'হয় স্বাধীনতা, না হয় মৃত্যু' by ড. মাহবুব উল্লাহ্

স্বাধীনতা অর্জনের চাইতে স্বাধীনতা রক্ষা করা অনেক কঠিন-এ কথাটি বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দিনে দিনে আরও সত্য হয়ে ধরা পড়ছে। ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির অভ্যুদয় সেই রাষ্ট্রটি এখন নানা চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে ৩৮ বছর পার করেছে। এই ৩৮ বছরের মধ্যে একটি বছরও খুঁজে পাওয়া যাবে না যখন এ রাষ্ট্রটির কাছ থেকে শেক্সপিয়রের নাটক 'মার্চেন্ট অব ভেনিসের' বহুল আলোচিত চরিত্র ---------- এটি কোনো সুদখোর ব্যক্তি নয়।

এটি একটি রাষ্ট্র। রাষ্ট্রটির নাম ভারত। মুক্তিযুদ্ধে সহায়তার ঋণপাশে আবদ্ধ করে এ রাষ্ট্রটি বাংলাদেশের কাছ থেকে সুদে-আসলে সবকিছু আদায় করে নিতে চাচ্ছে। গত ৩৮ বছর এ দেশে অনেক সরকার এসেছে। অনেক সরকার বিদায় নিয়েছে। এসব সরকারের মধ্যে কিছু সরকার ছিল ভারত অনুগত। আবার কিছু ছিল ভারতের প্রতি বিরক্ত। বিরক্ত কিংবা অনুরক্ত নির্বিশেষে কোনো সরকারই ভারতকে বড় ধরনের ছাড় দিতে পারেনি। এটি সম্ভব হয়েছে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বপ্রিয় জনগণের সচেতনতা ও প্রতিরোধের ফলে। তবে এ কথা স্বীকার করতে হবে, ছাড় যে একেবারে দেয়া হয়নি তা কিন্তু নয়। ১৯৭৪ সালে ভারত ফারাক্কায় পরীক্ষামূলকভাবে ফিডার ক্যানেল ৪১ দিনের জন্য চালু করার অনুমতি চাইল। শেখ মুজিবুর রহমানের ভারত-সুহৃদ সরকার ভারতের সেই আবদার ফেলতে পারেনি। পরীক্ষামূলকভাবে ফিডার ক্যানেল চালু করে ভারত স্থায়ীভাবে ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে গঙ্গার পানি ভাগীরথীর দিকে নিয়ে গেল। শুরু হলো বাংলাদেশে বিশেষ করে উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে মরুকরণ ও লবণাক্ততার প্রক্রিয়া। বাংলাদেশের কৃষি, শিল্প, মৎস্য আহরণসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বিপর্যয়ের মুখে পড়ল। '৭৪-এর মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ ভারতের হাতে বেরুবাড়ি তুলে দিল; কিন্তু বিনিময়ে 'তিন বিঘা করিডোর' বাংলাদেশ পেল না। এই তিন বিঘা করিডোর দিয়েই বাংলাদেশের ছিটমহল দহগ্রাম ও আঙ্গরপোতাবাসীর মূল ভূখন্ডে যাতায়াত করার কথা ছিল। বাংলাদেশ বেরুবাড়ি হস্তান্তরে বিলম্ব করেনি। অতি দ্রুত সংবিধানে সংশোধনী অন্তর্ভুক্ত করে বাংলাদেশ চুক্তির দায় পালন করল; কিন্তু ভারত অত সহজে তার দায়িত্ব পালনে রাজি হলো না। হয়ত ভারত সরকারের উস্কানিতেই জনৈক ভারতীয় এ চুক্তির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা ঠুকে দিয়েছিল। সেই মামলার রায় আজ-অবধি পাওয়া যায়নি। বিচারাধীন বিষয় এবং ভারতে আইনের শাসন আছে অজুহাতে আজও দহগ্রাম-আঙ্গরপোতাসংক্রান্ত মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির অন্যতম অঙ্গীকার তিন বিঘা করিডোর বাংলাদেশের কাছে চিরস্থায়ীভাবে লিজদানে বিরত থাকল ভারত। চানক্যের ভাবশিষ্য ভারতীয় শাসকগোষ্ঠীর কাছ থেকে এর চাইতে ভালো কিছু কি আশা করা যায়? ১৯৯৬-২০০১ পর্বে শেখ হাসিনার সরকার দুটি চুক্তি সম্পাদন করে। এর একটি হলো ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গার পানি চুক্তি এবং অপরটি হলো তথাকথিত পার্বত্য শান্তিচুক্তি। প্রথমোক্ত চুক্তিটি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে। দ্বিতীয়টি পার্বত্য