সরকারের ব্যাংক ঋণ বাড়ছেই

ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণ বাড়ছেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সতর্কতার পরও চলতি অর্থবছরের ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার নিট ঋণ নিয়েছে ১১ হাজার ৫৮১ কোটি টাকা। এতে মোট ঋণ দাঁড়িয়েছে ৮২ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ে এ খাতে নিট ঋণ ছিল ৯৭০ কোটি টাকা। সে হিসাবে একই সময়ের তুলনায় ১০ হাজার ৬১১ কোটি টাকা বেশি ঋণ নিয়েছে সরকার। আশানুরূপ রাজস্ব আদায় না হওয়া, সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমে যাওয়া, পর্যাপ্ত বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান না আসা, রেমিট্যান্স প্রবাহে ধীর গতিসহ নানা কারণে সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নিয়ে বাজেট ব্যয় মেটাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।


কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের ১২ মাসে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ১৮ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা। এরই মধ্যে সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ নেওয়া হয়েছে। ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত নেওয়া এসব ঋণের দৈনিক গড় অনুপাত দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা। সরকারের এসব ঋণের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নেওয়া হয়েছে ৭ হাজার ৮২ কোটি টাকা। তফসিলি ব্যাংকগুলো থেকে নিয়েছে ৪ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা।
প্রসঙ্গত, ১৫টি ব্যাংক ও ৩টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাইমারি ডিলার, যারা ট্রেজারি বিল ও বন্ডের বিনিময়ে সরকারকে ঋণ সরবরাহ করে। তবে বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে পর্যাপ্ত তারল্য না থাকায় তারা সরকারকে চাহিদা অনুপাতে ঋণ দিতে পারছে না। যে কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংককেই বেশি ঋণ সরবরাহ করতে হচ্ছে। আর বাংলাদেশ ব্যাংক সাধারণত নতুন নোট ইস্যু করে টাকা সরবরাহ করে থাকে, যা মূল্যস্ফীতিকে উস্কে দেয় বলে বলা হয়ে থাকে।
যদিও অর্থমন্ত্রী সম্প্রতি বলেছেন, সরকারের ব্যাংক ঋণের বেশিরভাগই ভর্তুকিতে ব্যয় হচ্ছে। তাই এ নিয়ে আশঙ্কার কিছু নেই। এ ছাড়া অর্থবছরের মোট লক্ষ্যমাত্রা ছাড়াবে না বলেও তিনি জানিয়েছেন। তবে অর্থনীতিবিদরা বিভিন্ন সময়ে সরকারের এই ঋণ নেওয়াকে আশঙ্কার কারণ বলে জানিয়েছেন। উন্নত আর্থিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ না নিয়ে রেমিট্যান্স, বৈদেশিক সাহায্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর তারা জোর দিয়ে আসছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের কর্মকর্তারা সমকালকে জানান, রাজস্ব আদায় কম থাকায় এ মুহূর্তে সরকার তার প্রয়োজনীয় ব্যয় মেটাতে বেশি বেশি টাকা ধার করছে। ব্যাংকের বাইরে অন্যান্য উৎস সঞ্চয়পত্র এবং বৈদেশিক উৎস থেকে তুলনামূলক কম ঋণ পাওয়ায় সরকার ব্যাংক ঋণের প্রতি অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। তবে সরকার একটু বেশি ঋণ নিলেও মুদ্রা সরবরাহ কিংবা অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রবৃদ্ধি যাতে মুদ্রানীতির লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে থাকে সে বিষয়ে সতর্ক রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ জন্য অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে সরকারের ঋণ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে সরকারের ব্যাংক ঋণ নিয়ে সতর্ক করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.