৭০০ কোটিতম শিশুটি কি সত্যিই এসেছে?

য়েক মাস আগেই জাতিসংঘ ঘোষণা দিয়ে রেখেছিল ৩১ অক্টোবর সোমবার পৃথিবীর জনসংখ্যা ৭০০ কোটিতে ঠেকবে। এমনকি নির্দিষ্ট করে ওই দিনই জন্ম নেবে ৭০০ কোটিতম শিশুটি। সাধারণভাবে বিশ্ব জনসংখ্যার এই নতুন মাইলফলককে 'অর্জন'-এর চেয়ে আশঙ্কাই বলা উচিত। কিন্তু বিভিন্ন দেশের সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলো দিনটিতে উৎসবের পরিকল্পনা নেয়। সোমবার '৭০০ কোটিতম শিশু' জন্মের দাবিদার হওয়ার প্রতিযোগিতা শুরু হয় দেশে দেশে। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে ঘোষণা না দেওয়া হলেও শিশুকল্যাণমূলক বেসরকারি সংস্থা প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল ঘোষণা দেয়, ওই দিন ভারতের উত্তর প্রদেশে জন্ম নেওয়া নার্গিসই সেই শিশু।


নার্গিসের বাবা অজয়কে আয়োজন করে জন্মসনদ দেয় তারা। কিন্তু বাস্তবে এ দাবি কতটা যুক্তিযুক্ত?পরিসংখ্যানের তত্ত্ব অনুযায়ী এ ধরনের দাবি অবৈজ্ঞানিক। জাতিসংঘের যে দপ্তর জনসংখ্যার হিসাব রাখে তার প্রধান গেরহার্ড হেইলিজের মতে, ৭০০ কোটিতম শিশু কোথায় জন্ম নেবে সেটা নির্দিষ্ট করার চেষ্টা 'মূর্খামি' ছাড়া কিছুই না। বিবিসিকে তিনি বলেন, জাতিসংঘই বলে যে তাদের পরিসংখ্যানে ১ থেকে ২ শতাংশ মার্জিন এরর বা ভ্রান্তিসীমা ধরা হয়। সেই হিসাবে ৩১ অক্টোবর বিশ্বের জনসংখ্যা প্রকৃতপক্ষে ৭০০ কোটির চেয়ে পাঁচ কোটি ৬০ লাখ কম বা বেশি হবে। অর্থাৎ বিশ্বের জনসংখ্যা ওই মাইলফলকে পেঁৗছানোর সময় হচ্ছে ৩১ অক্টোবরের ছয় মাস আগে বা পরের কোনো এক দিন।
জাতিসংঘের জনসংখ্যাবিষয়ক দপ্তরের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ১২ মাসের কম সময়ের ভ্রান্তসীমা বিবেচনায় কারো পক্ষেই এভাবে তারিখ নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। 'মূলত উন্নয়নশীল বেশ কিছু দেশের জনসংখ্যাতাত্তি্বক দুর্বল পরিসংখ্যানের কথা বিবেচনায় নিলে এ অনিশ্চয়তার ফাঁরাকটা আরো বড় হবে।'
এমনকি উন্নত দেশের ক্ষেত্রেও এমন সমস্যা বিরল নয়। লন্ডন স্কুল অব ইকনমিকসের অধ্যাপক মাইক মারফি জানান, ২০০১ সালে যুক্তরাজ্যের আদমশুমারিতে এমন জটিলতা সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন হিসাব থেকে জনসংখ্যা ধরা হয়েছিল ছয় কোটি। কিন্তু শুমারিতে দেখা যায় প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে ১০ লাখ কম।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জাতিসংঘ আসলে সময়ের আগেই দৌড় শুরু করেছে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের আদমশুমারি ব্যুরোর হিসাবে বিশ্বের জনসংখ্যা ৭০০ কোটিতে পেঁৗছানোর সম্ভাব্য সময় হচ্ছে আগামী বছরের মার্চ-এপ্রিলের কোনো একটি দিন। ভিয়েনার ইনস্টিটিউট অব ডেমোগ্রাফির একদল গবেষকের বিচারেও সেটা খুব সম্ভব আগামী বছর অর্থাৎ ২০১২ সাল। এক্ষেত্রে পরিসংখ্যানবিদ হিসেবে আসল কথাটা বলেছেন অধ্যাপক মাইক মারফি। তিনি বলেন 'যেহেতু তুলনা করার জন্য আপনি সুনির্দিষ্ট সংখ্যা পাচ্ছেন না। আপনাকে স্বাভাবিকভাবেই অনুমানের ওপর নির্ভর করতে হবে...আমাদের পক্ষে কখনই একটি নির্দিষ্ট, যথাযথ সংখ্যা পাওয়া সম্ভব নয়।'
তাহলে জাতিসংঘ কেন এভাবে একটি দিনকে ৭০০ কোটিতম জনসংখ্যার দিন ঘোষণা করল? কেনইবা এত প্রচার, আয়োজন। সেটার উত্তরও দিয়েছেন গেরহার্ড হেইলিজ। আর তা হচ্ছে, যে গতিতে বিশ্বের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে সেদিকে বিশ্ববাসীর আগাম মনোযোগ আকর্ষণ করা ভীষণ প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১৩ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে বিশ্বের জনসংখ্যা ৬০০ থেকে ৭০০ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। তাই নির্ভুল সংখ্যার কথা না ভেবে সময়ের আগেই দৌড় শুরু করাকে গুরুত্ব দিয়েছে জাতিসংঘ।
আর ভারতের ওই মেয়েশিশুকে যে '৭০০ কোটিতম' ঘোষণা করা হলো! সেটারও একটা উদ্দেশ্যের কথা জানিয়েছে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল। ছেলে শিশুর আকাঙ্ক্ষায় প্রতিবছর লাখ লাখ মেয়ে ভ্রূণ হত্যা করা হয় ভারতে। তাই বিশেষ এই দিনের জন্য একটি কন্যাশিশুকেই বেছে নিয়েছে তারা। সূত্র : বিবিসি।

No comments

Powered by Blogger.