বিদ্রোহীগোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সঙ্গে। গঙ্গার পানি চুক্তিতে কোনো এঁধৎধহঃবব ঈষধঁংব ছিল না। ছিল না অৎনরঃৎধঃরড়হ ঈষধঁংব. এই চুক্তির ফলাফল কী দাঁড়িয়েছে জনগণ তা জানে। চুক্তিতে বর্ণিত পরিমাণ পানি শুকনো মৌসুমে পাওয়া যাচ্ছে না। প্রমত্তা পদ্মা পরিণত হয়েছে এক ধু-ধু বালুচরে। আর পার্বত্য শান্তিচুক্তি ছিল বস্তুত ভারতের সঙ্গেই সম্পাদিত এক ধরনের চৎড়ীু ঞৎবধুঃ. চৎড়ীু ঞৎবধুঃ বলছি এ কারণে যে, পার্বত্য সশসত্র বিদ্রোহী দল শান্তি বাহিনী ভারতের কাছ থেকে অসত্রশসত্রসহ নানা রকম বৈষয়িক সাহায্য পেয়েছে এবং ভারতের পার্বত্য ত্রিপুরার শিবিরে অবস্থান করে বিদ্রোহী তৎপরতা চালানোর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়েছে। আজ শেখ হাসিনার সরকার ঘোষণা দিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে এক ব্রিগেড ও কয়েক ব্যাটালিয়ন সৈন্য প্রত্যাহারের এবং অস্থায়ী সেনাক্যাম্প প্রত্যাহারের। পার্বত্য চট্টগ্রামের বাংলা ভাষাভাষী জনগণ আজ ভয়ানক আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিনাতিপাত করছে। ওদিকে সন্তু লারমার দাবি, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সব সৈন্য প্রত্যাহার করতে হবে। অর্থাৎ পার্বত্য চট্টগ্রামকে পূর্ব তিমুরের ভাগ্যবরণ করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম যাতে পূর্ব তিমুরের মতো পরিণতির দিকে গড়িয়ে যায়, সেজন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অষ্ট্রেলিয়া এবং ইউএনডিপির মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাও তৎপর রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ও আস্থা স্থাপনের প্রক্রিয়া জোরদারকরণের নামে এসব গোষ্ঠী সেখানে প্রচুর অর্থ ব্যয় করছে এবং এমন ধরনের মনোভাব ছড়িয়ে দিচ্ছে যাতে সেখানে বিচ্ছিন্নতাবাদের পালে হাওয়া লাগে। বর্তমান সরকারের আমলে সরকারের মন্ত্রীসহ দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা এমন সব কথা বলছেন, যাতে প্রতীয়মান হয় যে, এ সরকার ভারতকে করিডোর, চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারসহ বড় রকমের ছাড় দিতে যাচ্ছে। ভারত এর মধ্যেই বাংলাদেশের সমুদ্র অঞ্চলের উপর হিস্যা দাবি করে বসে আছে। তালপট্টি দখল করে নিয়েছে। সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশীদের হত্যা করছে ভারত। ভারতের আত্মা চুনোপুঁটির চাইতেও ছোট। ভারতীয় বাজারে বাংলাদেশের মুষ্টিমেয় সংখ্যক পণ্য প্রবেশের বিরুদ্ধে অশুল্ড বাধা সৃষ্টি করছে ভারত। বাংলাদেশী পণ্যের মান বাংলাদেশী সংস্থা বিএসটিআই প্রত্যয়ন করলেই চলবে না, এ জন্য ভারতীয় মান নিয়ন্ত্রণ পরীক্ষার বাধাও অতিক্রম করতে হবে বাংলাদেশী পণ্যকে। অথচ বাংলাদেশের মতো একটি বাজার না থাকলে ভারতীয় অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি কমপক্ষে দুই শতাংশ হ্রাস পেত। ভারত নানা অজুহাতে বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের সুবিধা দিতেও নারাজ। ভারতের এই আচরণের উদ্দেশ্য বাংলাদেশকে একটি পুরোপুরি ঈষরবহঃ ঝঃধঃব-এ পরিণত করা। বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে, তার জন্য অনেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তৎপরতাকেই দায়ী করতে চায়। ভারতের সঙ্গে '৭ দফা গোপন চুক্তি' এবং ২৫ বছর মেয়াদি তথাকথিত 'শান্তি