম জানতো না শহরের অনেকেই। নির্বাচনের মাত্র ১৭ দিন আগে নিউজিল্যান্ড থেকে তাকে দেশে আনা হয়। করা হয় পৌরসভার চেয়ারম্যান প্রার্থী। কিন্তু আইভীকে তখনও কেউ ভালো চিনতো না। শুধুমাত্র তার প্রয়াত পিতা পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান আলী আহাম্মদ চুনকার নামের ওপর ভর করে আইভী প্রতিপক্ষ প্রার্থীকে পরাজিত করেন। তখন থেকেই আইভী আলোচনায় চলে আসেন।
ডা. সেলিনা হায়াত্ আইভী এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে আলোচিত নারী। ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে লড়াই করে তিনি পর পর দু’বার হয়েছেন জনপ্রতিনিধি। তার বাবা আলী আহাম্মদ চুনকাও জীবদ্দশায় দলের বিরুদ্ধে লড়াই করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। ৩৮ বছর পর বাবার মতোই একই লড়াই করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র নির্বাচিত হলেন ডা. সেলিনা হয়াত্ আইভী।

No comments

Powered by Blogger.