কলমানি রেট ২২ শতাংশ ছাড়াল by আহসান হাবীব রাসেল

প্রতিদিনই বাড়ছে কলমানি রেট। কলমানি মার্কেটে সুদের হার ২২ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে গতকাল। সুদের হার ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার পেছনে আসন্ন ঈদুল আজহায় গ্রাহকদের অতিরিক্ত চাহিদাকে দায়ী করা হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী বছরজুড়েই এ হার বেশ চড়া। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন তীব্র তারল্য সঙ্কটের কারণে চলতি বছরের বিভিন্ন সময় কলমানি রেট ১১ শতাংশের উপরে ছিল। যেখানে এ হার ৫ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে থাকা উচিত বলেও তারা মনে করেন।


তাত্ক্ষণিক চাহিদা মেটাতে এক ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে স্বল্প সময়ের জন্য যে ঋণ নেয় সে ঋণের সুদ হার হলো কলমানি রেট। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ঈদের সময় গ্রাহকদের নগদ টাকার চাহিদা বেড়ে যায়। তাই রেট এখন বেড়েছে। চাহিদার ওপর ভিত্তি করে এ হার নির্ধারিত হয়। সুতারাং নগদ টাকার চাহিদা কমে গেলে এই হার কমে যাবে।
কলমানি রেট বাড়ার কারণ হিসেবে আসন্ন ঈদে গ্রাহকদের অতিরিক্ত চাহিদাকে দায়ী করা হলেও ঈদের প্রায় এক মাস আগেও এ হার ছিল ১৫ শতাংশের উপরে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ ব্যবস্থাপনা বিভাগের গত ১৯ অক্টোবরের তথ্য অনুযায়ী রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো কলমানি মার্কেট থেকে গড়ে ১৫ দশমিক ২৫ শতাংশ সুদে নিয়েছে। এছাড়া অনেক বেসরকারি ব্যাংকও ওইদিন কলমানি মার্কেট থেকে ১৫ শতাংশের বেশি সুদে ঋণ নিয়েছে বলে তথ্যে দেখা যায়। এদিকে গতকাল কলমানি মার্কেটে সুদের সর্বোচ্চ হার দাঁড়িয়েছে ২২ শতাংশে। একটি বেসরকারি ব্যাংক ও বিদেশি ব্যাংকের মধ্যে এ হারে লেনদেন হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, তারল্য সঙ্কটে কলমানি রেটের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা থামাতে এ হার ১৭ শতাংশের উপরে যেন না যায়, সে ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিচ্ছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেয়া নতুন এ সুদ হারও মেনে চলতে পারছে না। নগদ টাকার চাহিদা বেশি থাকায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী কলমানি রেট নিয়ন্ত্রণ রাখা যাচ্ছে না বলে জানালেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তারল্য সঙ্কটের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছু কিছু ব্যাংক তাদের ফান্ড ম্যানেজমেন্ট ঠিকমত করতে না পারায় এখন তারা তারল্য সঙ্কটে ভুগছে। বছরখানেক আগে ব্যাংকগুলো অতিরিক্ত পরিমাণে ঋণ দিয়ে দেয়। তারপরও সাম্প্রতিক সময়ে সরকারকে অতিরিক্ত পরিমাণে ঋণ দিতে গিয়ে ব্যাংকিং সেক্টরে তারল্য সঙ্কট তীব্র হয়ে উঠেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বললে তিনি বলেন, বর্তমানে কলমানি রেট বেড়ে যাওয়ার পেছনে মূল কারণ হলো আসন্ন ঈদুল আজহায় গ্রাহকদের অতিরিক্ত চাহিদা। তবে দীর্ঘ সময় তারল্য সঙ্কটের কারণ হিসেবে ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতা ও ব্যাংক থেকে সরকারের অতিরিক্ত ঋণ নেয়াকে দায়ী করে ওই কর্মকর্তা বলেন, সরকার ব্যাংক থেকে এত বেশি পরিমাণে ঋণ করলে ব্যাংকের হাতে টাকা থাকবে কী করে? তিনি বলেন, সরকারের ঋণ নেয়ার এ ধরনের প্রবণতা আমাদের দেশে আর কখনও দেখা যায়নি।
ব্যাংকে তারল্য সঙ্কট থাকায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো কয়েক মাস ধরেই ঋণ দিতে পারছে না। তাছাড়া কিছু কিছু বেসরকারি ব্যাংকও খুব একটা ঋণ দিতে পারছে না বলে জানা গেছে। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, তারল্য সঙ্কটের কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো আগামী জানুয়ারির আগ পর্যন্ত কোনো ঋণ দিতে পারবে না। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকে কেউ ঋণ নিতে চাইলে তা অনুমোদন দেয়া হবে, তবে টাকা দেয়া হবে ডিসেম্বরের পর।
ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকগুলোতে তারল্য সঙ্কট শিল্পখাতে ঋণ দেয়ায় প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অতিরিক্ত তারল্য সঙ্কট থাকায় অনেক ব্যাংক কলমানি মার্কেট থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে তাদের দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে বাধ্য হচ্ছে। তাই শিল্প মালিকরা তাদের প্রয়োজনে আবেদন করেও ঋণ পাচ্ছেন না। বেসরকারি খাতের কার্যক্রম ও চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। শিল্প মালিকরা জানান, ঋণ না পাওয়ায় কাজ ভালোভাবে চালানো যাচ্ছে না। ফলে শিল্প কার্যক্রম সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। এতে করে কর্মসংস্থান সুযোগ ও উত্পাদনও কমে আসছে।

No comments

Powered by Blogger.