মৈত্রী ও সহযোগিতা চুক্তি'র আড়ালে বাংলাদেশ পরিণত হয়েছিল একটি নিম সার্বভৌম দেশে। বর্তমান সরকারের আমলে বাংলাদেশকে ঘিরে ভারতের যতসব এজেন্ডা, সেগুলো বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ পরিণত হবে একটি অসার্বভৌম দেশে। বুক ফেটে কান্না আসে, এ জন্যই কি লাখ লাখ শহীদ মুক্তিযুদ্ধে আত্মাহুতি দিয়েছিল? আজকের পরিস্থিতিতে প্রয়োজন বিশাল গণজাগরণের। প্রয়োজন বিশাল গণপ্রতিরোধের। যে প্রতিরোধের মুখে কারুর পক্ষেই মীর জাফরি করা সম্ভব হবে না। ব্রিটিশবিরোধী ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামকালে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বলেছিলেন, 'তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব।' ল্যাটিন আমেরিকার মুক্তি সংগ্রামী যোশে মার্তির রণধ্বনি ছিল খরনবৎুঃ ড়ৎ উবধঃয-হয় স্বাধীনতা, না হয় মৃত্যু। আজ বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে এমনি অগ্নিমন্ত্র উচ্চারণ করতে হবে। এ দেশের দেশপ্রেমিক জনতা আজ এই রণধ্বনি শুনতে চায়। মানুষ শুনতে চায় কবি নজরুলের ভাষায় 'দুর্গম গিরি কান্তার মরু দুস্তর পারাবার'/লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি নিশিথে যাত্রীরা হুঁশিয়ার।' যাত্রীদের হুশিয়ার করে দেয়ার বুলন্দ আওয়াজ আজ যিনি তুলতে পারবেন তিনিই হবেন এ জাতির অমানিশির রাহবার। ভারতীয় শাসকগোষ্ঠী খুব ভালো করেই জানে বাংলাদেশের ১৫ কোটি মানুষ এক মহাজাগরণে জেগে উঠলে অপ্রতিরোধ্য শক্তিতে পরিণত হবে এবং সেই মহাজাগরণের ঢেউ মূল ভারত-ভূখন্ডের মধ্যেও আছড়ে পড়বে। তাই বাংলাদেশী জাতির প্রখর জাতীয় চেতনাকে ভোঁতা করে দিতে ভারত নীরব আগ্রাসনের পথ বেছে নিয়েছে। এই নীরব আগ্রাসনে ভারত ফেনসিডিল ও নানাবিধ মাদকদ্রব্যে বাংলাদেশকে সয়লাব করে দিচ্ছে। এসব মাদক সেবন করে বাংলাদেশের তরুণ সমাজ দিনে দিনে হয়ে পড়ছে নির্বীর্য, পথভ্রষ্ট এবং লক্ষ্যহীন। একটি দেশের তরুণ প্রজন্মকে ধ্বংস করে দিতে পারলে সে দেশের ভবিষ্যৎ বলে কিছু থাকে না। ভারতীয় শাসকশ্রেণী আমাদের ভবিষ্যৎকে হরণ করার পাঁয়তারায় মেতে উঠেছে। ইংরেজরা চীনাদের আফিম খাইয়ে নির্বীর্য করে ফেলেছিল। শেষ পর্যন্ত চীন ও ব্রিটেনের মধ্যে আফিম যুদ্ধ সংঘটিত হয়। চীনকে পদানত করতে ইংরেজরা আফিম নামক মাদকের অসত্র ব্যবহার করেছিল। এ সম্পর্কে পাঠক তার কৌতূহল নিবৃত্ত করতে পারবেন যদি তিনি ইসরাইল অ্যাপষ্টেইনের ঋৎড়স ঙঢ়রঁস ডধৎ ঞড় খরনবৎধঃরড়হ গ্রন্হটি পাঠ করেন। গ্রন্হটির বাংলা অনুবাদও হয়েছে। তরুণ সমাজ জাতির ভরসা। এ দেশে তরুণদের একটি বড় অংশ ছাত্রসমাজ। এ দেশের ইতিহাস বলে, বিগত শতাব্ধীর অনেকটা জুড়েই ছাত্ররা জাতিকে পথ দেখিয়েছে। ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন, পাকিস্তান আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধিকারের আন্দোলন এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে ছাত্ররাই চেতনার অগ্নিশিখা প্রজ্বলিত করেছে। এ দেশের মানুষ ছাত্রদের এতটাই বিশ্বাস করত এবং এতই ভালোবাসত যে তাদের কথায় 'চুয়ান্নতে' যুক্তফ্রন্টের নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছে। এমনকি '৭০-এর নির্বাচনেও ছাত্রসমাজ ছয় দফার পক্ষে গণরায় অর্জনে বিরাট ভূমিকা পালন করেছে। স্বাধীনতার প্রথম ক'বছর ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র ও তরুণদের একাংশ সশসত্র বিপ্লব করতে চেয়েছিল। আজ সেই ছাত্র ও তরুণসমাজ কোথায়? পাকিস্তান আমলে ভিয়েতনামে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ছাত্ররা প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের আগুন জ্বেলেছিল। এমনকি স্বাধীনতা উত্তরকালে ১৯৭২ সালে মার্কিনি আগ্রাসনের প্রতিবাদ করতে গিয়ে মার্কিন তথ্য কেন্দ্রের সামনে দুটি তরুণ তাজাপ্রাণ শহীদ মতিউর ও শহীদ কাদের রক্ষীবাহিনীর বুলেটে আত্মাহুতি দিয়েছিল। এ ঘটনার পর যে গণজাগরণের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল, সেই সম্ভাবনা মস্কো অনুগত নেতৃত্বের সুবিধাবাদের যূপকাষ্ঠে বলি হয়েছিল। আজ ইরাকে যে মার্কিনি আগ্রাসন চলছে এবং যে গণহত্যা সংঘটিত হচ্ছে তার বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কয়টি প্রতিবাদ মিছিল বেরিয়েছে? পৃথিবীটা কেন এমন করে বদলে গেল সেটি এক বিরাট জিজ্ঞাসা। আমার মনে হয়, সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যবাদীরা আমাদের চিন্তা-চেতনার জগৎকে পরিপূর্ণভাবে দখল করে নিয়েছে। তা না হলে গোটা জাতি এমন প্রতিবাদহীন হয়ে পড়ার কথা ছিল না। এ রকম ঘটনা শুধু আমাদের দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশেই এই প্রতিবাদহীনতার সংস্কৃতি সংক্রামক ব্যাধির মতো ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যতিক্রম শুধু লাতিন আমেরিকার গুটিকয়েক দেশ। ব্যতিক্রম ইরানও; কিন্তু সেখানেও সাম্রাজ্যবাদীরা সুকৌশলে বিভেদের বীজ ছড়িয়ে দিয়েছে। একটি দেশ কিংবা জাতিকে কখনও দৈহিকভাবে পরাস্ত করলেও আশা থাকে কোনো একদিন সে জাতি আবার মাথা তুলে দাঁড়াবে। এটি কেবল সম্ভব যদি জাতিটির দুটি হাত শৃঙ্খলিত হলেও আত্মা শৃঙ্খলিত না হয়। লেনিন প্রশ্ন তুলেছিলেন, কে স্বাধীন? কারারক্ষী সিপাহি না কারাবন্দি দেশপ্রেমিক? লেনিনই জবাব দিয়েছেন-কারাবন্দি দেশপ্রেমিক ব্যক্তিটিই স্বাধীন। কারণ কারারক্ষী শুধু আজ্ঞাবাহী। আর কারাবন্দি দেশপ্রেমিকটি নিজ আত্মাকে বিক্রি করতে নারাজ। কেউ কেউ মনে করেন প্রতিবেশী ভারত পরাশক্তিগুলোর সহায়তায় বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের মানুষকে এমন বেড়াজালে আবদ্ধ করে ফেলবে যাতে করে বাংলাদেশের মানুষই বলতে বাধ্য হয়, তোমরা যা চাইছো সবই আমরা দিতে প্রস্তুত। প্রয়োজনে লেনিনের সেই কারারক্ষীর মতো আজ্ঞাবহ হতেও কসুর নেই। অর্থাৎ অবস্থা এমন দাঁড়াবে যে, বাংলাদেশ পাকা ফলের মতো ভারতের অাঁচলে ঝরে পড়বে; কিন্তু এ দেশের অনেক আত্মবিকৃত বুদ্ধিজীবী ও চিহ্নিত কিছু রাজনৈতিক নেতা এই ভয়াবহ আশঙ্কা সম্পর্কে একেবারেই নিশ্চুপ। বরং পারলে হাত বাড়িয়ে দিল্লির প্রভুদের কীভাবে তুষ্ট করা যায়, মনোরঞ্জন করা যায় তার জন্যই উ�গ্রীব। এসব ভাড়াটে বুদ্ধিজীবী ও দেশপ্রেমবর্জিত রাজনৈতিক নেতার অশুভ প্রভাব থেকে জাতির যত দ্রুত মোহভঙ্গ ঘটে ততই মঙ্গল। আমরা কি বুঝতে পারছি বাংলাদেশ কত বড় সঙ্কটে পড়েছে? আমরা যদি ঘুরে না দাঁড়াই এবং শুধু গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দেই তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ ইরাক-আফগানিস্তানের চাইতেও ভয়াবহ হতে পারে। অতীতের ভুলভ্রান্তি ও দিক্ভ্রান্ততাকে ঝেড়ে ফেলে জেগে ওঠার কোনো বিকল্প নেই। আমরা অপেক্ষায় থাকব যোসে মার্তির মতো একজন আমাদের বলবেন, 'হয় স্বাধীনতা, না হয় মৃত্যু'।

No comments

Powered by Blogger.