শিক্ষক ফরিদ হত্যা-পুলিশের নির্যাতনে খুনের দায় স্বীকার করি : কালু

রিশালে শিক্ষক ফরিদ হত্যাকাণ্ডে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেওয়া আবুল কালাম ওরফে কালু সরদার এখন দাবি করছে, তার দেওয়া জবানবন্দি ঠিক নয়। সে খুন করেনি। স্থানীয় প্রভাবশালী এক আওয়ামী লীগ নেতা সহযোগীদের নিয়ে ওই হত্যাকাণ্ড ঘটান। সে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। তাকে হুমকি দেওয়ার কারণে সে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিল। ধরা পড়ার পর প্রকৃত হত্যাকারীদের আড়াল করতে পুলিশের নির্যাতনে কালু খুনের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছিল।


এই প্রতিবেদককে সোমবার কালু বলে, 'গত ২২ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টার দিকে পিঙ্গলাকাঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশেই নিজ বাড়িতে অবস্থান করছিলাম। হঠাৎ দেখি স্কুলের পাশের রাস্তায় উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নয়ন শরীফ ও গৌরনদী কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি কাজল হাওলাদার দাঁড়িয়ে রয়েছে। তাদের সঙ্গে একই বয়সের অজ্ঞাতপরিচয় আরো তিন-চারজন যুবক ছিল। তারা রাস্তায় জটলা পাকিয়ে কী একটা করার চেষ্টা করছে। তাদের দেখে আমার মধ্যে কৌতূহল জাগে। আমি বাড়ির ছোট রাস্তা থেকে স্কুলের দিকে এগোনোর চেষ্টা করি। তখন নয়ন শরীফ আমাকে সামনে যেতে বারণ করে বলে_কালু, তুই ঘরে যা। তখন আমার মধ্যে আরো কৌতূহল জাগে। প্রথম ভেবেছিলাম, ওরা হয়তো কোনো মেয়েকে তুলে নিয়ে যাবে। তাই সেই দৃশ্য দেখার জন্য রাস্তার পাশের পানের বরজের আড়ালে গিয়ে দাঁড়াই। ওই পথ ধরেই স্কুলে আসছিলেন শিক্ষক ফরিদ। নয়ন দলবল নিয়ে ফরিদের পথরোধ করে। একপর্যায়ে তারা ফরিদকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে ধারালো অস্ত্র দিকে আঘাত করে। তখন ফরিদ চিৎকার দেন। আশপাশের কয়েকজন তাঁকে বাঁচাতে রাস্তায় এসেই নয়নকে দেখে চলে যায়। হামলাকারীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করার পর পুরো এলাকার লোকজন জড়ো হয়। তখন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে অনেকে প্রশ্ন করতে পারে_সেই ভয়ে আমি পানের বরজে আত্মগোপন করি। সেখানে ৩০-৪০ মিনিট অবস্থান করার পর বরজের অন্য প্রান্ত দিয়ে স্কুল লাগোয়া নিজের ঘরে প্রবেশ করি।'
কালু আরো বলে, 'ওই দিন দুপুরের দিকে আমি একাই ঘটনাস্থলে যাই। হত্যাকাণ্ড কারা ঘটিয়েছে তা নিয়ে স্থানীয়রা তখনো কানাঘুষা করছিল। ঘটনার পর আমি আবার বাড়ি ফিরে আসি। সন্ধ্যার পর মোটরসাইকেল নিয়ে আমার ঘরে এসে তারা ঘটনাটি চেপে যেতে ও এলাকা ছাড়ার জন্য হুমকি দেয়। আমি পরদিন ২৩ সেপ্টেম্বর চলে যাই। শ্রীমঙ্গলে আমার এক বন্ধু থাকে, তার সঙ্গে যোগাযোগ করে চাকরির জন্য ঢাকা থেকে তার কাছে চলে যাই।' কালু বলে, 'শ্রীমঙ্গলের গোদা বাজার এলাকায় বসবাসকারী আলম সরদারের ভাড়া বাসায় বন্ধুর সঙ্গে আমি ছিলাম। আমার গ্রামের বাড়ির এক প্রতিবেশীকে নিয়ে পুলিশ বুধবার সকালে আমাকে গ্রেপ্তার করে। বুধবার রাত ১০টার দিকে আমাকে গৌরনদী থানায় নিয়ে আসা হয়। কোতোয়ালি থানার ওসি তখন থেকে আমাকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটান। ওই সময় ওসির ঊর্ধ্বতন এক পুলিশ কর্মকর্তা থানায় ছিলেন। এ সময় তিনি বলেন_তুই হত্যার কথা স্বীকার করবি। না করলে নির্যাতন চলবেই। তখন ভয়ে পুলিশের শেখানো কথা পুলিশ সুপার এবং আদালতের কাছে বলি।'
প্রথমে পরকীয়া প্রেম এবং পরে শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির সদস্যের পরিকল্পনার কথা বলার কারণ জানতে চাইলে কালু বলে, 'পুলিশ যা শিখিয়ে দিয়েছিল তা দুপুরের দিকে আদালতে বলেছি। সে কথায় আদালত সন্তুষ্ট হননি। পরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নিয়ে আমাকে আবারও খুনের কথা শেখানো হয়। সাংবাদিকদের সামনে সে কথা আমি হুবহু বলে ফেলি। বিকেলের দিকে আবার আদালতে গিয়ে জবানবন্দি দিই। তখন পরকীয়া প্রেমের বিষয়টি ভুলে বাদ পড়ে।'

No comments

Powered by Blogger.