কেন্দ্রীয় নেতাদের দ্বৈত ভূমিকার বলি তৈমুর by তানভীর সোহেল

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে শেষ মুহূর্তে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে সমর্থন প্রত্যাহার করায় বিএনপির কেন্দ্রীয় ও মাঠপর্যায়ের নেতাদের মধ্যে অবিশ্বাস ও সন্দেহ তৈরি হয়েছে। এ জন্য কেন্দ্র থেকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত কিছু নেতার দ্বৈত ভূমিকাকে দায়ী করেছেন নারায়ণগঞ্জের নেতারা। তবে বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, নির্বাচন থেকে সরে এসে বিএনপি রাজনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছে। এই লাভ জাতীয় ও স্থানীয় রাজনীতিতে ভূমিকা রাখবে। তবে স্থানীয় নেতাদের মত, এর ফলে নারায়ণগঞ্জে বিএনপি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় কয়েকজন নেতা বলেন, দলের কিছু নেতা তৈমুর আলম খন্দকারের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন, আবার নির্বাচন বর্জনের জন্যও দলীয় প্রধানকে বুঝিয়েছেন। তৈমুর আলম এ জন্য কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমানকে দায়ী করেছেন।
৩১ অক্টোবর তৈমুর আলম প্রথম আলোকে বলেন, চেয়ারপারসনকে ভুল বুঝিয়ে এমনটা করানো হয়েছে। নেত্রীর সঙ্গে দেখা করে তিনি এর কারণ জানতে চাইবেন। তিনি বলেন, ‘এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমার সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি। কেন্দ্র থেকে যে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে, আমি শুধু তা পাঠ করেছি।’
জানা গেছে, এই লিখিত বক্তব্যটি কেন্দ্র থেকে ফ্যাক্সযোগে পাঠানো হয়েছে। তৈমুর আলম প্রথমে নিজে বার্তাটি পড়তে রাজি হচ্ছিলেন না। কিন্তু চেয়ারপারসনের কার্যালয় থেকে প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি সাংবাদিকদের কাছে দেওয়া হলে তৎক্ষণাৎ তা প্রচার হতে থাকে। কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানও সাংবাদিকদের ফোনে নির্বাচন বর্জনের বিষয়টি জানান। তখন বার্তাটি পাঠ করা ছাড়া তৈমুরের আর কোনো উপায় ছিল না।
বিএনপির একজন নেতা বলেন, মূলত কিছু ব্যবসায়ী শামীম ওসমানকে ঠেকাতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্বাচন বর্জনের পক্ষে বুঝিয়েছেন। তাঁরা এও বলেছেন যে তৈমুর আলমের জেতার সম্ভাবনা নেই।
বিএনপির একজন যুগ্ম মহাসচিব প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপি ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) বিরোধিতা করছে। এ কারণে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন থেকে সরে আসতে আগেই তৈমুর আলমকে বলা হয়েছিল। আ স ম হান্নান শাহর নেতৃত্বে গঠিত বিএনপির পর্যবেক্ষণ দল তৈমুর আলমকে সে কথা বলেও ছিল। কিন্তু তিনি নির্বাচন থেকে সরে আসতে চাননি। আর সর্বশেষ সেনা মোতায়েন না হওয়ায় বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে রিট করার প্রস্তুতি নেয়। তাই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করা না হলে দলের সেই নৈতিক অধিকার থাকত না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচন থেকে সরে আসাটা ঠিক হয়েছে। বিএনপি নির্বাচনে থাকলে চিত্রটা ভিন্ন হতো। সরকারদলীয় প্রার্থীকে জেতাতে কারচুপির আশ্রয় নেওয়া হতো।
স্থানীয় বিএনপির নেতারা বলেন, শামীম ওসমান জিতলে নারায়ণগঞ্জে তাঁদের রাজনীতি করা কঠিন হতো। সেলিনা হায়াৎ আইভী জেতায় সে সমস্যা হবে না। কিন্তু দল নির্বাচনে না থাকায় তাঁরা হতাশ হয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.